গুচ্ছ কবিতা সৈয়দ নূরুল আলম
প্রেম আর আগুন
কবিতায় কেউ খোঁজে প্রেম, কেউ খোঁজে আগুন
রবীন্দ্র কবিতা যেখানে প্রেমের
নজরুল সেখানে আগুনের
প্রেম আর আগুনের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হয়
দ্রুপদী কবিতা, কখনো ক্লাসিক নাটক
কখনো-বা জীবনঘেষা চলচ্চিত্র।
এভাবে জেগে আছে রবি, ছেয়ে আছে নজরুল
থাকবে যতদিন পাখি ডাকবে, বাতাস বইবে
বৃষ্টি নামবে অই দূর গাঁয়।
ঘরে ঘরে বোশেখ
ঘরে ঘরে বোশেখ, বোশেখে ভিন্নতার ছোঁয়া
দিনটি আনন্দ উচ্ছ্বাসে কাটাতে ব্যস্ত নারী-পুরুষ শিশু-কিশোর, কাগজ কুড়ানী, সব বয়সী মানুষ৷ সকালে পান্তা খাওয়ার রেয়াজ সে বহুদিনের
কড় কড়ে ইলিশ ভাজা, শুকনা মরিচ পোড়া, শুঁটকি ভর্তা, চাক চাক পেয়াজ কাটা,
বেগুন ভর্তা, জিহ্বা লাল করা মরিচ পোড়া ভর্তা নানা পদের ব্যঞ্জনার যোগ খাবারের পাতে৷
হঠাৎ বৈশাখী ভাতায় সচল হয় স্থবির অর্থনীতি
একদিনের জন্য হলেও ভুলে যায় সবাই তথ্য-উপাত্তে কতো গড়মিল দেশে-সংসারে।
৩২ নম্বর বাড়ি অথবা ধানমন্ডি লেক
আগন্তুক খোঁজে ৩২ নম্বর বাড়ি
অথবা ধানমন্ডি লেক
কিন্তু কোথায় ৩২ নম্বর বাড়ি
বা ধানমন্ডি লেক
একটুও খুঁজে পায় না
গোপালগঞ্জ – কাশিয়ানি- চাপ্তা নিবাসী
বৃদ্ধ জহুর আলি।
চাপ্তা বাজারে মতির চায়ের দোকানে
চা খেতে খেতে জহুর আলি জেনেছিলেন
ধানমন্ডি লপকের পশ্চিম পাড়ে
৩২ নম্বর বাড়িতে শেখের বোট থাকে
লেক আর বাড়ি, একটা পেল
আরেকটা পেতে কষ্ট হবে না।
তাই শেখের বোটকে এক নজর দেখতে
জহুর আলি অরফে সানা মীর
চাপ্তা থেকে ছুটে এসেছে এই ঢাকা শহরে।
যদিও জহুর আলির একটা চোখ গেছে
অনেক আগে আরেকটা যাই যাই করছে।
একানব্বই বছর সাত মাস বয়সী
জহুর আলি অরফে সানা মীর
ঘোনাপাড়া থেকে মধুমতি পরিবহনে
গাবতলী বাসষ্টান্ডে এসে নামে
গন্তব্য ৩২ নম্বর বাড়ি অথবা ধানমন্ডি লেক।
রাসেল স্কোয়ারে এসে
জহুর আলি অরফে সানা মীর
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, লেকে পানি কোথায়?
শুধু রক্ত আর রক্ত।
৩২ নম্বর বাড়ি থেকে আসা
এ রক্তে সর পড়ে আছে
যেমন জহুর আলির কালো গাইয়ের
সদ্য জ্বালানো দুধে
মোটা সর পড়ে থাকে।
কী হবে অবশেষে
এমন মৃত্যু মানা যায় না, উত্তাল সারা দেশ,
দেশের বিবেগবান মানুষ পথচারি, রেলযাত্রী
স্কুলের ছাত্র, মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রী
এমনকি বাজারের বেশ্যাও।
গাছের পাতা নড়েনি, সকালে কা কা ডাকতে ভুলে গেছে কাক
কবুতর বের হয়নি নিজ খোপ থেকে, লজ্জাপতি
পাতা মেলেনি, শরমে ঢেকে আছে মুখ ৷ বাবার
চোখে অশ্রু দেখে বৃষ্টি থমকে আছে খানিকটা লজ্জায়৷ নুসরাত এখন শুয়ে আছে দাদীর পাশে,
গোলাপজল ছিটানো বিছানায়।
প্রতিপক্ষকে কঠিন চাপে রেখে সোচ্চার জনরোষ-জনমত৷
তার পরও প্রশ্ন কী হবে অবশেষে, তনুর কথা মনে পড়ে৷
অন্য এক বোশেখ
আজ ভোরে পাখি ডাকেনি, বটমূলে ছিল না কোনো পদধ্বনি!
কোলাহল থেমে সুনসান শাহবাগ মোড়, টিএসসির সড়ক দ্বীপ
রাস্তাগুলো শুয়ে আছে একাকী, বড়ই বেমানান বোশেখ ১৪২৭
মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়া, মানুষ ছাড়া, ভালাবাসাহীন এক বোশেখ
তুলতুল- মায়া- রিতা ভার্সিটির সব বন্ধুরা লাল-সাদা শাড়ি পড়ে
চুলে গুজেছে কাঁচা গাঁদা, হাতে লাল চুড়ি, গলায় বৈশাখী গান
তবু ওদের কাছে আসে না অভিমানী বোশেখ, ওদের প্রার্থনা
সব জরাজীর্ণ, অশুভ, অমঙ্গল থেকে মুক্ত করো প্রিয় স্বদেশ
মুক্ত করো মন। ছেড়ে দাও অবরুদ্ধ, গৃহবন্দী বোশেখ।
খুব ভাল লেগেছে। বানান প্রসঙ্গেঃ দ্রুপদী না হয়ে ধ্রুপদী হবে, মনে হয়।