ঈদসংখ্যার শিশুতোষ গল্প।। পিঁপড়ে সমাজের লাইসেন্স।। শাম্মী তুলতুল
হাতি যখন হুঙ্কার দেয় যত পোকামাকড় ছোট জীব-জন্তু আছে সব ভয়ে জড়সড় হয় যায়। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে গর্তে লুকায়। পায়ের তলায় যত কিছুই থাকে না কেন সে তার মোটা মোটা পা দিয়ে
সবাইকে চাপ দিয়ে মারে। আচ্ছা একটু ভাবতো বন্ধুরা তার এই অত্যাচার কে মানতে চাইবে?
তাইতো পিঁপড়ে সমাজ হাতির উপর রেগে গেলো। হাতিতো হাতি। তার মস্ত বড় শরীর। শরীরটার ভারে সে কাউকে চোখে দেখে না। যেন একটা উঁচু পাহার। অহংকারের শেষ নেই এই হাতি সমাজের। ওদের কারণে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পিঁপড়ে সমাজ। তারা যখন তখন রাস্তা ঘাঁটে বের হয়ে চলাচল করতে পারে না। বের হলেই তাদের পায়ের নিচে চাঁপা পরে অনেক পিঁপড়ে মারা যায়।বাসায়ও তারা নিরাপদ নয়।
তাইতো সহ্য করতে না পেড়ে পিঁপড়েরা সবাই দলবল নিয়ে হাজির তাদের রাজার মশাইয়ের কাছে।
পিপড়ের দলপতি হাঁক দেয় কই গো রাজা মশাই বাড়িতে আছেন নাকি?
রাজার চৌকিদার বের হয়ে বলল, কি হল বাবুরা কেন ডাকছো শুনি?
পিঁপড়ের দলপতি বললেন, চৌকিবাবু বড্ড বিপদে আছি তাই রাজার কাছে সমাধান চাইতে এলাম।
কিন্তু রাজা মশাইয়েরতো অসুখ বেজায়। তোমরা না হয় কাল এসো।
রাজা তখন কান পেতে ও ঘর থেকে সব শুনছিলেন। বললেন, দাড়াও চৌকিবাবু ওদের বলতে দাও। ওদের বিপদে আমি ছাড়া আর কে আছে বল শুনি। রাজা চোখে চশমা দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে
বলেন, বল কি হয়েছে তোমাদের?
দলপতি বললেন, নিরুপায় হয়ে এসেছি জাহাপনা আপনার কাছে,
বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।
ঠিক আছে বলতে থাকো নির্ভয়ে।
তখন দলপতি বিস্তারিত রাজাকে হাতির ব্যাপারে সব খুলে বললেন। সব শুনে পিঁপড়ে রাজা হাঁটাহাঁটি করলেন কিছুক্ষণ। একটু পর বললেন, একটু রানীর সাথে কথা বলি। মেয়েরা অনেক কিছুই বোঝে বিপদে।
সেদিন রাজাকে ভাবতে সময় দিয়ে চলে গেলো তারা।এদিকে পিঁপড়ে রাজা সমাধানের জন্য হাতির রাজাকে ডাকা পাঠালে সে খেপে যায়।বলেন। আহ! বাচা সাহস কত আমাকে ডেকে পাঠায় এতটুকুন পিঁপড়ে। ওদের সাহস খুব বেড়েছে বুঝতে পেরেছি।এদের উচিৎ শিক্ষা
দিতে হবে। আর বসে থাকা যাবেনা।যা করার এখুনি করতে হবে।
এদিকে চৌকিদার পিঁপড়ে রাজাকে হাতির ক্ষেপে যাওয়ার কথা বললে পিঁপড়েরা সব দলবল নিয়ে রাজার কাছে হাজির হয়। পিঁপড়ে দলপতি বলেন, রাজা সাহেব কি শুনছি এসব। আপনাকে হাতির
রাজা অপমান করেছে?
রাজা বললেন ওসব কিছু না। শান্ত হও। রাগ করে কোন লাভ নেই। এই সময় মাথা ঠাণ্ডা করে কাজ করতে হবে তবেই সমাধান পাওয়া যাবে।
এদিকে পিঁপড়ের একজন হাপাতে হাপাতে ছুটে আসেন রাজার কাছে। রাজা কারণ জানতে চাইলে বলে, হাতিরা আমাদের সব ঘর পা দিয়ে লেপটে দিচ্ছে। আমাদের গর্তগুলো শুঁড় দিয়ে এলোমেলো করে গুড়িয়ে দিচ্ছে। আমি ছেলেপুলে নিয়ে অনেক কষ্টে প্রাণ বাচিয়ে
এলাম জাহাপনা। পিঁপড়ে দলপতি সব শুনে মাথা চাপড়াতে লাগলেন। আমরা ছোট বলে আমরা কিছু না? আমাদের কি কোন মান সম্মান নেই?
জাহাপনা আমরাও বুঝিয়ে দিতে চাই আমরা কম না। সবাই একসাথে হলে তাদের ঠেকাতে পারব। আমাদের অনুমতি দিন। আমাদের লাইসেন্স দিয়ে দিন । যেন তাদের কানের ভিতর, শুঁড়ের ভেতর লেজের মধ্যে কামড় দিয়ে উচিৎ শিক্ষা দিতে পারি। এক পর্যায়ে রাজা আর সইতে না পেরে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে পিঁপড়ে সমাজকে যুদ্ধের লাইসেন্স দিয়ে দিলেন।পিঁপড়েরা তখন রাজাকে সালাম করে আক্রমণ বলে হাতিদের দমন করতে ময়দানে ছুটে গেলো।।
পাদটীকা— মনে রাখা দরকার ছোটদের কখনো ছোট ভাবা উচিৎ নয়। তারা একবার খেপলে ছাড় নাই।