জন্মদিবসের শুভেচ্ছা শিশুসাহিত্যিক আহমেদ রিয়াজ-কে

তিনি গল্প বুনিয়ে। কথার পিঠে কথা দিয়ে গল্প বোনেন। কত্ত রকম গল্প! ফুলের গল্প, পাখির গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, একুশের গল্প, বাংলাদেশের গল্প। যে কোনো কিছু দিয়ে গল্প বুনতে পারেন।
মূল নাম বি এম রিয়াজ আহমেদ। সার্টিফিকেটে জন্মসাল ১৯৭৪ সালে হলেও জন্ম ১৯৭২ সালে। জন্মতারিখ ২৯ জানুয়ারি। লেখাপড়া ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী স্কুল-মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ঐতিহ্যবাহী এ কারণে, ২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রথম মিরপুরে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম। ১৯৮৮ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি উত্তীর্ণ হয়েছেন এ স্কুল থেকেই।
লেখালেখির শুরু কলেজে পড়ার সময়। তেজগাঁও কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বন্ধু ও সহপাঠী প্রশান্ত রায়ের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে ছড়া দিয়ে শুরু। ১৯৮৮ সাল থেকে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। লিখছেন প্রায় তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। যদিও শুরুটা করেছিলেন ছড়া দিয়ে, কিন্তু গল্পলেখক হিসেবেই তাঁর পরিচিতি। ছড়া ও গল্প ছাড়াও লিখছেন প্রবন্ধ, উপন্যাস, ফিচার, বই আলোচনা, অনুবাদ। কেবল পড়তে শিখেছে, এমন শিশুদের জন্য লিখছেন যুক্তবর্ণবিহীন গল্প। দেশে যুক্তবর্ণবিহীন গল্প তিনিই আবার নতুন করে লিখতে শুরু করেন।
প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছিল শিশুসাহিত্যিক মোস্তফা হোসেইনের হাত ধরে ২০০১ সালে। বইয়ের নাম ‘গল্পকুমার’। প্রকাশক বর্ণবিচিত্রা। ২০২১ সালে এসে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২০০।
কাজ করেছেন রুম টু রিড, সিসিমপুর, সেভ দ্য চিলড্রেন, ব্র্যাকসহ বেশ কিছু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং রুম টু রিডের উদ্যোগে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য লিখেছেন ডেকোডেবল বই। প্রথম শ্রেণির ডেকোডেবল বইয়ের লেখক হিসেবেও কাজ করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সেভ দ্য চিলড্রেনের উদ্যোগে ২০১৭ সালের জন্য প্রকাশিত প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য দুর্যোগ নিরাপত্তা বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে দুটি করে চারটি গল্প লিখেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন প্রথম অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস-লাহোর টু গোপালগঞ্জ।
লেখালেখির জন্য প্রথম স্বীকৃতিটাই মিলেছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী থেকে। ২০০৯ সালে (বঙ্গাব্দ ১৪১৫) ‘আঙ্কেল গ্রেনেড ও তার দল’ বইয়ের জন্য পেয়েছেন ‘অগ্রণী ব্যাংক-বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার’। গল্পের জন্য চারবার সৃজনশীল শাখায় ‘মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন-২০১১, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। ২০১৪ সালে ‘হাঁসজারুদের গল্প’ বইয়ের জন্য সাধারণ গদ্যে ও ২০১৬ সালে ‘একাত্তরের বীরবিচ্ছু’ বইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে পেয়েছেন ‘এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’। ২০১০ সালে ‘দুই গোয়েন্দা এক রহস্য’ বইয়ের জন্য সেরা রহস্য ও ২০১৪ সালে ‘হাঁসজারুদের গল্প’ বইয়ের জন্য পেয়েছেন পরিবেশ বিষয়ক সেরা লেখক হিসেবে ‘ছোটদের মেলা পুরস্কার’। ২০১৯ সালে ‘একাত্তরের কমলপ্রভা’ বইয়ের জন্য পেয়েছেন ‘আবু হাসান শাহীন স্মৃতি পুরস্কার। ২০১৮ সালে ‘শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী পদক’ ও ২০২০ সালে পেয়েছেন ‘মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার’।
হিলাল ফয়েজী সম্পাদিত দেশের প্রথম পাক্ষিক কিশোর পত্রিকা ‘কিশোর ভুবন’র নির্বাহী সম্পাদক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার শিশুকিশোর প্রকাশনা ‘টুনটুন টিনটিন’ ও স্কুল ভিত্তিক প্রকাশনা ‘ক্যাম্পাস’র বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর হাত ধরেই দেশের একসময়ের খ্যাতিমান পত্রিকা ‘কিশোর বাংলা’ ৩৭ বছর পরে নতুন করে প্রকাশ হয়। নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কিশোর বাংলাকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তিনি। কিশোর বাংলা ছেড়ে দিয়ে বর্তমানে শুধু লেখালেখি ও কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদনা নিয়ে তাঁর ব্যস্ততা। গুণী এই মানুষটির জন্মদিনে কাব্যশীলনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা রইল।

২ thoughts on “জন্মদিবসের শুভেচ্ছা শিশুসাহিত্যিক আহমেদ রিয়াজ-কে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *