শিশুতোষগল্প ।। কাঠুরে ও এক পাহাড়ি বানর।। জহির টিয়া

গ্রাম হতে অনেক দূরে একটা পাহাড় ছিল। সেই পাহাড়ে গাছপালা ঢাকা একটা গভীর জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে একটা টাকার গাছ ছিল। সেই টাকার গাছের কথা কেউ জানত না। এক কাঠুরে প্রায় প্রতিদিন কাঠ সংগ্রহ করত। পাহাড়ের পাদদেশের গাছপালা হতে। কখনও গভীর জঙ্গলে ঢুকত না কাঠ কাটতে? আলোহীন এই পাহাড়ের জঙ্গলের ভেতরে ভয়ে কেউ যেত না।

একদিন ওই কাঠুরে গেল কাঠ কাটতে। সে পাহাড়ের পাদদেশের একটি গাছের কাঠ কাটছিল। এমন সময় সেই গাছের কাছে ছুটে এলো একটা বানর। বানরটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কাঠুরেকে ডাক দিল। বানরের ডাক শুনে কাঠুরে নিচের দিকে তাকালো। বানরটি প্রায় মানুষের মতো কথা বলছিল খনা খনা কণ্ঠে। কাঠুরে কিছুটা ভয় পেল। বনের বানর যেহেতু সে, যদি আক্রমণ করে বসে। কিন্তু বানরের বারবার ডাকে সাড়া দিল কাঠুরে। কুঠার হাতে কাঠুরে নিচে নেমে এলো ধীরে ধীরে। কাঠুরের মুখে ভয়ের ছাপ দেখে বানরটি বলল, তুমি ভয় পেয়ো না। আমি তোমার জন্য কিছু টাকা নিয়ে এসেছি।
বলেই কয়েকটা টাকার বাণ্ডিল কাঠুরের দিকে ছুঁড়ে দিলো বানরটি। তারপর বলল, এ টাকাগুলো তোমার জন্য। তোমাকে দেখি, নিয়মিত এই বনে কাঠ কাটতে আসো। তা দেখে বুঝতে পারি যে, তুমি খুব দুঃখি কাঠুরে। তোমার খুব অভাব। তাই তোমার জন্য কষ্ট করে, টাকাগুলো নিয়ে আসলাম।
তখন কাঠুরে বলল, এই টাকা তুমি কোথায় পেলে?
বানরটি বলল, এই গভীর জঙ্গলে একটা টাকার গাছ আছে। সেই গাছের কাছাকাছি কেউ কখনো যেতে পারে না। আমি অনেক কষ্ট করে তোমার জন্য টাকাগুলো এনেছি। অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু আমার জেদ ছিল তোমার জন্য কিছু টাকা আনব। এখন তুমি টাকাগুলো নিয়ে বাড়ি যাও। আর কোনও ব্যবসা করো। এই পাহাড়ি জঙ্গলে আর কখন গাছ কাটতে এসো না। না হলে, কোনদিন দেখবে বাঘের আক্রমণে তোমার প্রাণ যাবে। এই পাহাড়ি জঙ্গলে কয়েকটা বাঘ কয়েকদিন হলো ঢুকে পড়েছে।
নির্লোভী কাঠুরে প্রথমে টাকাগুলো নিতে আপত্তি জানাল। কিন্তু বানরের মুখে বাঘের কথা শুনে কাঠুরে টাকার বাণ্ডিলগুলো নিয়ে গেল।

কাঠুরে গ্রামে একটা দোকান দিলো আর কাঠ কাটতে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। এভাবে কাঠুরের সুদিন ফিরে এলো। সংসারের টানাপোড়েন নেই। কিন্তু কাঠুরের মনে ঘুরত বানরের কথা। কাঠুরে ভাবত, আমাকে টাকা এনে দেওয়াতে বানর কোনও সমস্যা পড়ল কি-না। কারণ, সে তো বলেছিল, অনেক কষ্ট করে টাকাগুলো এনে দিয়েছে।
কাঠুরের ভাবনা সত্যিই হলো। ওই টাকার গাছে বাস করত এক রাক্ষস। সেই রাক্ষস বানরকে আক্রমণ করল। কাঠুরেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য। বনের ভেতর টিকতে পারল না বানর। পালিয়ে গ্রামে চলে এলো। আর খোঁজ করতে লাগল কাঠুরের বাড়ি। বানর পেয়েও গেল কাঠুরেকে তার দোকানে। বানরকে দেখে কাঠুরের চিনতে ভুল হলো না।
কাঠুরে হাসিমুখে বলল, বানর ভাই কী হয়েছে?
বানর সবকিছু খুলে বললো কাঠুরেকে।
আর বলল, কাঠুরে ভাই, তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না। তোমার কাছাকাছি আমাকে রাখো। দোকানদারি করার পাশাপাশি আমাকে নিয়ে হাট-বাজারে মাঝেমধ্যে খেলা দেখাতে পারবে। এতে তোমার আয় বাড়বে। বিনিময়ে শুধু আমাকে প্রয়োজনীয় খাবারটুকু দিয়ো।
কাঠুরে হাসিমুখে গ্রহণ করে নিলো বানরের সবকথা।
আর কাঠুরে বলল, খেলা না দেখালেও তোমাকে আমার কাছে রাখব। আমার এই সুখের জন্য আজ তুমি বন ছাড়া। আমার জন্য তুমি এতোকিছু করলে, আর তোমাকে খাবারটুকু দিতে পারব না? নিশ্চিতে তুমি আমার এখানে থেকে যাও।
বানর পেলো জীবন বাঁচানোর একটা স্থায়ী ঠিকানা। আর কাঠুরেরও বাড়ল আয়ের পথ। কাঠুরের বাড়িতে সুখে দিনগুলো কাটতে লাগল পাহাড়ি বানরের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *