কথাসাহিত্যিক জয়শ্রী দাসের জন্মদিন আজ

কথাসাহিত্যিক জয়শ্রী দাস। আজ তার জন্মদিন। জয়শ্রী দাস ১৯৭৯ সালের ২১ অক্টোবর পটুয়াখালী জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ওই দিনটি ছিল লক্ষ্মী পূর্ণিমা, লক্ষ্মীপূজার দিন। এবারও লক্ষ্মী পূর্ণিমার জোছনার আলোয় আলোকিত হচ্ছে তার জন্মবার্ষিকী।
জয়শ্রী দাসের বাবার নাম সত্য রঞ্জন দাস। মায়ের নাম সুনীতি সুধা দাস। তার দুজন শিক্ষক ছিলেন। পটুয়াখালী শহরে তাদের দোতলার বাড়িতে একটা লাইব্রেরি ছিল। বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র হওয়ায় তার সংগ্রহে ছিল কয়েক হাজার বই। তাই বাড়িতে বইয়ের গন্ধে ভরপুর ছিল। সবার ছোট হওয়ার ফলে এবং ভাইবোনদের সঙ্গে বয়সের ব্যবধান হওয়ায় বইপড়া ছাড়া তেমন কোনো সঙ্গী ছিল না তার। বই পড়তে পড়তেই এক সময় নিজের ভেতর থেকে লেখার তাড়া চলে আসে।
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ হয় তার। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হতে থাকে তার লেখা গল্প। প্রথমে স্কুল ম্যাগাজিনের সম্পাদনা ও গল্প লেখা শুরু করলেও প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের একুশের বইমেলায়। উপন্যাসটির নাম ‘একটি অন্যরকম গল্প’ ২০১৯ সালে ‘সে এবং দ্বিতীয়’, ২০২০ সালে ‘সদয় অবগতি’ এবং ২০২১ বইমেলায় উপন্যাস প্রকাশ হয় ‘তুমি আছো কবিতা নেই’। তিনি গল্প-উপন্যাস লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত গল্প ও কলাম লিখছেন।
শৈশব থেকেই জয়শ্রী দাস মেধার পরিচয় দিয়ে আসছেন। পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পটুয়াখালী একেএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স পাস করেন। পরে এমবিএ ডিগ্রিও অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর তিনি সদ্য এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
জয়শ্রী দাস পেশাগত জীবনে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনে (বিএসটিআই) উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
পারিবারিক জীবনে তার স্বামী উত্তম কুমার দাস। তিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তাদের বড় ছেলে ঋদ্ধি মনন এবং ছোট ছেলে আর্য অনুরণনকে নিয়ে সুখের সংসার। জয়শ্রী দাসের এক ভাই। তিনি পেশায় ডাক্তার। তার নাম ড. সিদ্ধার্থ শংকর দাস। তার দুই বোন। একজন অর্চনা মনি দাস। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা। অন্যজন অর্পিতা দাস। তিনি আইনজীবী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে মাল্টিন্যাশনালে কর্মরত আছেন। জয়শ্রী দাস সবার ছোট।
জয়শ্রী দাস বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া গান শুনতে পছন্দ করেন। রবীন্দ্রসংগীত পছন্দ, দেবব্রত বিশ্বাসের গান ও পুরনো দিনের গান ভীষণ ভালো লাগে তার। প্রার্থনা সংগীত পছন্দ করেন। প্রিয় লেখকের তালিকায় আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বুদ্ধদেব গুহসহ অসংখ্য নাম। জয়শ্রী দাস খেতে ভালোবাসেন ভাত, বাদাম ভর্তা, কচুর শাক, ইলিশ মাছ ভাজি আর ডাল।
জন্মদিনের অনুভূতি জানতে চাইলে জয়শ্রী দাস বলেন, ‘বাড়ির ছোট মেয়ে হওয়ার কারণে সবাই খুব বেশি আদর করতেন। তাই জন্মদিনের গুরুত্বটা সবার কাছে একটা সময় খুবই বেশি ছিল। এখন বড় হয়েছি, দায়িত্ব ও কর্তব্য বেড়েছে। জন্মদিনের চেয়ে কাজের গুরুত্বটা আমার কাছে বেশি মনে হয়। যেন জন্য পৃথিবীতে এসেছি, সে কাজটা কি সঠিকভাবে করতে পেরেছি? আজ অফিসে করব। নিজের মতো করে কিছু লিখব, নিজের মতো করে কিছু সময় ঘুরব, একান্ত কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলব। মজার বিষয় হলো এ দিনটাতে আমি সারাদিন কেমন অস্থির থাকি, সব সময় মনে হয় সবাই এত ভালো কেন! সবাই আমাকে এত ভালবাসে কেন!’
মেবাধী মানুষ বলে কথা কম বলতে পছন্দ করেন। কথায় আছে না, কথা কম কাজ বেশি। তিনি কথা কম বলে কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন। চাকরি ও সংসারের কাজের ব্যস্ততার মাঝে নিয়মিত লেখালেখি করার চেষ্টা করেন। মানবিক সম্পর্কের এই দুর্দিনে সচেতনতাবোধ তৈরি করতে তিনি লেখার ভেতর তুলে ধরেন। গভীর রাতে লিখতে বেশি পছন্দ করেন।
প্রিয় ব্যক্তিত্ব বাবা সত্যরঞ্জন দাস এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম।
জয়শ্রী দাস তার নিরন্তর সাহিত্য সাধনায় ইতোমধ্যে নির্মাণ করেছেন নিজস্ব এক শিল্পভুবন। মানুষকে জাগ্রত করেন তার লেখা দিয়ে। তিনি স্বপ্ন দেখেন রাগবিহীন একটা পৃথিবী দেখতে। যেখানে সবাই পরস্পরের শুধুই প্রশংসা করবে। জয়শ্রী দাস সব সময় মনের মধ্যে শ্রেণি বৈষম্য বিহীন একটি সমাজ ব্যবস্থার ইচ্ছা পোষণ করেন। তিনি ভাবেন পৃথিবীর সব মানুষ সমান। পৃথিবীর সব মানুষ মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করবে। সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসবে। জগতে যেন কারও সাথে কারও থাকে না কোন দ্বন্দ্ব, হয় না যেন কোন সংঘাত এবং মানুষের জন্মই যেন হয় মানুষের কল্যাণের জন্য। পৃথিবীর সবাই মানবিক মানুষ হয়ে উঠুক- এটাই তার জন্মদিনের একমাত্র চাওয়া।
মানবিক মানুষ হিসাবে আপনাকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *