শিল্প-সংস্কৃতি

কবি শাহীন রেজা রাসেলের জন্মদিনে কাব্যশীলনের শুভেচ্ছা

কবি শাহীন রেজা রাসেলের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২৭ এপ্রিল মাগুরা জেলার শ্রীপুরে। বাবা আব্দুর রশীদ বিশ্বাস ছিলেন মাগুরার শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
শ্রীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে রাসেল ভর্তি হন শ্রীপুর এম.সি. পাইলট হাইস্কুলে। সেখান থেকেই ২০০২ সালে এস.এস.সি পাশ করেন। ২০০৪ সালে শ্রীপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন এইচএসসি। ২০০৫ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা ধরণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জোরালো অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাসেল হয়ে ওঠেন ক্যাম্পাসের অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। ডিপার্টেমেন্টের সকল সাংস্কৃতিক আয়োজনে, স্ট্যাডি ট্যুরে রাসেল ছিলেন অপরিহার্য। ক্যাম্পাসে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন, লোকজ যাত্রাপালায় অভিনয় আবার কখনো নির্দেশনায় মেতে থেকেছেন। আড্ডায়, গানে, পথনাটকে মাতিয়ে রেখেছেন ক্যাম্পাস। শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে কর্মরত আছেন বাংলাাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক হিসেবে। ছোটবেলায় ছড়া লেখার মধ্য দিয়ে লেখালেখির সূচনা। এখন পর্যন্ত বেরিয়েছে ৪টি কাব্যগ্রন্থ। ২০০৮ সালে প্রকাশ হয় ‘ছায়ানারী’। ২০১৫ তে ‘অপরুপ জলকণ্যা ও অন্য যুবক’। ২০১৮ তে প্রকাশ হয় ‘ভুল ফাগুনে আগুন ঢেলে’। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ হয়েছে ‘মন গহীনে বিরান বাড়ি’।
লিখেছেন ৪ টি মঞ্চনাটক, ১৪ টি পথ নাটক। লিখছেন গান, দিচ্ছেন সুর। আবার কখনো আড্ডায় হয়ে উঠছেন অপ্রশিক্ষিত দরাজ গলার গায়ক। কখনো রঙ তুলিতে ফুটিয়ে তুলছেন মনের ভাবনা। গ্রাফিক ডিজাইনে দেখিয়েছেন অসাধারণ নৈপূন্য। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য এ পর্যন্ত করেছেন ৩ সহস্রাধিক ডিজাইন। তাঁর ডিজাইন পৌছে গেছে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও। ২০০৯ সালের ৪ নভেম্বর রাসেল প্রতিষ্ঠা করেন তীরন্দাজ নাট্যদল। হুমায়ুন আজাদের দুটি গ্রন্থ অবলম্বনে তীরন্দাজ এর প্রথম এবং দুঃসাহসিক মঞ্চনাটক ‘অনৈতিহাসিক’ও তারই লেখা। সে নাটকে অঞ্চলিক নেতা আকমাল এর চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি তীরন্দাজ মঞ্চে এনেছে শাহীন রেজা রাসেল রচিত নাটক ‘রক্তঋণ’। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মঞ্চায়িত নাটকটিতে রাসেল তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং তার পরবর্তী কিছু অজানা ইতিহাসকে। এ নাটকে হুইল চেয়ার নিয়েই তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে দক্ষতার সাথে অভিনয় করেছেন। ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি রাসেল প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও একমাত্র পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সংগঠন “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদ”। রাসেলের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় এ সংগঠন চালু করে “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত নিরাপত্তা” শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। যেখান থেকে এখন পর্যন্ত ১১০০ জনকে প্রশিক্ষিত পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর তার জন্ম জনপদ মাগুরার শ্রীপুরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধুদের সাথে গড়ে তোলেন প্রজ্বলন নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনটি মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, গুণী শিক্ষক ও কৃতি শিক্ষার্থী সম্মাননা, বৃক্ষরোপন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, দুঃস্থদের মধ্যে গবাদি পশু বিতরণ, দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ, হেলথ্ ক্যাম্প আয়োজন, স্বেচ্ছায় রক্তদান, স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে জ্ঞান উৎসব আয়োজন, বাউল সন্ধ্যা আয়োজন, গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠিখেলা আয়োজন সহ নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। ২০১৮ সালে সংগঠনটির একযুগ পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে তিনি আবৃত্তি নির্ভর সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বৈঠক’ এর সভাপতি হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন। দায়ীত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও। শাহীন রেজা রাসেল কে নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো, কালের কন্ঠ সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে।
এই বিপূল কর্মযজ্ঞের মধ্যেও সু কঠিন বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক বিষাদের দেয়াল। সে দেয়ালের নাম বেকার মাসকুলার ডিস্ট্রফি। এক অনিরাময়যোগ্য প্রানঘাতি রোগ। যে রোগ রাসেলকে শারিরীরকভাবে হুইলচেয়ারের গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে পারলেও নষ্ট করতে পারেনি তার কর্মোদ্দমকে। আটকাতে পারেনি অগ্রযাত্রাকে। ক্রমাগত অকার্যকর হতে থাকা শরীরযন্ত্র আর মৃত্যভয়কে জয় করে এগিয়ে চলেছে রাসেল। কখনো কবিতায়, কখনো ছবি আঁকায়, কখনো গানে, আবার কখনো বা আমাদের হতাশা দুর করবার মহৌষধ হিসেবে। আমাদেরকে ক্রমাগত স্বপ্ন দেখাতে। রাসেল স্বপ্ন দেখে একটি “সাহসের যাদুঘর” তৈরির। সারা পৃথিবীর সে সকল মানুষ যারা স্টিফেন হকিং এর মতো নানা শারিরীক প্রতিকূলতা পেরিয়ে অথবা অটিজম কে মোকাবেলা করে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে তাঁদের গল্প নিয়ে, ব্যবহৃত জিনিষপত্র নিয়ে রাসেল গড়ে তুলবে এই জাদুঘর। যে জাদুঘরের এক প্রান্ত দিয়ে কোন হতাশ মানুষ প্রবেশ করলে অন্য প্রান্ত দিয়ে আশাবাদি হয়ে বের হবে। সাহসের জাদুঘরের এই উদ্যোক্তা আমাদের কাছে সাহসের যাদুকর। এই যাদুকর আমাদের মাঝে বেঁচে থাক আরো শত সহস্র বছর। আশার আলোকবর্তিকা হয়ে। আমাদের সবার ভালোবাসার রাসেল হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *