রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব আট
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব সাত
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব তিন
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দুই
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব নয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দশ
ছয়
ঝন্টুর বাবা সরকারি চাকরি করে। বসবাস করে ঢাকা সরকারি কোয়াটারে। অবসর জীবন গ্রামে কাটাবে এই আশা তার। ঝন্টু বেকার চাকরির জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে। এখনো চাকরি নামের সোনার হরিণ জোটেনি তার কপালে। ছাত্র হিসেবে বেশ ভালোই ছিল ঝন্টু। গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করলেও, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছে শহরে। সেই কিশোর জীবনের কথা ভুলতে পারেনি ঝন্টু।
কীকরে ভুলবে? কিশোর জীবনের দূরান্তপনা আজও দোলা দেয় ঝন্টুর মনে।
ভাবনার জগতে ডুবে যায়। চোখের পাতায় ফুটে ওঠে গ্রামের ছবি।
গ্রাম যেনো চড়ুইভাতির জন্য মজার আয়োজন। তাই শহরের চেয়ে গ্রামই ঝন্টুর কাছে প্রিয়। ভালো লাগার কিশোর ভুবন।
কিন্তু ভালো লাগেলে কি হবে, বাবা অবসরে গেলে তাকেই ধরতে হবে সংসারের হাল। ঝন্টুর বাবা জামাল সাহেব। তিনি ভীষণ সৎ মানুষ। শহর কি গ্রাম।
প্রতিবেশি কি পরিবারের লোক। কি অফিসের সহকারি সবাই সৎ মানুষ হিসেবে জানে। এই যুগে এমন সৎ মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। কর্মজীবনে অফিস আর বাসা। বাসা আর অফিস। সরল মনের মানুষ তিনি। ঝন্টুর মা তাকে জামালের বাপ বলে ডাকে। কখনো, লাইলির বাপ বলে না।
এই নিয়ে লাইলির মনে চাপা কষ্ট। মনের কষ্ট মনের ভেতর আছে। সে কথা কেউ জানেও না।
বুঝেও না।
কীকরে বুঝবে!
লাইলিতো কাউকে কিছু বলে না। চাপা সভাবের মেয়ে লাইলি।
ছেলেদের চেয়ে নাকি মেয়েদের অধিকার কম।
মায়ের কাছে বারবার এ কথা শুনে কান ঝালাপালা হয়েছে লাইলির। এই কথার সঙ্গে লাইলি তার জীবনটাকে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।
জন্মের পর থেকেই লাইলি দেখেছে মা বাবার কাছে ঝন্টুর অধিকার একটু বেশি। কথায় কথায় ঝন্টুর বকুনিতো আছেই। ভাই আর বোন, ঝগড়া আর মারামারি করে বেড়ে ওঠেছে। লাইলির কপালে ভাইয়ের মাইর জুটেছে। গুনগুনকরে কান্না করে। তবুও লাইলি ভাইকে ভীষণ ভালোবাসে।
মায়ের কাজের সহযোগী লাইলি।
বাবা বাসায় এলে তার খোঁজ খবর রাখে লাইলি। বাবা বেশ আদর করে লাইলিকে বলে, আমার লক্ষি মেয়ে। তাই বাবা বাসায় এলে লাইলির বেশ ভালোই লাগে। জামাল সাহেব অফিস থেকে বাসায় এসেই ডাক দিবে,
লাইলি।
লাইলি।
এ যেনো তার কাছে নিত্যদিনের রুটিং। আজও বাসায় এসে লাইলি বলে ডাক দিতে ভুল করেনি। তাই জামাল সাহেবের কাছেই লাইলি প্রিয়। হাতমুখ ধুয়ে সোফায় বসেন জামাল সাহেব। লাইলিও পাশে বসে। টি ভি অন করে দেয় লাইলি।
ওদিকে লাইলি, লাইলি,
জি মা।
এদিকে আয়।
জি আসছি, বলেই মায়ের কাছে ছুটে লাইলি। গিয়ে পাশে দাঁড়ায়। মায়ের চোখের দিকে তাকাতেই। মা বলে, এই নে চা, ঝন্টু বাবাকে দিয়ে আয়।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মায়ের দিকে মন ভার করে চায়। ফিরে যায় বাবার দিকে, আর মনে মনে ভাবে।
মা বলতে পারতো তোর বাবাকে চা দিয়ে আয়। কিন্তু তা বলেনি! তা না বলে, বললেন ঝন্টুর বাপ কে চা দিয়ে আয়। মনের ভেতর কেমন যেনো করতে লাগলো।
মনের দুঃখ মনেই পুষেরাখে লাইলি। বাহিরে প্রকাশ পায় না। এই সমাজে ছেলে ও মেয়ের অধিকার এত ব্যাবধান! খোদ মায়ের কাছেই এর প্রমান মিলছে।
লাইলি ভাবে আমি বাবার ছেলে হতে চাই।
আমি বাবার মেয়ে হয়ে থাকতে চাই না।
ছেলে হতে চাইলেই কী ছেলে হওয়া যায়?
না, যায় না।
এদিকে জামাল সাহেব বলছে, কীরে মা কি ভাবছিস?
না, কিছু না।
মন ভার করে আছিস যে।
আমি তোমার মা?
হ্যা, তুই আমার মা। তুই যদি আমার মা না হবি তা হলে আমার এত খেয়াল রখিস ক্যান?
বাবার কথা শুনে মন ভরে গেল। মনের খুশিতে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে হাসি দিল লাইলি। ভুলে গেল লাইলি, মেয়ে নাকি ছেলে। অধিকার কি জিনিস তাও ভুলে গেল!
এভাবেই মেয়েরা ভুলে থাকে মনের ভেতর জমে থাকা হাজারো কষ্ট। লাইলি লেখাপড়ায় বেশ ভালো। মায়ের কাজের সহযোগী হয়েও লেখাপড়া করে যায়। মনের ভেতর উঁকিঝুকি দেয় গ্রামের শৈশব। পুতুল খেলার শৈশব। তখন লাইলি গ্রামে।
মাটি দিয়ে ঘর বানিয়েছে। পুতুল সাজিয়ে রেখেছে। পুতুল পুতুল খেলা বেশ ভালোই লাগে। ঝন্টু ঘটিয়ে দিতো যতো বিপত্তিকর ঘটনা। কোথা থেকে হুট করে এসে, সব মাটির ঘর ভেঙে দিতো। ভঙ্গ হয়ে যেতো, মজার যতো খেলা। লাইলি দৌড়ে যেতো মায়ের কাছে। নালিস দিত। সব কথা খুলে বলতেই। মা ঝন্টুর পক্ষ নিতো। এ আর নতুন কী! উলটো বলে দিতো, সারা দিন খেলা আর খেলা।
ঝন্টু হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়। লাইলি থালা-বাসুনগুলো ঘরে নে।
মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে, লাইলি চুপ।
লাইলি কিছুই বলতে পারতো না। মা যা বলছে লক্ষি মেয়ের মতো তাই করছে।
মাকে জমের মতো ভয় পায় লাইলি। ভয় না পেয়ে, উপায় নেই।
সেদিন লাইলি রাগ করেছিল। একটি তুচ্ছু ঘটনা নিয়ে। মন ভার করে বসে ছিল।
ঝন্টু বলেছিল লাইলি আমার জুতা কইরে?
তোমার জুতা কই, তা আমি কি জানি?
তুই জানবে নাতো কে জানবে?
কেনো আমি জানবো? তোমার জিনিস তুমি গুছিয়ে রাখতে পারো না।
একথা বলতেই ঝন্টু লাইলেকে মাইর দিল। তারপর বাইরে চলে গেল। মা কিছুই বলল না। কিছু সময় পরে মা ডাক দিল লাইলি। লাইলি। লাইলি বলে। লাইলির কোনো সাড়াশব্দ নাই। মন ভার করে বসে আছে। মা বলতে লাগলো কইরে লাইলি এই দিকে আয়।
না, এবার লাইলির কোনো সাড়শব্দ নাই। মুখ ভার করে বসে আছে তো আছেই। অনেক পরে মা কাছে আসে। দেখে লাইলি মুখ ভার করে বসে আছে।
কীরে রাগ করে বসে থাকলে চলবে? মেয়েদের রাগ করতে নেই। রাগ করবে ছেলেরা। মেয়েরা হবে মাটির মতো। মাটির দিকে চেয়ে সব রাগ হজম করতে হয়, জানিস। ভাই একটু ধমক দিছে তাই উনি মুখ বেজার করে বসে আছে!
আসেন। তাড়াতাড়ি আসেন। মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে ভাব থাকতে নেই।
মেয়েরা হলো বান্দিরজাত। বান্দির মতো কাজ করতে হয়। মুখ সেলাই করে রাখতে হয়। তা না হলে সংসারের সব সুখ হারিয়ে যায়। এই কথাগুলো বলতে বলতে হাঁটেতে লাগলো লাইলি মা।
লাইলি শুনতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো।
মায়ের এই সম্মান সুচক আহবানে তাচ্ছিল ভাব ফুটে ওঠে। মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছি সব আমারে সইতে হবে।
না, তা হতে পারে না। আমি লেখাপড়া করছি। আমি বুঝতে পারি, আমিও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবো। চাকরি করবো।
অর্থ উপার্জন করবো। মেয়ে মানেই অবহেলা এ কথা ভুলিয়ে দিতে চাই সমাজকে। এই সমাজে আমিও হবো, কর্ম করে অর্থ উপার্জনকারী নারী।