হাসনাত আমজাদের তিনটি ছড়া

জ্যামের ভীড়ে হারাচ্ছি সব


কিনবে কি জ্যাম? ভর্তি ঝাঁকা।
মুটের মাথায়, লাগবে টাকা।
দাম বেশি নয় অল্প খুবই, যাও ঐ জ্যামের হাটে
দেখবে জ্যামে ভাসছে এদেশ, জ্যামেই সাঁতার কাটে।
জ্যাম পাবে ওই ময়দানে আজ, ব্যস্ত সবাই সবারই কাজ
জ্যাম হয়েছে সংক্রামিত জ্যামের ক্রমে বদলেছে সাজ।
জ্যাম আছে ঐ শস্যমাঠে এবং হাওড়বিলে
জ্যাম পাবে ঐ দূর পাহাড়ে, পাবে আকাশনীলে।
বাস ট্রেনে জ্যাম আগেও ছিলো, এখন এয়ারপোর্টে
কী হবে এই দেশে থেকে, বিদেশ সবাই ছোটে।
জ্যাম পাবে ঐ কক্সবাজারে, সেন্টমার্টিনেও আছে
পুকুর ও বিল? জ্যাম সেখানেও, নতুন জাতের মাছে।
ইংরেজি আর বাংলাতে জ্যাম, হিন্দি হলো যোগ
চিকিৎসাতেও জ্যাম বাধালো বিদঘুটে সব রোগ।
জ্যাম বেধেছে ক্লাসের বইয়ে ওয়ান টু থ্রি ছয়ে
সঙ্গীতে জ্যাম, রবিঠাকুর আছেন জ্যামে ভয়ে।
জ্যাম এখন ঐ ছাদবাগানে, শব্দ কি পাও কানে?
ফুলের খোঁজে প্রজাপতি ছুটছে ছাদের পানে।
চতুর্দিকে জ্যাম শুধু জ্যাম, জ্যামের ফাঁকে যদু ও শ্যাম
আব্বু ও মা ডাক ভুলেছে, ডাকছে তারা ড্যাডি ও ম্যাম।
জ্যাম লেগেছে ইউটিউবে, ফেসবুকে আর ট্যুইটারে
জ্যামের চাপে পাগলপারা, কোথায় এখন থুই তারে।
জ্যামের ভীড়ে হারাচ্ছি সব

ফুলপাখিদের গান, কলরব।

ফুলপাখিদের গান, কলরব।

ছড়া লেখা সহজ ব্যাপার


লিখব ছড়া? সহজ ব্যাপার, কাগজ কলম আনো
কী বিষয়ে লিখব বলো, দৈত্য নাকি দানো?
নাকি পাখি, লতা-পাতা? পাহাড় কিবা নদী?
লিখতে পারি এক নিমিষে ভাবনা আসে যদি।


লিখব তবে? করছি শুরু, কত্তো কিছু মনে
কিন্তু কলম চলছে না ক্যান? থামছে ক্ষণে ক্ষণে।
এই এসেছে দুইটি লাইন ছুটছে কলম, তবে
সন্দেহ খুব লাগছে মনে কেমনতরো হবে।
অন্ত্যমিল না কী যেনো ছাই, মিলছে না ক্যান সেটা?
মার হাতুড়ির ঘা মাথাতে, আচ্ছা করে পেটা।
ঘা খেয়ে ঠিক আসবে মাথায় মিলবে তখন ছড়া
বলবে সবাই বাহবা বাহা, এ ছড়া কার গড়া?
আটকে গেলাম আবার হঠাৎ, কোথায় গেলো ছন্দ?
ছন্দবিহীন হয় কি ছড়া? মনের মাঝে দ্ব›দ্ব।
কী যেনো সব নাম ওগুলোর? ওহো, স্বরবৃত্ত
মাত্রাবৃত্ত ঘুরছে পাশে করছে ছুঁচোর নৃত্য।
ঘামছে শরীর, ঘামছে মাথা, ঘামছে হাতের তালু
সামনে সোজা রাস্তা তবু দেখছি আমি ঢালু।
না নারে ভাই, যতোই বলি সহজ ছড়া লেখা
খুবই কঠিন, যদি না পাই ছড়ার দেবীর দেখা।
ঘাট হয়েছে, ক্ষান্ত দিলাম লিখব কিছু অন্য
কী প্রয়োজন জীবন দেয়া ছড়া লেখার জন্য?

কোমা মানেই ঢাকা

ঢাকায় যাবে? কিন্তু কেন?
নিজের শহর লাগছে ন্যানো?
ছেড়ে যাবে?
শান্তি পাবে?
একটু ভাবো নতুন করে
হয়তো আছো অন্য ঘোরে।
কি নেই বলো এই শহরে?
চাঁদ দেখা যায় ধলপহরে।
কাটবে সাঁতার? নদী আছে
নরম ঘাসের গদি আছে
বন্ধু শফিক, বদি আছে
খাঁটি দুধ আর দধি আছে।


অন্ধকারে আলো আছে
একটু দূরে খালও আছে
ধরবে কি মাছ? জালও আছে
নৌকাতে লাল পালও আছে।
আড্ডাতে প্রাণ. হাসি আছে
ভালোবাসাবাসি আছে
বাতাস রাশিরাশি আছে
গ্রামও পাশাপাশি আছে।
দুঃখ আছে কষ্ট আছে
কিছু মানুষ নষ্ট আছে
অভাবে পথভ্রষ্ট আছে
কিন্তু তা খুব পষ্ট আছে।
ঠিক নয় কি? তাইতো বলি
এই শহরের অলিগলি
বলছে তোমায়
যাবে কোমায়?
কোমা মানেই ঢাকা
শুধুই টিকে থাকা।

২ thoughts on “হাসনাত আমজাদের তিনটি ছড়া

  • জুন ২৪, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ
    Permalink

    হাসনাত আমজাদ মানেই অমল আনন্দের ছড়া।এখানেও তিনটি ঝকঝকে ছড়ায় মাতিয়েছেন তিনি। সুন্দর। দারুন।

    Reply
  • জুন ২৪, ২০২১ at ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ
    Permalink

    আমজাদ ভাইয়ের ছড়া দেখামাত্রই পড়ি।চমৎকার তিনটি ছড়া।শেষ ছড়াটি বেশি ভালো লাগলো। ✌️

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *