রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব আট
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব সাত
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব তিন
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দুই
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব নয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দশ
রাতের আঁধারে কাশেম সপরিবারে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে পড়ে রইলো কাশেমের প্রিয় বাড়িটি। এখন কাশেম বাড়িটি পরিত্যক্ত বাবুমিয়ারবাড়ি হিসেবে বিবেচিত।
কেন কাশেম সপরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল?
শুধু বাড়ি নয়, দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
কেন গিয়েছিল?
না গিয়ে উপায় ছিল না,তাই তাদের চলে যেতে হয়েছিল।
কী সেই ঘটনা?
খুন।
একটি খুন। এই একটি খুনের ভেতরে যতো ঘটনা লুকিয়ে আছে। খুন, তাও আবার কিশোর ছেলে খুন। বয়স বারো কি তেরো হবে। এই বাড়ির ভেতরেই পাওয়া গিয়েছিল সেই ছেলেটির লাশ। পরনে লাল জামা। এই ছেলেকে দেখেছে বলে মনে হয়। কিন্তু কোথায় দেখেছে, তা ঠিক মনে করতে পারছে না। চেহারার ভেতরে মায়ামায়া লাগছে। এই মায়াবি চেহারার ছেলেকে কে খুন করেছে?
কেন খুন করছে?
কীভাবে খুন হয়েছে সেই ছেলেটি?
তাও জানে না কাশেমের পরিবার।
জানে না কিন্তু তার উঠোনেই পরে আছে একটি লাশ?
খুনের অপরাধে কাশেমের পরিবারকে তছনছ করে দেবার পায়তাড়া!
কে করেছে এই পায়তাড়া?
এত সুন্দর একটি বাড়ি এখন কাশেমের কাছে মনে হতে লাগলো ভুতুড়েবাড়ি। ভূত ভূত খেলায় মেতে আছে সারাবাড়ি। জি, যেই সূর্য ডুবে গেল। সন্ধ্যা নেমে এলো কাশেম দেখতে পেল উঠোনে একটি লাশ। এই লাশ কাশেমের মন ছানাবড়া হয়ে গেল। কাশেমের মন বলছে, লাশ তার সঙ্গে কথা বলছে, বলছে তুই খুনি। তুই খুনি। তোর খুনের দায় আমি এই বারান্দায় লাশ হয়ে এসেছি।
না, আমি খুনি নই!
তুই খুনি না তা আমিও জানি। খুন করিস নাই তাতে কী হয়েছে। তোর ওপরেই চাপানো হবে এই খুনের দায়।
তুই এই বাড়িতে থাকলে রেহায় পাবি কীকরে? আমি যে তোর উঠোন দখল করতে এসেছি। তাই একটি খুনের লাশ হয়ে এসেছি। এমন ভাবনা বিচলিত করেদিল কাশেমকে। মনের ভেতর ভীতি সঞ্চয় তৈয়ার হয়ে গেল। কিছু সময় আগেও এখানে লাশ ছিল না। বাড়ির গেট বন্ধছিল। এই কয়দিন যাবত বাড়ির গেট বন্ধই থাকে। এই বন্ধবাড়ির ভেতরে এই ছেলেটির লাশ এলো কীকরে?
বাহিরের কোনো লোক এই বাড়ির ভেতরে ঢুকেছে বলে মনে হয় না।
লাশটিকে কীকরবে?
কী করবে কাশেম ও তার পরিবার। বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবে? তাও ঠিক করতে পারছে না। কিছু সময় নীরব হয়ে বসে রইল কাশেম ও তাঁর পরিবার। শরীর থেকে ঘাম ঝরছে বিচলিত মনে ভাবছে কাশেম, “এমনেই দেশের ভেতরে দাঙ্গা লেগেই আছে। কাশেম নিরিহ মানুষ। জাতে বিহারি। ভালো করে বাংলা বলতে পারে না। তাই বাঙালিদের সঙ্গে তেমন মিলমিশ নাই। আশেপাশে যতো বাঙালিদের বাড়ি। প্রতিবেশি বিহারি নাই বললেই চলে। বন্ধু বলতে ছিল সুমন ও সিজান। ওদের সঙ্গে ছিল যতো ভাব।”কাশেম ঠিকই ভাবছে, বাঙালিদের সঙ্গে মিশে বাংলায় কথা বলতেও শিখেনি।
কাশেমের পরিবার অনেকটা ঘরকোণে। কাশেম মনে করে র্উদু তার কাছে সেরাভাষা। ভাঙা ভাঙা বাংলায় যদিও কথা বলে, তবে মনের বিপরিতে। ছেলেকে বাংলা স্কুলে ভর্তিও করেনি। কাশেমের পরিচিতজন অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছে। সুমন ও সিজান ওরাও এই দেশে নেই। মনের ভাব প্রকাশ করবে কার
সঙ্গে। এতদিন কাশেম এই এলাকায় ছিল নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ হিসেবে।
এখন তার বাড়িতেই একটি লাশ। রক্তমাখা লাশ।
কে করেছে এই খুন?
কীকরে এই বাড়ির ভেতরে এলো এই লাশ! কাশেম ভেবে পায়নি। মাথায় হাত
দিয়ে কিছু সময় বসে রইলো। এই লাশের খবর যদি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে তা
হলে আর রক্ষে নেই।
কাশেম বলছে, আমার জীবন বর্বাদ হয়ে গেলো।
এ মাছুম বাচ্ছাকে কে খতম করেগা!
কোন হারামিকা বাচ্ছা একাম করেগা!
কাশেম জানে আমাদের এই দেশ ছাড়তে হবে।
কোনো ষড়যন্তর আভাস পাচ্ছে!
কাশেম, তড়িগড়ি করে লাশটি বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো। সবাইকে শান্ত থাকতে বলে। রাতেই তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে বলে মনস্থির করে। সবকিছু গোছাতে থাকে। বড় মায়া লাগে এই বাড়ির জন্য। দেখার মতো একটি বাড়ি। এই বাড়িতেই বড় হয়েছে কাশেম।
এই বাড়ির দিকে কুদৃষ্টি পড়েছে কার?
কোনো বাঙালি তো কোনো বিহারি বাড়ির দিকে কুদৃষ্টি দেয়নি।
কে ঘটালো এমন কান্ড?
কোনো গোন্ডগোল লাগার আগেই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো। জীবন বাঁচবে। বেঁচে থাকলে হয়তো একদিন এই বাড়ি আবার ফিরে আসবো?
বিকালে যখন বাড়ির দিকে আসছিল ঠিক তখনি এক কাবলিওলার সঙ্গে দেখা
হয়েছিল কাশেমের।
তুম কাশেম হায়?
হা।
এধারমে কিয়া করেগা? ঘরমে ছুটছে দেও।
ওধারমে এক আদমকা বাচ্ছা খুন করেগা। হায় আল্লাহ আমরা কি করেগা।
একথা বলতেই এক বাঙালির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ওরা আবার বাংলায় কথা
বলতে লাগলো।
কে খুন হয়েছে?
এক বিহারির ছেলে?
যতো তাড়াতাড়ি পারো দেশ ছেড়ে চলে যাও। এ কথা বলছে আর মনে মনে ভাবছে তুমি চলে যাওয়া মানেই এই বাবুমিয়ারবাড়ি আমার। কিন্তু কাশেম বিগড়ে যায়। বলে, আমি এই দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না। আমি এই দেশই থাকবো। দেশ ছেড়ে যাববো না। যাবো না। যাবো না। যাবো না। আমার কোনো শত্রু নেই। কোনো বাঙালি আমাকে হুমকিও দেয়নি। তা হলে আমি এই দেশ ছাড়বো কেনো? কাবলিওলার চোখের ভেতরে
শত্রু শত্রু আগুন দেখে কাশেম। কাশেম জানে, এই লোকটি ভীষণ খারাপ।
কাবলিওলা বলে, যতো আগে আমরা এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো, ততই আমাদের মঙ্গল। অনেক বেহারিই চলে গেছে। আমি ওদের বাড়িঘর দেখে দেখে রাখছি।
জানিস তো বাঙালিদের সঙ্গে আমার সক্ষতা অনেক বেশি। যা যা দেশ চেড়ে চলে যা।
কাশেম তার দিকে তাকিয়ে বলেছিল,
না, আমি যাবনা। এই দেশেই আমি জন্ম নিয়েছি। আমি এই দেশ
ছাড়বো না।
কাবলিওলা হেসেই কুটিকুটি, আরে পাগল তোকে ছাড়তে কে বলেছে। তুই থেকে যা। থেকে যা। তোকে ছাড়তে কে বলেছে। তবে, লাশ, খুন, বাঙালিদের সঙ্গে আমরা পেড়ে ওঠবনা। তাই আমি বাঙালিদের সঙ্গে তালমিলিয়ে আছি।
সুমন ও সিজানদের বাড়ি আমি দেখাশোনা করি, তা কী তুই জানিস?
না।
কোনো ওরা না তোর বন্ধু ছিল?
তা হলে আমি চলে গেলে আমার বাড়ি কী তুমিই দেখা শোনা করবে?
হ্যা। লোকমুখে শুনেছি তোর বাড়িটি খুব সুন্দর। তোর বাড়ি আমার খুব পছন্দ। বেশ কিছুদিন ধরে এমন করে বলে আসছিল কাবলিওলা। এই কথাগুলো মনে পড়ে যায় কাশেমের। তাই কাশেম আর দেড়ি করতে চায় না। কাশেমের কাছে বুঝতে আর বাকি থাকে না, এই কাজ সেই কাবলিওলাই করেছে।
কিন্তু কি করবে! অসহায় কাশেম। বেঁচে থাকার একটি মাত্র পথ খোলা আছে, তা হলো দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। আমি দেশ থেকে চলে গেলে ঐ কাবলিওলার কাছে কেনো এই বাড়ির চাবি দেব!
না, কারও কাছে এই বাড়ির চাবি দেব না। আমি বাড়ি থেকে চলে যাবো।
সপরিবারে বাড়ি থেকে চলে যাব।
রাত বাড়তে থাকে। কাশেম বাড়ির গাছটির দিকে তাকায়। মনে পড়ে যায়, এই গাছের কত আম আমি খেয়েছি! বড় মিষ্টি এই গাছের আম। আর ভাগ্যে আর জুটবে কী না এই গাছের আম। জানি না।
ভবিষ্যতের কথা কে জানে?
হায়!
এই ঘরের আসবা পত্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি বড় অসহায়। সব ছেড়ে চলে যাচ্ছি। নতুন কোনো এক কষ্টের ঠিকানায়। এদিকে কাশেম বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বিড়াল ডাকতে থাকে মাও মাও। তার মাও এর শব্দ কেউ বুঝে না। বিড়াল ডাকতেই থাকে মাও মাও। কাবলিওলা দূরে থেকে দেখছে কাশেমের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া। মনে মনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। এই বাড়ি। হা হা এই বাড়ি। দিন , মাস, বছর। পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে থাকে এইবাড়ি। দীর্ঘদিন এই বাড়িতে কেউ আসতো না। সাধারণ মানুষের মনের ভেতর একটি ভয় কাজ করতো। তা হলো এই বাড়ির ভেতরে কে যেনো আছে।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম
রহস্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে শেষ এ? পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষয় রইলাম
নতুন পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।