ছড়া

নির্বাচিত ছড়া- শাজাহান কবীর শান্ত

ফুলেফুলে মিল
মেঘের সাথে মিশতে পারে দূর আকাশের নীল
নীলের সাথে মেঘের যেমন জমে ওঠে ভাব
ইচ্ছে আমার সাজাই জীবন ভরে উঠুক লাভ।
পায়ের তলে ঘাস
ছুঁয়ে দিলে মুচড়ে উঠে ফেলে দীর্ঘশ্বাস
তবু সেতো হয়না মলিন, হয়না কোনো রাগ
ইচ্ছে আমার ওদের সাথে দুঃখ করি ভাগ।
নদীর ভাঙা কূল,
ভাঙে- আবার কারো কাছে রক্তজবা ফুল।
যায় ছেড়ে আর আছড়ে ভাঙে কাশফোটা ওই তীর
ইচ্ছে করে গড়ি আমি ওদের পাশে নীড়।
পাখির ঠোঁটে গান
প্রকৃতিটার সজীব কোষে বান ডেকে যায় বান
বাতাস কেটে দুঃখ ভুলে দেখায় আলোর পথ
ইচ্ছে করে তেমন করে গড়ি ভবিষৎ।

কোথায় গেলো খুকি
খাবার এনে দিচ্ছি আমি
ঘরের কোণে উঁকি।
যেই ফিরেছি ঘাড়
খিল খিলখিল হাসির ছটা
পেছন দিকে কার!
ওই যে, আমার খুকি
দেখছে আমার দরজা খুলে
মাথাখানি ঝুঁকি।
খুকির কানে দুল
হাঁটলে দোলে- দেখতে লাগে
ফুটন্ত এক ফুল।

মনের ভেতর বিজয় মানে স্বাধীনতার সুখ
বারেবারে আনতে বিজয় পেতে দেবো বুক।
বুকের ব্যথা মনের ব্যথা একের যদি হয়,
শত্রু ভেগে আসতে পারে কাংখিত সে জয়।
ডিসেম্বরে এসেছিলো এমন করে দিন
চব্বিশে ফের বিজয় এলো শুধাতে তার ঋণ।
দামাল ছেলে চাইলে পারে অসাধ্য সব কাজ
পড়ার মাঝে দেখিয়ে দেয় রণাঙ্গনের সাজ।
একাত্তরের বিজয় মানে ডিসেম্বরের মাস
বিজয় মানে মনের ভেতর খুশির যত চাষ।
খুশী মানে দেশের প্রতি ভালোবাসা আর-
অভাব-জ্বরায় থাকলে মানুষ যাও পাশে যাও তার।

খুকু তোমার নামটি বড়ো,
– আদুরে,
খই ফেটানো কথা বলো
দাদুরে।
দাদু বলেন আপুমনি
খুকুরে,
খুকুর নাকি বাইরে তাড়ায়
কুকুরে।
ভাইয়া এলে কুকুরকে দেয়
তাড়িয়ে,
দুষ্টু খুকু হাসতে থাকে
দাঁড়িয়ে।
বাবা বলেন- আম্মু আমার-
রুবিনা,
আম্মু বলেন, না-পড়ে তুই
শুবি না!
দাদী খুকুর চুমুতে দেয়
ভরিয়ে,
তখন আসে চোখেতে ঘুম
জড়িয়ে।

বৃষ্টি আমার মনের ভেতর সৃষ্টি করে মায়া
মায়ার পাখি ডানা মেলে স্মৃতির ফেলে ছায়া।
ছায়ার ভেতর দেখি আমি আকাশ জ্বলে তারায়
তারার ভেতর মনটা আমার বৃষ্টি হয়ে হারায়।
বৃষ্টি আমার মনের ভেতর সৃষ্টি করে ভাবা
ভাবতে ভাবতে হৃদয় হলো আগ্নে’গিরীর লাভা।
লাভার ভেতর ভাবার অনেক ছাঁই জমানো গাদা
জমাট ছাঁইয়ের ভস্ম হলো বর্ষাজলের কাদা।
বৃষ্টি আমার মনের ভেতর সৃষ্টি করে ঋতু
ঋতুর চাপে একলা ঘরে হচ্ছি যেন থিতু।
ঘরের ভেতর পরের কথা উঠছে ফেপে মনে
ইচ্ছে আমার বলতে কথা প্রিয় তোমার সনে।

অরণ্য তার ছাড়লো পাতা কচি ডগায় ফুল
গাড়লো আসন ঢুকলো দেখি মাটির নীচে মূল।।
মূলের ডগা তুলছে লবণ, পানি, ভিটামিন
এমন করে কাটছে সময় বছর, মাসও দিন।
অরণ্য তার বিকট দেহে চাতাল ভরা সুখ
আকাশমুখো হাঁটার গতি উদ্যত তার মুখ
মুখের হাসি দেখলে ডাকে কেশ ছড়ানো মেঘ
আনতে পারে পরিবেশে শীতল হাওয়ার বেগ।
ফুল ফুটিয়ে ডাকতে থাকে পাপড়ি দুলে আয়
যত যত শত পথিক তার নীচে যে যায়।
অরণ্য তার চুলের ভারে সবুজ রাখে বন
ওরা ভালো থাকলে আমার ভালো থাকে মন।

আমরা ফুলের কুসুম পরাগ মুন্ডে থাকা গর্ভ
রেণু দিয়ে ফল বানিয়ে আকাশটাকে ধরবো।
আকাশটাকে রঙিন করে নীলের ভাজে পুরবো
পাতাল-গীরি-সূর্য হবো জ্ঞানের আলো ছুড়বো
অজানা সব রহস্যকে সামনে তুলে আনবো
সামনে এলে বাঁধার প্রাচীর তুমুল আঘাত হানবো।
আমরা নবীন রক্ত তাজা ফুটতে থাকা রক্ত
নরম থেকে গরম হবো জুটবে আরও ভক্ত।
ভক্ত নিয়ে মুষ্টি ধরে সমুখপানে লড়বো
সবুজ শ্যামল সোনার এদেশ রঙিন করে গড়বো।
আমরা হলাম বীরের জাতি বুক ফুলিয়ে থাকবো
নতুনরূপের স্বদেশ তোমার বুকের ভেতর আঁকবো।

শীতকালে কী কী হয়? ঝরে পড়ে পাতা
মেঘেদের তালগোল পেকে যায় মাথা।
ঝুপ ঝুপ টুপটুপ বৃষ্টিরা ঝরে
খপ করে শীত এসে যাকে পায়, ধরে!
শীতকালে কী কী হয়? শিশিরের পানি
কুয়াশায় চোখে যেন পড়ে যায় ছানি।
ঘাসজুড়ে মুক্তোরা টল-টল করে
তখন তো কাঁথা মুড়ে থাকা চাই ঘরে।
শীতকালে কী কী হয়? ঠকঠক কাঁপে
বুড়ো-শিশু পড়ে যায় একদম চাপে।
গা’য় ব্যথা পা’য় ব্যথা ভোগ করে জ্বরে
সর্দিতে খুসখুস নাক শুধু ঝরে।
শীতকালে কী কী হয়? রস খেজুরের
গাছি ভাই কাঁচি দিয়ে করে দেয় বের।
পুরো গাঁয় ভরে যায় সবজির চাষে
শীতকাল এইভাবে চুপ করে আসে।

সুযোগ পেলে পড়ার মাঝে
এই ছেলে দেয় ফাঁকি
ফোন হাতে নেয় ড্রয়ার থেকে
কেউ দেখে না তা-কি?
আব্বু এসে দেখেন বিরাট
ছেলে পড়ার ঝড়,
ফোনটা রেখে পড়ার স্বরে
ভরাট হলো ঘর!
পড়ার কথা মিথ্যা বলে
যে ছেলে দেয় ফাঁকি
এমন ছেলের কাছে থেকে
চলো দূরে থাকি!

শীত আমাকে করতে কাবু বুকের ভেতর ছু’লো
গরমকালের বেগুনগুলো দেখছি তাজা মুলো।
মুলোর সাথে দেখছি পালং, বাঁধাকপি গাজর
শীত তখনও ঢুকছে ভেঙে বুকের ভেতর পাজর।
শীত আমাকে করতে কাবু ভেংচি কেটে হাসে
করছে কাশি ওঠা-নামা বুকের ভেতর শ্বাসে।
এত কাশি সারে না তো তুলসীপাতার রসে
পুরনো হিসেব খাতা খুলে লেপ ফুড়ে সে কষে।
শীত আমাকে করতে কাবু এলো বরফ তুলে
এমন সময় কপাল দোষে গোসল গেলাম ভুলে।
আমার সাথে পালিয়ে বেড়ায় সূর্য কোথায় বাড়ি
শীত আমাকে করলো কাবু কাঁপছে আরও মাড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *