গুচ্ছ ছড়া রাফিউজ্জামান রাফি

ছবির ছড়া

এক ফোঁটা নীল দাও আকাশটা আঁকি।
ক’ফোটা হলুদ রং তার নিচে মাখি।

ওপরেতে নীল আকাশ নিচে তুলতুল
ক্ষেত ভরে ফুটে গেলো শর্ষের ফুল!
আলজুড়ে কিছু রং সবুজটা ঢালি।
তারপরে কি হয় আর দেখে যাও খালি।

ক্ষেত হলো তার পাশে কচি কচি ঘাস,
এলোমেলো হয়ে নাচে পেলেই বাতাস!
ফুলে ফুলে এঁকে ফেলি কিছু মৌমাছি
গান গেয়ে মধু নেয় তারা নাচি নাচি।

তার পাশে এঁকে ফেলি মেঠোপথ টুকু
পথ দিয়ে হেটে যায় ফ্রক পড়া খুকু।
খুকুটার কালো চুলে লাল রং দিয়ে
টুকটুকে ব্যান্ড খানি দেই পরিয়ে।

এইটুকু এঁকেমেকে তুলি ছুঁয়ে দেখি!
আঙুলেও নীল রং ভরে গেলো একি!
কিভাবে কি হয়ে গেল কি করি এখন?
সাথে সাথে মনে হলো হায় ভুলো মন!

নদীটাতো আঁকিনি! নীল রং দিয়ে-
আকাশকে নদী জলে রাখি চুবিয়ে।
ব্যস ব্যস মিটে গেলো ভুলগুলো খুব
নীল আকাশ নদীতে দিয়ে দিলো ডুব।

এইবার তুলি জুড়ে সাদা রং ঢালি।
কাশবন ছাড়া নদী লাগে খুব খালি!
তীর দিয়ে সাদা রং টেনে টেনে তাই
ফুলে ফুলে কাশবন সাদা করে যাই।

সবশেষে চোখ মেলে দেখে ভাবি তাও
নদী আছে হয় নাকি না থাকলে নাও!
যেই কথা সেই কাজ কিছু রং মেখে
কয়েকটা নৌকা তাই দেই এঁকে।

এইবার এইবার আছে সব ঠিক।
টিকটিকিটাও দেখি করে ঠিক ঠিক!

০২.

বোয়াল মাছের বিয়ে

বোয়াল মাছের বিয়ে বলে গোঁফ দাঁড়ি সব কেটে,
নাকের ওপর রুমাল গুজে বর সেজে যায় হেটে।
তার বিয়েতে চিয়ার লিডার নদীর বেতল মাছ।
রঙিন শাড়ি গায় দিয়েছে নাচবে ভীষণ নাচ!
ঢোক বাজাবে ট্যাংরা টাকি পুটির হাতে সানাই।
ঢোল বাজাবে ট্যাপা এবং গাইবে পান্থ কানাই!
ব্যান্ড পার্টিতে পাবদা চিতল ইতল বিতল সুরে
বাজিয়ে যাবে বৌ আনতে পদ্মা মেঘনা ঘুরে!
বোয়াল মাছের বিয়েতে দাওয়াত পায়নি শোল।
রাগ করে তাই বসে আছে গাল ফুলিয়ে ঢোল।

ছোট্ট বেলার বিকেলগুলো

বিকেলগুলো দারুণ লাগে হলুদ রঙের মতো।
এই বিকেলে আমার জানো গল্প আছে কতো?
ছোট্ট বেলার বিকেলগুলো আমার হাতে নাটাই।
রোজ বিকেলে দাদার সাথে ঘুড়ি ঊর্ধ্বে পাঠাই।

বর্ষাদিনের বিকেলগুলো নাওয়ে ভেসে ভেসে,
শাপলা শালুক তুলে তুলে কাটতো হেসে হেসে।
আমের দিনে বিকেলগুলো ঝড়ের আশায় কাটতো।
ঝড় এলেই কুড়াবো আম, মাথায় শুধু হাঁটতো।

বিকেলগুলো খেলার ছিল পড়ার থেকে ছুটি।
দাড়িয়াবান্ধা, বৌচি, গোল্লা সকল ছেলে জুটি।
বিকেলগুলো গ্রামের ছিল, সূর্য ডোবার আগে,
কাশের বনে হারিয়ে যাওয়া খেলার ফাঁকে ফাঁকে।

বিকেলগুলো মজার ছিল, যা খুশি তাই করার।
বিকেলগুলো মুক্ত ছিল মায়ের শাসন, পড়ার।
বিকেলগুলো ফুল কুড়ানোর বকুল গাছের তলে।
বিকেলগুলো নদীর পাড়ে সবাই দলে দলে।

ছোট্ট বেলার বিকেলগুলোর ঘ্রাণটা আজও পাই।
শহর ছেড়ে হঠাৎবিটাৎ গ্রামে যখন যাই।
আমার সোনার বিকেলগুলো এখনও কি আছে?
সে কি এখন চিনবে আমায় যাই যদি তার কাছে?

ভাবনা

আমার কিছুই ভাল্লাগে না!
মরিচ খেলেও ঝাল লাগে না!
হাঁটতে গেলে পা থেমে যায়!
শীতের কালে গা ঘেমে যায়!

ভেজা সবই শুকনো লাগে!
মোটা মানুষ রুগ্ন লাগে!
লম্বা যা সব বামন লাগে!
এসব শুনলে দাদা রাগে।

দাদী বলে পাগল ছেলে।
ভাবছি আমি, কোথায় গেলে?
বলবে সবাই ঠিকই আছে!
যা মনে হয় তোমার কাছে।


তোমার জন্য

তোমার জন্য পাখি আছে তোমার জন্য ফুল
তোমার জন্য ইতল বিতল তোমার জন্য কূল।

তোমার জন্য নানান রঙের নানান রকম পাখি,
তোমার জন্য আম বরইয়ের আচার তুলে রাখি।

তোমার জন্য বারান্দাতে মাটির পুতুল ঘোড়া,
তোমার জন্য রোদের আদর মিঞা ভাইয়ের মোড়া।

তোমার জন্য কাজল পুকুর থৈ থৈ তার জল,
তোমার জন্য লাটিম, ঘুড়ি, মারবেল ও ফুটবল।

তোমার জন্য পাখির বাসা বন-বাদাড় ও মাঠ।
তোমার জন্য মিঠাই, মণ্ডা, শনিবারের হাট।

তোমার জন্য দাদুর গল্প, জোনাকজ্বলা রাত।
তোমার জন্য নদীর জলে রুপোর থালার চাঁদ।

তোমার জন্য আমার গ্রামের সবুজ ধানের ক্ষেত,
তোমার জন্য বাঁশবনে চাঁদ, তোমার জন্য বেত।

তোমার জন্য কালো গাইয়ের দুধ সাথে ভাত কলা,
তোমার জন্য তেঁতুল, শাকুন বিছিয়েছে গাছতলা।

তোমার জন্য সবই আছে, আমার গ্রামে আসো,
বুকটা ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সবুজ মেখে ভাসো।

দুষ্টু আকাশ
এমন করে আমার পানে তাকাস কেন আকাশ?
বৃষ্টি চেয়ে চিঠি দিলে পিঠপোড়া রোদ পাঠাস!
রোদ যদি চাই ছায়া পাঠাস, সাথে মেঘের ঝুড়ি!
তোর সাথে নেই কোনোকথা, তোর সাথে আজ আড়ি!
জ্যোৎস্না চাইলে অন্ধকারে দিস চারিপাশ ঢেকে!
ইচ্ছে করে কালো রংটা তোর মুখে দেই মেখে!
অদ্ভুত আছে স্বভাবটা তোর, রংধনু চাই বিজলী পাঠাস!
বুঝি না তুই আমার সাথে এমন করে কি মজা পাস?
তোর সাথে তো হয়নি আমার ঝগড়া ঝাটি কভু!
আমার সাথে কেন করিস এমনটা বল তবু?
না কিরে তুই লোকই এমন? এমনই কারসাজি?
আমার মতো তুইও কি খুব দুষ্টু এবং পাজি?

০৬
সোনার বাংলাদেশ

ছড়ায় ছড়ায় ছানাবড়া
ছড়াকারের চোখ!
লিখছে ছড়া, বেজায় কড়া,
সাথে খাচ্ছে কোক।
বকের ছড়া, কাকের ছড়া,
ঢোলতবলা ঢাকের ছড়া।
ম্যাওয়ের ছড়া, ঘেউয়ের ছড়া,
নদীনালা ঢেউয়ের ছড়া।
ব্যাঙের ছড়া, ঠ্যাঙের ছড়া,
মোরগ লড়াই, ল্যাঙের ছড়া।
পুজোর ছড়া, রোজার ছড়া,
বাকা ত্যাড়া সোজার ছড়া।
পরীর ছড়া, ভূতের ছড়া,
রাক্ষস ঘেউ, পুতের ছড়া।
সুয়ো দুয়ো রাণীর ছড়া,
টাকার ছড়া, মানির ছড়া…
লিখতে লিখতে যখন হলো ছড়া লেখা শেষ,
ছড়াকারে লিখল তখন সোনার বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *