শাহিন ইসলাম এর গুচ্ছ ছড়া
একটু রোমান্টিকতা
বলতে পারো চাঁদ-সেতারা
হঠাৎ কেন জ্বলছে?
এই যে শোনো আজকে ওরা
তোমার কথাই বলছে।
বলতে পারো এই বেলা ক্যান
রাত্রি নীরব মায়ায়?
জোছনারা সব হার মেনেছে
তোমার রূপের ছায়ায়।
বলতে পারো হিমেল হাওয়া
কী বলে যায় এসে?
কার প্রেমে আজ দোল দিয়ে যায়
তোমার এলোকেশে?
বলতে পারো নায়ের তলায়
কার কোলাহল হাসি?
আমার হয়ে বলছে এ নদ
তোমায় ভালোবাসি।
মোনাজাত
খুব নীরবে গুমরে কাঁদি
কেউ জানে না, কী বেদন,
রাতদুপুরে তোমার কাছে
একটা শুধু নিবেদন।
জান্নাতি হুর, শরাব-পানি
থাক না পড়ে, হে রাহিম!
চাইবো না তা, হোক না যতই
প্রাণ জুড়ানো সেরা হিম।
এক খেয়ালে দেখবো শুধু
তোমার হাসি নীরবে,
সুখ বলে আর সেদিন প্রভু
এরচে বলো কী রবে?
সত্যই যেন করতে পারি
তোমার প্রেমের শীষ অর্জন,
মালিক তুমি হাসবে বলে
প্রাণটা দিবো বিসর্জন।
মেকি দ্বীন
এই যে অনেক লেবাসধারী
খানবাহাদুর জাল আলী,
চিল্লাইয়া মাত করছে কত
দল নিয়ে সব দালালি!
পীরকামেল আর মোকাম্মেলও
কেউ বা আবার কাদেরি,
সব ভুয়া-ভুল বলছে শুধু
পাক্কা ঈমান তাদেরই।
কেউ খেয়ে যায় তামাক-বিড়ি,
পান দিয়ে চুন সুপারি,
কেউ বলে মোর পীর সাহেবই
পার করিবে দু-পারই।
ধর্মটা আজ বড্ড হাসায়
ভণ্ডদের ওই আস্তানায়,
বিবেকবিহীন এই জাতি আজ
হাল ধরেছে খাস্তা নায়।
যন্ত্রণা
তুই তো ঠিকই বিদায় নিলি
সব ছেড়ে সব পর করে,
নতুন শাড়ি গয়না গায়ে
পালকিতে বেশ ভর করে।
কেউ দেখেনি সেদিন আমার
কী হয়েছে কলিজায়,
সইতে নারি বুকটা আজও
দগ্ধানো খুব জ্বলি যায়।
মুখ ফিরে আর দেখলি না তো
করলি না ভুল ক্ষমা যে,
জানিস কি তুই? এখন আমায়
মাওরা বলে সমাজে!
খুব ব্যথা মা! যায় না সওয়া
টান পরেছে সবরে,
তোর কাছে সব বলবো একা
রাত জাগি তাই কবরে।
একবারও কি ভাবলি না মা
তোর এ মানিক কীভাবে-
যন্ত্রণা আর দুখের আগুন
কেমনে কোথায় নিভাবে?
মনের তালা
তির খেয়ে বুক ঝাঁজরা তবু
বলছি না-তা জ্বালাই,
নুন ছিটায়া পোঁচ দিয়েছো
সেটাও না হয় ভালাই।
আবার নাকি দিচ্ছো ঢেলে
বদদোয়া সব বালাই!
তাতেই বা কী? মনটাকে তো
করছো ফালাফালাই।
বাইরে তুমি তুলসীপাতা
কিংবা খাঁটি মালাই!
অন্তরে ফাঁদ, প্রবঞ্চনার!
মনটা ভারী কালাই।
করবো না আর হৃদয়টাকে
নষ্ট প্রেমে ঝালাই,
ডাকবো না আর পণ করেছি
দিচ্ছি মনে তালাই।
তুই ঠিকানা
তোর বুকে ঘুম পাড়বো যেদিন
সব মায়া-প্রেম ছাড়িয়ে,
আপন করে আগলে রাখিস
হাত দুখানি বাড়িয়ে।
প্রাণপাখিটা উড়বে তখন
এই দেহখান ত্যাগ করে,
রাগ করে তুই দিসনে জাঁতা
হাত-পা, মাথা এক করে।
একের পর এক বিলিন হবো
তোর বুকে সব মিশিয়ে,
একলা রবো ভয় করি তাই
মারিসনে তুই পিষিয়ে।
এই দুনিয়ার মিথ্যে মায়া
মিথ্যে স্বাদের পিরিতি,
তুই তো আপন, তুই ঠিকানা
আহ্! কী নিয়ম, কী রীতি!
মন বলে
আকাশগঙ্গা, দূর নীলিমা
তার সাথে কি আর মানায়?
যার মুখের ওই মিষ্টিহাসি
চাঁদ, তারাকেও হার মানায়!
তার দু-চোখে যা ঝরে তা
ওই জোছোনাও অমন নয়!
এমন কিছুই হয়নি সৃজন
তার মত বা সমন্বয়!
হার মানে আর দিনের আলো
হাজার কোটি বচ্ছরও,
যার দু-হাতে হীরক জ্বলে
ঝলক মারে স্বচ্ছ রোঁ।
যার বলার ওই কণ্ঠে ঝরে
স্বর্গসুধা, মাধুর্য!
মন বলে তার জন্য ধরি
পবিত্র এক সাধুর জো!