কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- এক
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- দুই
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম-পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব ছয়
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব সাত
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব দশ
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব এগারো
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব বারো
৮.
অপু, খোকা আর পল্টু আমাদের বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকছিল। আমি সকালের নাস্তা খাচ্ছিলাম। খাওয়া রেখেই চলে এসেছি।
কিরে ডাকছিস কেন? গেট খুলে বেরিয়ে বললাম অপুকে।
জানিস আগামী সপ্তাহে আমাদের রেজাল্ট দেবে, অপু বলল।
কে বলল রে?
তালুকদার স্যার বলেছে খোকাকে। অপু বলল।
তাই নাকিরে খোকা? বললাম।
খোকা হ্যাঁ সূচক মাথা ঝোলায়।
চল আমরা স্যারের বাসায় যাই, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে কত পেয়েছি যদি জানা যায়। অপু বলল। দাঁড়া আসছি─বলে আমি বাসার ভেতরে এসে দু’গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে আবার ওদের কাছে চলে আসি। ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রে বরাবরই আমি খারাপ করি। খারাপেরও বোধহয় একটা কোয়ালিটি আছে─কিন্তু আমার খারাপটা একেবারে যাচ্ছেতাই গোছের। কোনোমতে পঁয়ত্রিশ কিংবা আটত্রিশ। ট্রান্সলেশন করতে পারি না। ইজ, এম আর উইল, উড, শ্যাল, শুড, এগুলোর যথার্থ ব্যবহার করতে পারিনা বলে ক্লাসে তালুকদার স্যারের বেত আমার পিঠে কতবার যে পড়েছে তার হিসেব নেই। ঘরে বাবার হাতে চড় থাপ্পর আর কানমলা আমার জন্য একদম স্থায়ী হয়ে গেছে এই ট্রান্সলেশনের জন্য। এবারের পরীক্ষাও ভালো হয়নি। আল্লাহই জানে কি করেছি। বুকের ভেতরটা ঢিব ঢিব করছে।
আমরা চারজন তালুকদার স্যারের বাসার উদ্দেশে হাঁটছি।
অপু বলল, জানিস কাল সারারাত পল্টু নাকি ঘুমাতে পারেনি ভয়ে।
আমি ঢোক গিলে বললাম তাই নাকি? নিজের কথা কি বলব? ভাবতে থাকি। বললে যদি ওরা আমাকে ভিতু ভাবে। তাই চেপে গেলাম।
পল্টু কাল স্বপ্নে ওই পাগলটাকে দেখেছে। অপু বলল।
পাগলটা ওকে কিছু বলেছে? বললাম।
হ্যাঁ, পাগলটা ওকে বলেছে আবার যদি তাকে ফলো করা হয় তা হলে খুন করে ফেলবে। অপুর কথা শুনে আমার একটু ভয় ভয় ঠেকে, বলে কি! স্বপ্নের কথা যদি সত্যি হয়। ভাবতে ভাবতে হাঁটতে থাকি। তালুকদার স্যারের বাসার সামনে আসার পর চারজন একসঙ্গে জড়ো হয়ে ডিসিশন নেই কে স্যারের বাসায় আগে ঢুকবে। স্যারকে আমরা সবাই ভয় পাই, যদি আমাদের দেখে স্যার রেগে যান!
খোকা বলল, আয় টস করি কে যাবে প্রথমে।
কিভাবে? অপু বলল।
পকেটে এক টাকার কয়েন আছে?
পল্টু বলল, আছে আমার কাছে।
পল্টু কয়েনটা বের করে খোকাকে বলল, তুই কোন পিঠটা চাস?
আমি দেখলাম এ নিয়ে অনেকটা সময় লেগে যাবে─ তাই বললাম টসফস প্রয়োজন নেই। আমি প্রথমে যাব। ওরা তিনজন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। কারণ যে আমি তালুকদার স্যারকে সবচে বেশি ভয় পাই─ সেই আমি কি না বলছি প্রথমে যাবার কথা।
পল্টু বলল, দোস্ত বিষয়টা কি? এত সাহস তোর?
চলতো, বলেই কোনো দিকে না তাকিয়ে আমি তালুকদার স্যারের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই। আমার পেছনে পেছনে ওরা ঢোকে। স্যার বারান্দায় মাদুরে বসে চাদর গায়ে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। আমাদের দেখে অবাক হয়ে বললেন, কিরে তোরা?
স্যার আপনাকে দেখতে এলাম─অপু বলল।
কেন আমার কি হয়েছে? স্যার আস্তে করে বললেন।
না স্যার কিছু হয়নি-এমনি এলাম আপনি কেমন আছেন তা জানতে। বললাম।
আয় আয় বলে স্যার আমাদের তার কাছে ডাকলেন।
আমরা স্যারের কাছে গিয়ে বসার পরই স্যার বললেন, হ্যারে কোনো খবর পাওয়া গেল ছেলে দুটার?
না স্যার, খোকা বলল।
চিন্তার বিষয়, স্যার আস্তে করে বললেন।
স্যার আপনার কি মনে হয়। ব্যাপারটা আসলে কি হতে পারে। খোকা বলল। বুঝতে পারছি না। ভেবেছিলাম কেউ শত্রুতা করে মেরে ফেলেছে। কিন্তু চিঠি চালাচালির পর ব্যাপারটা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে গেল। আমার জীবনে বহু ঘটনা দেখেছি, বুঝলি এরকম উধাও হয়ে যাওয়া দেখলাম এই প্রথম।
পল্টু বলে উঠল হঠাৎ, স্যার আপনি ভূত বিশ্বাস করেন?
স্যার প্রথমে কোনো কিছু বললেন না, চাদরের এক পাশটা কাঁধ থেকে সরে যাওয়ায় সেটাকে হাত দিয়ে তুলে খানিকক্ষণ পর বললেন, এই পৃথিবীতে কিছু অদৃশ্য শক্তি আছে যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। ভূত বিশ্বাস করি না, তবে কখনো কখনো মনে হয় অমাবশ্যার রাতে শশ্মান ঘাট কিংবা করবস্থানে কেউ একা যেতে চায় না। কেন? আবার ঠিক দুপুরে, ভরসন্ধ্যায় মুরুব্বিরা কেন আমাদের ছেলেবেলায় বাইরে বের হতে নিষেধ করতেন─ এরকম কিছু ঘটনা ঘটেছে বলেই তো নিষেধাজ্ঞা বা ভয়টা বুকে লুকিয়ে থাকে।
স্যারের কথা শুনে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। লোমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। স্যারের কথায় বোঝা গেল ভূতকে তিনি বিশ্বাস না করলেও অদৃশ্য কিছু একটার অস্তিত্বকে স্বীকার করেন।
খোকা প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল, স্যার আমরা কি পাশ করেছি সবাই?
স্যার আমাদের সবার দিকে একবার চোখ বুলালেন। তাঁর চোখের ভাষাটা এরকম─ তোরা আসলে এটাই জানার জন্য আমার কাছে এসেছিস আর মিথ্যে বলেছিস আমাকে দেখতে এসেছিস। আমাদের আপাতত এটাই মনে হচ্ছে, কে জানে স্যার কি ভাবছেন। চোরের মন পুলিশ পুলিশ ব্যাপারটাই কাজ করছে আমাদের হয়তো।
স্যার বললেন, তোরা কি খুব টেনশনে আছিস রেজাল্ট নিয়ে?
সবাই চুপচাপ। আমি আনমনে আঙুল ফোটাতে থাকি। খোকা নাকের ডগা হাতিয়ে কান চুলকাতে থাকে।
আচ্ছা তোদের ভেতর আমার সাবজেক্টে সবচে কাঁচা কে? স্যার বললেন।
পল্টু, খোকা, অপু চুপচাপ। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে সাহস করে বলেই ফেললাম, স্যার আমি।
পরীক্ষাতে কত উত্তর দিয়েছিস।
বেশি না স্যার, বললাম।
বেশি না-টা কতো শুনি?
মাত্র পঞ্চান্ন।
পঞ্চান্ন কি সঠিক ছিল?
আমার এই শীতের সকালেও রীতিমতো ঘাম বের হবার যোগাড়। কে জানে সঠিক ছিল কি না। শোন যদি সঠিক দিয়ে থাকিস তবে জেনে রাখ পাশ করেছিস─কোনো টেনশন করার কারণ নেই। পল্টুর কেমন হয়েছিল রে…
স্যার ভালোই─পল্টুর ছোট জবাব।
ভালোটা কেমন? সিক্সটি পারসেন্ট নম্বর পাবি?
জানি না স্যার।
আরে পরীক্ষা দিয়েছিস তুই, জানবিনা কেন? কত উত্তর দিয়েছিস?
পঁচাশির মতো। পল্টুর ছোট জবাব।
তা হলে তো ভালোই নম্বর পাবার কথা।
স্যারকে কি বলব আমি কত পেয়েছি? ভাবতে থাকি। স্যারই তো নম্বর দিয়েছেন─ইশ্ স্যার যদি এখন বলে দিতেন পাশ করেছি কি না─অপু বলল, স্যার আপনার সাবজেক্টে কেউ ফেল করেছে?
আমার প্রশ্নটা অপু করাতে কিছুটা ভাল লাগছে।
স্যার অনেকক্ষণ কথা বললেন না, শেষে বললেন আচ্ছা তোদের ভেতর কেউ কি ফেল করতে পারিস এমন আশঙ্কায় ভুগছিস?
কেউ কথা বলছে না। আমি সাহস করে বলেই ফেললাম, স্যার আমার একটু সন্দেহ আছে, আমি ফেল করতে পারি।
তাই নাকি? তুইতো ক্লাসেও প্রায়ই বেঞ্চির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতি ট্রান্সলেশন না পারার কারণে। আচ্ছা তোর কি ইংরেজি ভয়টা ভ‚তের মতোই?
না স্যার, আমি ভ‚তের ভয় করি না─বললাম।
যারা ভূতের ভয় করে না তাদের তো ইংরেজিকে ভয় করা সাজেনা। স্যার বললেন।
স্যারের কথার আগামাথা বুঝলাম না─কই ভূত কই ইংরেজি। ইংরেজি শুনলেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় আর ভূত… আর ভাবতে পারি না। গতরাতের ভয়টা কোত্থেকে এসে যায়।
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোদের ভেতর কেউ ফেল করিস নি, যা এবার হলো তো…
আমরা সবাই দাঁড়িয়ে যাই আগাম সুসংবাদ শুনে। যাক বাবা যেটাতে আমার ফেল মারার সম্ভাবনা ছিল সেটাতে যেহেতু পাশ করেছি তা হলে আর চিন্তা নেই। সব বিষয়ে পাশ করেই নাইনে উঠব, শুধু এখন অপেক্ষার পালা। রেজাল্ট দেবার দিনটা কবে যে আসবে!