শিশুতোষ গল্প

শিশুতোষ গল্প।। বুড়োবনরাজ ও নীলপরি।। মালেক মাহমুদ

বনরাজ, বলে হি হি করে হাসি দিল রাজু। হাসতে হাসতে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। তাকে তাকে সাজানো বই দেখতে পেল। দেখতে পেল আরও একটি মজার বই। বইটির নাম দেখে, হাসি আর থামাতে পারছে না রাজু। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে দেখে, একটি বুড়ো শব্দ যোগ হয়েছে। মূল শব্দের সঙ্গে বুড়ো শব্দ যোগ হয়ে হলো বুড়োবনরাজ। যোগ হলে বিয়োগও হতে পারে। না, এখানে যোগের খেলা চলছে। এক শব্দের একটি নাম। বুড়োবনরাজ নামটি রাজুর মনকাড়ে। বনরাজ নামের আগে বুড়ো শব্দ যোগ হলে কী হবে, বনের রাজা তিনি। তার হুকুমে চলে, বনের অন্য প্রাণিকূল। রানিহীন রাজা। রাজু বুড়োবনরাজ ও পরির গল্প পাঠ করবে বলে, দোকান থেকে একটি বই কিনে নিল। বইটির নাম বুড়োবনরাজ ও নীলপরি। এটি একটি গল্পের বই। গল্পের ভেতরে গল্প। নানারকম মজার গল্প আছে এই বইটিতে। পাঠ নাকরলে মজা অনুভব করা যাবে কি? না, যাবে না। বইপাগল রাজুর মনের ভেতর খুশির জোয়ার বয়ে চলছে। নতুন বইয়ের গন্ধ মন পাগল করে দিচ্ছে রাজুর মন। বইপাগল না হলে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ অনুভব করা যায় না। বইপাগল রাজু। বাড়ি এসে রঙিন বইটি নাড়াচাড়া করছে। ছোটবোন রাজিয়া দেখছে। ওরও বইপড়ার প্রতি ভীষণ আগ্রহ। এই বাড়িতে বেড়াতে এসেছে রাজুর খালাতো ভাই সিপন। বই তার মোটেও পছন্দ নয়। মোবাইল হাতে নিয়ে ভিষণ ব্যস্ত সময় কাটায় সে। তবুও রাজুর সঙ্গে গিয়েছিল বাইরে মানে বই কিনতে। রাজু ঢুকে পড়ে একটি গল্পের বইয়ের দোকানে। তা সিপনের মোটেও ভালোলাগেনি। রাজু বই দেখছে সিপন দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছে। বইকেনার পরে বাইরে এসে হালকা নাস্তা করেনিল দুজন। রাজুর মনে একটাই চিন্তা বাড়ি যাবে, পড়বে বই। সিপন আর রাজুর চিন্তার ভাজ আলাদা। সিপনের বাবা বিদেশে থাকে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে টাকা। সেই টাকা বাড়ি পাঠায় আর বাড়ি বসে ফুটানি করে সিপন। সেই সিপন এখন রাজুর সঙ্গি। রাজুর কর্মকাণ্ড সিপনের মোটেও ভালো লাগেনা। তবুও এক সঙ্গে আছে আজ দুদিন। যত কষ্টই হোক আরও পাঁচদিন থাকতে হবে রাজুর সঙ্গে। রাজু বাড়ি আসতেই নতুন বইটি দেখেনিল রাজিয়া। রাজিয়ারও বইপড়ার প্রতি ভিষণ আগ্রহ। একটি বই দুজনে কীকরে পড়বে? একজন আগে পড়বে আর একজন পরে পড়বে। এই সময় টুকু কারও সইছে না। রাজিয়া বলছে, ভাইয়া তুই নাস্তা খেয়েনি আমি বইটি পড়ি।না, আমি নাস্তা খাবো না। বই পড়ব।শান্ত বালিকা চুপচাপ থেকে মেনে নিল রাজুর কথা।রাজু, চেয়ারে কায়দা করে বসে বইপড়া শুরু করে দিল।রাজিয়া পাঠের ভাগ বসাবে কীভাবে?রাজুর বড়োবোন রাজিয়া। বোড়বোন হিসেবে ছোটভাইয়ের আবদার মানতেই হয়। এক বই দুজনে কীভাবে পাঠ করে। অনেকেই ভাবতে পারে, একই বই চারচোখে দেখছে আর পড়ছে।না। মোটেও না। পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে দুজোন। একটু দূরে সিপন। মোবাইল দেখছে। রাজু বই জোড়ে জোড়ে পাঠ করছে, তাই কান পেতে শুনছে রাজিয়া। হঠাৎ রাজিয়া বলে ওঠে, বনের রাজা সিংহ বলে জানতাম, বুড়োবনরাজ বনের রাজা হলো কীভাবে? রাজু কোনো উত্তর দিচ্ছে না। বই পড়ছে।এই বনে কোনো সিংহ নাই। হাতি নাই। বাঘ নাই। হিস্র কোনো প্রাণিও নাই।রাজিয়া আবার বলে, তবে আছে কী?রাজু কোনো উত্তর দিচ্ছে না। বই পড়ছে। এ বনে আছে পাখির কিচিরমিচির। বনের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বনোলেক। মানে ছোট্ট একটি জলাশয়। জলে আছে মাছ। এই বুড়োবনরাজ যে বাড়িতে বাস করে সেই বাড়িতে বাস করতো এক পরি। এক বাড়িতে থাকলেও দুজনের মাঝে দেখাদেখি নেই। দুজনের দুটি জগৎ। ছাদে থাকে নীলপরি। আর বাড়ির নিচের কক্ষে থাকে বুড়োবনরাজ। নীলপরির পছন্দের শাড়ি নীল। দুটি পাখা আছে। লাল পাখায় ভর করে উড়ে বেড়ায় নীলপরি। দিনেরবেলা ঘুমিয়ে কাটায় আর রাতের বেলা ঘুরে বেড়ায়। এদিকে বুড়োবনরাজ রাতেরবেলা ঘুমায় কাটায় দিনের বেলা সারাবন ঘুরে বেড়ায়। তাই দুজনের দেখা হবার কোন কারণ নেই। যে যার মত ব্যস্ত। বুড়োবনরাজ বনে ঘুরছে। দেখছে পাখিদের সুখ-দুখ। হঠাৎ কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। এগিয়ে গেল, দেখছে একটি পাখি কান্না করছে। পাখির আহাজারিতে গাছের পাতাও নিরব হয়ে আছে। বুড়োবনরাজ কিছু সময় পাখির কান্না শুনছে। কান্না শুনে মনের ভেতর আঁকিবুঁকি করতে লাগলো। পাখির দুখে দুঃখ প্রকাশ করবে সে ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে বুড়োবনরাজ। পাখিদের দুখের সাথী হতে বলতে লাগল, পাখি কান্না করছো কেন?পাখি, কান্না করেই চলছে।আবার বলছে, কান্না করছো কেন পাখি?পাখি, কান্না করেই চলছে।এবার একটু ধমকের সুরে বলছে, কান্না করছো কেন পাখি?পাখির কান্না থামে। কোন কথা বলে না পাখি।অন্য একটি পাখি উড়ে এল। বলল, বুড়োবনরাজ আমার কথা মন দিয়ে শুনুন।বল পাখি। একটি সাপ আমাদের বংশ ধংস করে দিচ্ছে।কি করেছে সাপ?ওই রাক্ষসি সাপটি শুধু মা পাখিকে ধরে ধরে খাচ্ছে।অন্যপাখিদের খাচ্ছে না?না।এটা কেমন কথা! শুধু মা পাখিকে খাবে তা কীকরে হয়? আর আমার এই বনে কোন হিংস্র প্রাণী নেই। কেউ কারও খাবার হবে তাও এর আগে শুনিনি। তোমরা তো শান্তিতেই ছিলে কোথা থেকে এলো এই সাপ?তা তো জানি না।কোথায় আছে সেই সাপ?তাও জানিনা। তবে, রাতের বেলা আসে।ঠিক আছে, রাতে যখন আসবে তখন আমাকে খবর দিবে।ঠিক আছে।রাতে আর ঘুমাতে পারছে না বুড়োবনরাজ। বাহিরে ধবধবে জোছনা। সেই দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ দেখেতে পেলে কে যেন, নীল শাড়ি পরে বনের ভেতর হাঁটছে। চোখমেলে তাকাতেই নাই হয়েগেল। বুড়োবনরাজ বসে আছে। চোখে ঘুম আসছে না। শুধু ভাবছে, রাক্ষসি সাপের কথা। কি করে ধ্বংস করে দিবে ওই রাক্ষসি সাপকে। আমার এই বনের প্রাণিকূল ফিরে পাবে শান্তি। এ কথা ভাবতে ভাবতেই সেই পাখি উড়ে এলো। বলতে লাগলো বুড়োবনরাজ, সেই সাপ এইখানে এসেছে। খুঁজে ফিরছে মা পাখি।কই?যেখানে আপনি গিয়েছিলেন সেইখানে, আমি দেখে এসেছি।ঠিক আছে, চলো।পাখি উড়ে চলছে বুড়োবনরাজ হেঁটে চলছে। গায়ে পরিধান করছে বাঘের চামড়ার জামা। মাথার পরেছে মহিষের শিং।রাজিয়া বলে ওঠে এই আজগবি পোশাক পরছে বুড়োবনরাজ?রাজু কোন কথা বলছে না, পড়তে থাকে বই।পাখিগুলোা ভয়ে কিচিরমিচির করছে। মা পাখিকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাপ খুঁজে ফিরছে মা পাখি। সাপ জানে মা পাখি শেষ করতে পারলেই বিলুপ্ত হবে পাখিকূল। এই পাখিকূল ধ্বংস করাই এই সাপের কাজ। খুব সুক্ষ বুদ্ধি নিয়ে করে যাচ্ছে এই কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *