অণুগল্প- নেই কেউ নেই- সাইফ বরকতুল্লাহ

জীবন, যেন সব সময় কঠিনের সাথেই চলে। দুঃখ, দুঃখ, দুঃখ। যেন ঘর ভর্তি দুঃখের মহোৎসব। কখনো এতটা মন খারাপ হয়নি এর আগে। যেদিন প্রথম ডায়েরিটায় বাবার হাতের লেখা স্পর্শ করলাম, শরীর তখন কাটা দিয়ে উঠল। চোখ থেকে জল পড়ছে। হৃদয় তখন বিষণ্ণতায় নুইয়ে পড়েছে।

এতটা আবেগ, কোনোদিন পার করিনি কখনো। এর আগে যেদিন মা মারা যাবার খরটা পাই, সেদিন তো জ্ঞান হারিয়েছিলাম। সেই স্মৃতিও মনে পড়ে মাঝে মাঝে। অথচ সবটা নিছক মনের খেলা নয়। বুকের ভেতর ফাপুর ফাপুর লাগতেছে। মন কেমন জানি ছলাৎ ছলাৎ করতেছে। এদিক ওদিক তাকাই। দেখি চোখে ছায়া ছায়া পড়ে। বুয়া, বুয়া, বুয়া..এক গ্লাস পানি দাও তো..। ধ্যাততেরি পানি কীভাবে দেবে! বুয়া তো আজ ছুটিতে।

কিযে হলো আমার। গত কিছুদিন ধরে ডায়েরির কথাটা মনে হলেই ঘোরের মধ্যে চলে যাই। বাবা মার স্মৃতি মনে হলেই মাথা চক্কর মারে। ঝিম ঝিম লাগে। হৃদয় মোচড় দেয়। আরে ধুর!! কী চিন্তা করছি। যাই, অফিসে গতকাল বস একটু ঘণ্টাখানেক আগে যেতে বলেছিলেন। যাই.. অফিস যাই..।

বিষণ্ণ সকাল। চারপাশ গরমে অস্থির। এমনিতেই শরীর, মন হৃদয় কোনোটাই ভালো নয়। সঙ্গে নানা দঃস্বপ্ন ভর আছে মাথায়। বাস যাচ্ছে। বসের ফোন, সিজার আপনি কতদূর?
-জী বস আমি বাসে, আসছি। মিনিট পনের লাগতে পারে।
-ওকে চলে আসেন।
-ওকে বস।
বাস যাচ্ছে। চোখ দুটো আকাশের দিকে তাকালাম। দশ বারোটা কাক উড়ছে। কিছু সাদা মেঘ দেখা যাচ্ছে। ভু ভু করে একটা বিমানও গেল।

অফিসে কিছুক্ষণ কাজ করার পর আবার মাথাটা চক্কর দেয়। পাশের সহকর্মীর কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই কাজে আসছে না। সত্যিই আমি যেন ভবঘুরে। উদাস মনে আবার নিজের চেয়ারে এসে বসি। যেন চারপাশে নীরবতা। অন্ধকার। অথচ তখনও আমি অফিসেই। হঠাৎ বাইরে থেকে গানের আওয়াজ আসছে। আমি বসকে বলে ছুটলাম বাইরে। আমি একা। নেই কেউ। কেউ নেই।

One thought on “অণুগল্প- নেই কেউ নেই- সাইফ বরকতুল্লাহ

  • অক্টোবর ৭, ২০১৯ at ৮:২৬ অপরাহ্ণ
    Permalink

    গল্পকারের লেখনী শৈলীতে দারুন মুন্সিয়ানা মুগ্ধ করেছে।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *