সুব্রত চৌধুরী’র ছড়া
প্রানের প্রিয় বাংলা ভাষা
কোন ভাষাতে খুনসুটিতে খোকা খুকু মাতে
কোন ভাষাতে তারা হাসে মিটিমিটি রাতে,
কোন ভাষাতে একতারাতে বাউলে মাতে সুরে
কোন ভাষাতে মনটি খোকার হারায় অচিনপুরে।
কোন ভাষাতে আকাশ পানে ডানা মেলে পাখি
কোন ভাষাতে মায়ের গানে খোকা মুদে আঁখি,
কোন ভাষাতে হুলো মাতে পুষির সাথে খেলায়
কোন ভাষাতে বাজে ভেঁপু ডিসি হিলের মেলায়।
কোন ভাষাতে খুশে মাতে নাগরদোলায় খোকা
কোন ভাষাতে বাগান জুড়ে গোলাপ থোকা থোকা,
কোন ভাষাতে ভ্রমর ওড়ে মাখে ফুলের রেনু
কোন ভাষাতে রাখাল ছেলে বাজায় খুশির বেনু।
কোন ভাষাতে কোকিল ডাকে কুহু কুহু তানে
কোন ভাষাতে খুকু মাতে মিষ্টি দেশের গানে,
কোন ভাষাতে স্বপ্ন মায়ের মনে জাগায় আশা
সে যে আমার প্রানের প্রিয় মধুর বাংলা ভাষা।
খোকা, একুশ মানে জানো
খোকা তুমি হচ্ছো বড়ো
একুশ মানে জানো?
বাহান্নতে দেয় যে হানা
দৈত্য এবং দানো।
মায়ের মুখের ভাষা ওরা
চাইলো নিতে কেড়ে,
লাঠি হাতে দেশের মানুষ
আসলো তখন তেড়ে।
দৈত্য দানো হামলে পড়ে
লাঠি- গুলি-গ্যাসে,
বুকের রক্তে রাস্তা ভাসে
দৈত্য পালায় শেষে।
সালাম -বরকত -রফিক- জব্বার
তাদের রক্ত দানে,
আমরা মাতি প্রভাত ফেরির
ভাই হারানো গানে।
ভায়ের রক্তে আমরা এখন
মায়ের ভাষা বলি,
বিশ্ব মাঝে উচ্চ শিরে
আমরা সবাই চলি।
মায়ের ভাষার সুরে
ভোরের আলো ফুটি ফুটি মায়ের ভাষার সুরে
অচিন পাখি ডানা মেলে যায় যে উড়ে দূরে।
কিষান ছোটে মাঠের পানে মায়ের ভাষা মুখে
মাঠে মাঠে ফলায় সোনা দারুন সৃষ্টি সুখে।
রাখাল বালক বাজায় বাঁশি মায়ের ভাষার সুরে
মনটা খোকার যায় হারিয়ে কোন সে অচিনপুরে ।
মাঝি মাল্লা পালটি তুলে মায়ের ভাষার গানে
ছলাৎ ছলাৎ ময়ূরপংখী যায় যে সুদূর পানে।
গাড়িয়াল ভাই মায়ের ভাষায় গায় যে উঁচু স্বরে
ক্যাচর ক্যাচর গরুর গাড়ি গাঁয়ের পথটি ধরে।
বেহারা যায় পালকি কাঁধে মায়ের ভাষার গানে
নাইয়র আসে বাপের বাড়ি মাতে খুশির বানে।
মায়ের ভাষায় বোস্টমীটা সুর তুলে যে গলায়
একতারাতে মজে সবাই বকুল গাছের তলায়।
মায়ের ভাষায় ছন্দে ছড়ায় কলম ধরে কবি
রং তুলিতে শিল্পী আঁকে নতুন দিনের ছবি।
বর্ণমালার পাখি
অ আ ক খ ই ঊ গ ঘ
বর্ণমালার পাখি,
কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে
করে ডাকাডাকি।
একটি করে পাখি যেন
শহীদ ভাইদের নামে,
দু:খের বার্তা নিয়ে আসে
শোকের কালো খামে।
খামটা খুলে সজল মায়ের
কালো দুটো আঁখি,
ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে
শোকের রেনু মাখি।
ফাগুন এলে
ফাগুন এলে আগুন জ্বলে মায়ের পোড়া মনে
ফাগুন এলে আগুন জ্বলে রক্ত পলাশ বনে।
মায়ের ভাষা নিতে কেড়ে পাকি পাতে ফাঁদ
আর পারে না সয়তে খোকা ধৈর্যের ভাংগে বাঁধ।
মায়ের ভাষা প্রানের আশা কে নেবে ভাই কেড়ে
তাইতো ওদের রুখতে খোকা রাজপথে যায় তেড়ে।
খোকার কন্ঠে মায়ের বুলি,শূন্যে ধরে নিশান তুলি
রাজপথ ভাসে রক্তে লালে খোকার বুকে চালায় গুলি।
খোকার রক্ত কালি হয়ে রাজপথে লেখে প্রিয় নাম
ভাষার তরে শহীদ যারা রফিক জব্বার বরকত সালাম।
সু্ন্দর লেখাগুলো!