রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব তিন
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব আট
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব সাত
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব তিন
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দুই
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব নয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দশ
তিন
কাশেমকে নিয়ে ভাবনায় রত হাশেম। কাশেম ও কাবলিওলার চেহারা কখনো দেখেনি। কীকরে দেখবে? তখনতো হাশেমের জন্মই হয়নি। খুনের আড়ালে চলে পালাবদলের খেলা তা কি করে জানবে? বাবুমিয়ার বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে। খুনের আড়ালে বদলেছে বাড়ির মালিকানা।
কাশেম কেউ দেখেনি তবুও কাশেমের কথা ভাবছে হাশেম। হাশেমের ভাবনায় ভাগ বসিয়েছে গোলাম আলী।
কেনো ভাবছে?
একজনের ভাবনা আর একজনে কীকরে ভাগ বসালো! হাশেমকে বড্ড ভালোবাসে গোলাম আলী। হাশেম তার বাবার কাছে শুনেছে এই বাড়িটি ছিল কাশেমের। কাশেম ছিল বাবার প্রতিবেশি। সে ননবেঙ্গলি হলেও লোক হিসেবে ভালোই ছিল। বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে সে কথা কাউকে বলেনি। হঠাৎ করে কেনো বাড়ি ছেড়ে চলে গেল! কোথায় গেছে তাও কেউ বলতে পারেনি হাশেমের বাবা। এই পরিত্যক্ত বাবুমিয়ারবাড়িটি দীর্ঘদিন
পরিত্যক্তছিল। জমিদারি প্রথা তখনো বিলুপ্ত হয়নি। যখন ব্রিটিশ বিদায় হলো। বাতিল হলো জমিদারি প্রথা। যখন দেশ স্বাধীন হলো তার অনেক পরে এই বাড়িটি এখন ঝন্টুদের। কীকরে ঝন্টুদের হলো তাও জানে না হাশেম। ঝন্টুর বাবা জামান সাহেব এই ফুলপুর গ্রামেই বড় হয়েছে। গ্রামের প্রতি তার মায়াও বেশ। তাই গ্রামের এই বাড়িটি সে কিনেছে। ওরা ঢাকায় থাকে। ঝন্টুর বাবা সরকারি চাকুরে।
সময়ের সঙ্গে সব কিছু পাল্টে যায়। তবুও রয়ে যায় সময়ের পদচিহ্ন। বারান্দায় বসে ভাবে হাশেম। এদিকে বিড়ালে মাও মাও করে যাচ্ছে। এই বিড়ালই হাশেমের মনকে উল্টেপাল্টে দিয়েছে। বিড়ালের চোখে মুখে প্রতিহিংসার আগুন। এই অসময়, গোলাম আলী কোথায় যেনো গেছে! মাঝে মাঝেই গোলাম আলী এদিক ওদিক যায়। আজও তার ব্যতিকক্রম ঘটেনি। কোথায় গেছে গোলাম আলী, হাশেম তা বলতে পারে না।
হাশেমের আজ মন ভালো নেই। কারও সঙ্গে কথা বলে, মন ভালো করবে। তাও কেউ পাশে নেই! মন ভালো না থাকলে হাশেম পানি গিলে। ডগডগ করে গিলে! কিছু সময় আগে এক গ্যাস পানি পান করেছে। ডগডগ করে পান করেছে। না, তাতে তার মন ভালো হলো না। এরপর আরও এক গ্লাস পানি পান করলো সময় নিয়ে। এবার চুপচাপ বসে পড়ে। বসে আছে তো আছেই। হঠাৎ ডালিম গাছের ডালটি নড়াচড়া দিল।
একটি ডাল শুধু নড়াচড়া দিচ্ছে। নড়াচড়া দিচ্ছে। নড়াচড়া দিতেই থাকে ডালগুলো। নড়াচড়া দিচ্ছে।
বাতাস নেই।
বৃষ্টি নেই।
ঝড় নেই।
ডালটি নড়ছে কেনো?
হাশেমের চোখ দুটো ডালিম গাছের ডালটির দিকে চলে গেল। ডালটি নড়ছে তো নড়ছেই। অদ্ভুত বেপার কি করে ডালটি নড়ছে! হাশেম ঘরে চলে গেল, আরও এক গ্লাস পানি পান করে চলে এলো। এবার পানি
পান করেছে আয়েশি ভঙ্গিতে। তারপর বারান্দায় চলে এলো। না, এবার ডালটি নড়ছে না। হাশেম আরাম করে বসে আছে। কিছুসময় নীরব থাকে সে। নীরবতার ভেতরে লুকিয়ে থাকে চিন্তা। ভাবনার নতুন ফসল।
হঠাৎ একটি পাখি এসে বসে ডালিম গাছে ডালে। পাখিটি কথা বলতে পারে। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে পাখি। হাশেমের মনকে আরও চিন্তাযুক্ত করতে বলছে, হাশেম হাশেম।
পাখির দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো হাশেম। পাখি দেখে আবার ঘুরলো।
ভাবলো, কে বলছে কথা? ডাক দিল হাশেম বলে! কাউকে দেখতে পেল না। এই পাশের চেয়ারেই একদিন লাইলি বসেছিল। কথাও হয়েছিল। কার উপস্থি টের পেয়ে সেই চলে গেল। এ কথা ভাবতেই আবার পাখি ডাকে, হাশেম হাশেম।
হাশেম এবারও এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। চোখেমুখে চিন্তারভাঁজ। কে আমাকে ডাকছে! পাখি এবার বলছে, হাশেম তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছ না?
আমি পাখি, ময়না পাখি।
তাই বল, তুমি আমাকে ডাকছো কেনো?
তুমি কাশেমকে নিয়ে ভাবছ কেনো?
আমি কাশেমকে নিয়ে ভাবছি তা তুমি কীকরে জানলে?
বাবুমিয়ার বাড়ি নিয়ে যে ভাববে, সে ভালো মনের মানুষ। তাই ভালো মনের মানুষের কথা আমি জানবো না, তা কী হায়! হাশেম তুমি যে কাশেম কে নিয়ে ভাবো, কাশেমকে তুমি চেনো? না।
কাবলিওলাকে চেনো?
না, চিনিনা তো।
তা হলে কাশেমের বাড়ি নিয়ে ভাবছ কেনো?
কাশেমের বাড়ির সঙ্গে কাবলিওলার কি সম্পর্ক ময়না পাখি?
খুন।
খুন!!
হ্যা, খুন।
কে খুন হয়েছে?
একটি ছেলে।
কে খুন করেছে?
এটাই তো রহস্য।
কাশেম কেনো বাড়ি ছেড়ে চলে গেল তাকি তুমি জানো?
না, জানি না।
তা হলে ভাবতে থাকো কাশেমের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ কি?
আমি ভাববো কেনো, তুমি বললেই পারো!
খুন! খুন! খুন! এ কথা বলেই পাখি উড়াল দিল। পাখির দিকে তাকিয়ে রইলো হাশেম। কোনো উত্তর মিললো না। শুধু পাখির চলে যাওয়া দেখে হাশেম। মনের ভেতর কেমন যেনো উলটপালট ঝড় বয়ে যেতে লাগলো। তাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেল নদীর পাড়ে। নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল। দেখেছে নদীর ঢেউ। ঝিরিঝিরি বাতাস গায়ে এসে লাগছে। নদীর ঢেউগুলো মিলে যাচ্ছে তীরে। কাশেম তা হলে কোন তিরে ঘর বেঁধেছে। মিশে আছে এই ঢেউয়ের মতো।