শিশুতোষ গল্প

মালেক মাহমুদ এর ধারাবাহিক শিশুতোষ গল্প বটগাছে সাতটি পাখি

সাতটি পাখি। সাত রঙের পাখি। সাতটি পাখির সাত ধরণের নাম। এই সাতটি পাখি বসে আছে বটগাছে। বুড়ো বটগাছ। গাছটির আসপাশে মাঠ। তিন পাশে তিনটি গ্রাম। মাঝে একটি বটগাছ। এই বটগাছটি রিপনের দাদার দাদা দেখেছে। এখন রিপন দেখছে। এর পরে আরো কতকাল এ গাছ দাঁড়িয়ে থাকবে সীমানা হিসাবে। রিপন সকালবেলা তিন গ্রাম ঘুরে এসে দাঁড়ালো বটতলে। বটগাছ নাকি তিন গ্রামের ঠিকানা। কিন্ত এই তিন গ্রামের যত ফসলি জমি তা এই বটগাছকে ঘিরে। বটগাছ শক্তি সঞ্চয় করার জন্য ডালা থেকে ঝুরি ছাড়ে। সেই ঝুরি মাটি থেকে প্রাণ শক্তি আহরণ করে।
বটগাছ বংশ বৃদ্ধিতে খুব কৃপণ। সে কিভাবে নিজে বড়ো হবে। কিভাবে বেশিদিন বাঁচবে সে কর্মে ব্যস্ত। বটগাছের নিচে অন্য কোনো গাছ জন্মাতে পারে না। এ বটগাছে অনেক পাখির বসবাস। কিন্তু রিপন সাত রঙের সাতটি পাখি দেখতে পেলো।
একটি পাখি রিপনকে বলে, রি প ন।
রিপন, এ দিক ওদিক তাকাতে থাকে। কোনো মানুষ দেখতে দেখতে পায় না। আওয়াজ শূনতে পায়। কোথা থেকে আসে আওয়াজ।
আবার, ওই পাখিটি ডাকে, রি প ন।
হ্যাঁ, এবার রিপন ঠিকই দেখতে পায়, একটি পাখি তাকে ডাকছে। পাখিটি লাল রঙের। মাথার ওপর একটি ঝুটি আছে। এ পাখি সে কখনো দেখেনি। এই না দেখা পাখি কি করে ওর নাম ধরে ডাকলো! চমকে গিয়েছে রিপন। তবুও
রিপন বলে, আমি তো তোমার নাম জানি না পাখি। তুমি আমার নাম কি করে জানলে?
সে তোমার জেনে লাভ নেই, আমি এ জগতের পাখি নই আমি এসেছি তোমাকে সাবধান করতে।
কেনো কি হয়েছে?
আজ এসেছো বেশ ভালো, তবে একাএকা পরপর সাতদিন এই বটতলে তুমি আসবে। নাআসলে তোমার ক্ষতি হবে। এ কথা কাউকে বললেও তোমার ক্ষতি হবে।
তা হলে আমি কি করবো?
কিছু করতে হবে না, আগামী কাল এ সময়ে আবার আসবে।
রিপন নিরবোধ বালকের মতো বাড়ি ফিরে যায়। রাতে ভাবতে থাকে সকালে যেতেই হবে। কাউকে কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়ে। ঠিক সময় মতো পৌঁছে যায় বটতলে।
এবার ছয়টি পাখি দেখতে পেলো কিন্তু লাল পাখিকে দেখতে পেলনা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যখন ফিরে আসছে ঠিক তখনই নীল পাখি বলে, রি প ন। এবারও কোনো মানুষ দেখতে পারলো না। নীল পাখিকে দেখতে পায়।
রিপন বলে, কি নীলপাখি। লালপাখিকে দেখছি নাতো।
নীলপাখি বলেছে, লালপাখি তোমাকে যা বলেছে তোমার কি মনে আছে?
হ্যাঁ আছে, ঠিক ঠিক মনে আছে।
লালপাখি নাই। সে চলে গেছে আর তোমার জন্য একটি লালফুল দিয়েছে, এই নাও লালফুল। এই ফুল তুমি সযতনে রাখবে।
রিপন, ফুল নিয়ে বাসায় চলে গেল। দিন চলে গেল, রাত চলে গেল। সকালেই আবার চলে গেল বটগাছ তলে। এবার পাঁচটি পাখি দেখতে পায়, কিন্তু নীল পাখিটি দেখতে পায় না। মন খারাপ করে বাড়ির দিকে যাবে ঠিক তখনই হলুদপাখি রি প ন বলে ডাক দেয়। বলে, মন খারাপ করো না, তোমার জন্য একটি নীলফুল দিয়েছে। তোমাকে সযতনে রাখতে বলেছে। ফূল নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে। দিন যায়। রাত যায়। সকাল হয়। রিপন চলে আসে বটতলে। এবার সে চারটি পাখি দেখতে পায়। বটপাতা রঙের সবুজ পাখিটি গলা বের করে আছে। বলছে – রি প ন।
রিপন বলে, আজ তো হলুদ পাখিটিরে দেখছি না। সবুজ পাখিটি বলল, মন খারাপের কিছু নাই। তোমার জন্য একটি হলুদফুল দিয়েছে, এই নাও ফুল। ফুলটি হাতে নিয়েই সবুজ পাখি বলল, ফুলটি সযতনে রেখো। কাল ঠিক এ সময় চলে এসো। রিপন চলে যায়। দিন যায়। রাত যায়। সকালে ঠিক রিপন চলে আসে। এবার তিনটি পাখি দেখতে পায়। দেখতে পায় না সবুজ পাখিকে। কিন্তু সাদা রঙের পাখিটি রি প ন, রি প ন বলে পাগল করে তুলে। বলছে, রিপন তোমার মন খারাপ করছে? মন খারাপের কিছু নাই তোমার জন্য সবুজপাখি সবুজফুল দিয়েছে। এই নাও সবুজফুল। রিপন সবুজফুল হাতে নিতেই সাদা পাখি বলে, কাল আবার এই সময় এসো। রিপন চলে গেল। দিন গেল। রাত গেল। সকালে আবার বটতলায় ফিরে এলো। এবার দুটি পাখি দেখতে পায়। কিন্তু দেখতে পায় না সাদাপাখিকে। কালো পাখি রিপনকে সাগতম জানালো। তুলে দিল সাদা পাখির দেয়া সাদাফুলটি। আর বলে দিল ফুলটি সযতনে রেখো। কাল ঠিক এ সময় এসো। রিপন বাড়ি ফিরে যায় আর ভাবে কাল আর আসবো না। কাল আসলেই তো কালো ফুল পাবো। কালোতো দুঃখের প্রতীক। শোকের প্রতীক। না, আমি কাল আর আসব না। দিন চলে যায়। রাতে ঘুমিয়ে পড়ে আর ভাবে কাল বটতলা যাওয়া ঠিক হবে না। এমন সময় সকালের আকাশ রঙের একটি পাখি এসে কাছে বসলো। বলল, রি প ন কাল সকলে নাকি তুমি বটতলে যাবে না। এই ভুল তুমি কখনো করবে না। এই বলে পাখি চলে যায়, রিপনকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় না। রিপন ভাবে ছয়দিন গাছতলে গেলাম পাঁচটি ফুল পেলাম। কাল সাতদিন পূর্ণ হবে। লালপাখি বলে ছিল সাত দিন নাগেলে আমার অমঙ্গল হবে। নানা রকম ভাবনা চিন্তা করে ঠিক করে কাল বটতলে যাবে রিপন।
যে ভাবনা সেই কাজ। ঠিক সময় মতো হাজির হলো। আকাশ রঙের পাখিটি রিপনকে দুটি ফুল দিয়ে সাগতম জানালো। আর বলল, আপনার কাছে আমরা ঋণী। এই বটগাছে ছয় দেশের ছয় রাজকন্যা কালো জাদুতে আটকা ছিল। আর তাদের মুক্তির একমাত্র পথ ছিল কোনো নিষ্পাপ কিশোর পরপর ছয় দিন একই সময় বটতলে এলে তারা ছয়জনই মুক্তি পাবে। আর সপ্তম দিনে সে পাবে পুরস্কার। এবার কিশোর রিপন এক গাল হাসি দিয়ে বলল, তাই। তবে, আমার পুরস্কার কই আকাশি পাখি।
পাখি বলে, পুরস্কার তো আপনার হাতে।
এগুলো তো ফুল।
হ্যাঁ, ছয়টি ফুল ছয় দেশের বাহন। যেতে পারবেন ছয়টি দেশে। দেখা করতে পারবেন ছয় দেশের রাজ কন্যার সঙ্গে। সাত নম্বরে পাবেন আমার দেখা। এ কথা বলতে বলতে আকাশি রঙের পাখি মিলে গেল আকাশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *