রহস্য উপন্যাস

রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ

সকালের সূর্যরেখা পুব আকাশে। লাল লালিমা ভেদ করে রোদের হাসি ছড়িয়ে পড়েছে চারদিক।
মিষ্টি আলোয় ঝিলমিল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির। হাশেম বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুনছে পাখির কিচিরিমিচির। মিষ্টি ভোরের পরিবেশ বেশ ভালোই লাগছে হাশেমের কাছে। রাতের নির্জনতা তাড়িয়ে সবুজ রঙের হাতছানি। বনফুল তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে। পাখিগুলো উড়ে যাচ্ছে। দূরে যাচ্ছে। ডালিম গাছের ডালে বসে আছে একটি পাখি। নাকি দুইটি পাখি। ওরা খাবারের খোঁজে যায়নি।
ওরা বনের পাখি। ওরা কথা বলে ওদের ভাষায়- কিচিরমিচির। কিচিরমিচির।
সকাল ও সন্ধ্যায় পাখির কিচিরমিচির মনমুগ্ধকর। বারান্দাতো নয় পাখিদের অভয়অরন্য।
পাখিদের ভাষা বুঝতে পারে না হাশেম। মধুর আওয়াজ তন্ময় হয়ে শুনছে।
গোলাম আলী বাড়ি নেই।
কই গেছে গোলম আলী?
এদিক ওদিক ঊকিঝুকি দেয় হাশেম।
না, কাউকে দেখছে না।
এত সকালে বাড়ি থেকে সবাই কই গেছে?
কিছু সময় তাকিয়ে থাকে পাখির দিকে। এত সময় একা বসে আছে, কী
ভাবছে হাশেম?
পাখি নাকি বিড়াল রহস্য?
বর্তমান নাকি অতীত দিয়ে ভাবছে?

অতীত নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করে হাশেম। বর্তমানকে ভুলে অতীত নিয়ে পড়ে থাকে। যখন গল্প বলে ঠিক তখন চলে আসে অতীতদিনের কথা। সে তো গতরাতের ঘটনা। গতরাতের ঘটনার ভেতরে লুকিয়ে আছে রহস্য।

কী সেই রহস্য?
ব্রিটিশ তাড়ানোর রহস্য?
নাকি পাকিস্তান তাড়ানো রহস্য?
কী ভাবছে হাশেম?

আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি পাকিস্তান নামক একটি দেশ ছিল ১৯৭১ সালের পূর্বে। মনের ভেতর একটি সহজ প্রশ্ন উঁকি দিবে তখনকার একটি ঘটনা ভাবছে হাশেম। যদি ভাবেই তবে, পুর্ব পাকিস্তান নাকি পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে ভাবছে?
আমরা পুবর্ পাকিস্তানের বাঙালি। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। এই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার,শফিউল আরও অনেকেরই রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি এই মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষা।

পাখি কী ভাষায় কথা বলে?
ওদের ভাষার নাম কী?
জানে না হাশেম।
আমরা কী জানি?
না, আমরাও জানি না।

আমি বলি কি পাখিদের ভাষার নাম, কিচিরমিচির ভাষা। ভাষাহীন হয়ে ভাবনায় ডুবে থাকে কিছু সময়। পাখির ভাষা শ্রবণ করে হাশেম। দাঁড়ানো হাশেম বাঁশ ও বেতের তৈয়ারি মোড়ায় বসে পড়ে। মন চলে যায় ঐ বাড়ির বারান্দায়।

কোন বারান্দায়?
পাশের বাড়ির বারান্দায়। গতকালের ঘটনা মনের ভেতর মোড়ামুড়ি করছে।

হাশেম তার দাদার কাছে শুনেছে। এই বাড়ির মূল মালিক কীভাবে চলে গেছে এই দেশ ছেড়ে। দাদা এই দুনিয়ায় নেই। চলে গেছেন নাফেরার দেশে। তবে সেই বাড়িওলা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা জানি না।
মনে আছে দাদার কথাগুলো। দাদা ছিলেন সত্য সন্ধ্যানি মানুষ। ঐ বাড়িতে যারা বাস করতেন তারা ছিল বিহারি। নাম ছিল কাশেম। ভাষা ছিল উর্দু।
এখন এই বাড়িতে কেউ নেই। রাতে, বিড়াল ডাকে মিউ মিউ মাও মাও। সেই রাতের বিড়ালের ডাক কানের কাছে বাজছে। এখন দিনের বেলা।
হঠাৎ ঝন্টুর বোন লাইলি, কী হাশেম ভাই কেমন আছেন?

ভালো।
তুমি।
হ্যা, আমি।
আমি কি চোখে ঠিক দেখছি!
কেনো?

আমার মনে হয় তুমি নয়। তুমিতো ঢাকা থাকো। এখানে কীকরে এলে?
আমি ঢাকা থাকি তোমাকে কে বলেছে?
কেনো? তুমি ঢাকা থাকো না?
না, থাকি না।
আমি তো ঐ বাড়িতে থাকি।
কী বলো?
হ্যা, আমি ঠিকই বলেছি।
আমাকে বসতে বলবেন না।
বলবতো, কিন্তু বাড়িতে কেউ নেই।
তাতে কী হয়েছে, বারান্দায় বসি।
বসো।

লাইলি বারান্দায় বসে পড়ে। বসে আছে, হাশেম। নিরব সময় চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ, হাশেম এর মনে ভয় নামক ভাবনা খেলা শুরু হয়ে গেলো।
দিনের বেলায় হাশেম ঘামছে। পাখির কিচিরমিচির এখন আর শুনছে না হাশেম। দেখছে লাইলি বসে আছে। কিছু বলছে না। এমন সময় গোলাম আলী চলে এলো।

কই গেছিলি গোলাম আলী?
ঝিলপাড়ে।
এত সকালে?
বক ধরতে গিয়েছিলাম।
ধরতে পেরেছিস?
না।
বসো।
ঠিক আছে।

লাইলি যেখানে বসেছিল ঠিক সেইখানে বসে গেলো গোলাম আলী।
ওখানে বসিস কেনো?
কেনো, কী হয়েছে?
না, কিছু না বলে থেমে গেল হাশেম। অদ্ভুত বেপার, কই গেল লাইলি?
এখানেই তো ছিল লাইলি। বোকা হয়ে গেল হাশেম। কী ঘটে গেল এই সকালে!
না, এখানে যে লাইলি এসেছিল সে কথা বলা ঠিক হবে না।
বিড়বিড় করে কী বলেন হাশেম ভাই?
না, কিছু না।
কিছু একটা তো আছেই।
প্রসঙ্গ পাল্টে। পাখির কিচিরিমিচির খুব ভালো লাগছে তাই, পাখির কী ভাষায় কথা বলে তা জানার চেষ্টা করছি।
তাই?
আমার মনে হয় কী অন্য কিছু!
না রে গোলাম আলী অন্য কিছু না।
না, হলেই ভালো।
ঐ বাড়িটি এখন ঝন্টুদের। ওরা ঢাকা থাকে। বছরে দুইবার আসে।

Series Navigation<< রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *