কবিতা সকলের জন্য নয় কবিতা সেই শ্রেণির মানুষের জন্য যারা চিন্তাশীল- ভাবনাশীল।। বঙ্গ রাখাল
দ্বিতীয় দশকের একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি ও গবেষক। আবহমান বাংলার পল্লী উপদান দিয়ে যিনি এক ঘোর লাগা সৌন্দর্য উপস্থাপন করেন কবিতায়। তবে কবিতাকে অতিজটিল এবং বোধগম্যহীন করে তুলতেও রাজি নন তিনি। ঝিনাইদহ জেলায় ১২ জুন জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গ রাখাল। সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা স্কুল অফ ইকনোমিকস থেকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইকোনমিকস ডিগ্রী অর্জন করেন । অন্যদিকে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে গণহত্যার উপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী অর্জনসহ বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সদস্য। বর্তমানে কবি সমাজসেবামূলক একটা বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত। কবি বঙ্গ রাখালের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-
সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রবন্ধ, ২০১৫), লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (গবেষণা, ২০১৬), মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (প্রবন্ধ, ২০১৭), হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (কবিতা, ২০১৮), মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৮), অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (সম্পাদনা, ২০১৯), পাগলা কানাই ও তাঁর তত্ত্ব দর্শন (সম্পাদনা, ২০১৯), লণ্ঠনের গ্রাম (কবিতা-২০১৯), যৈবতী কন্যা ইশকুলে (কবিতা, ২০২০), কবিতার করতলে (প্রবন্ধ, ২০২০), অন্ধ যাজক (কবিতা-২০২১), ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (অভিসন্দর্ভ)
তিনি প্রবন্ধে পেয়েছেন-আবুল মনসুর আহমদ পুরস্কার ২০২০ এবং জলধি সম্মাননা- (কবিতা ২০২১)
সম্পাদনা করছেন ছোট কাগজ : নিহারণ, শঙ্খধ্বনি। ওয়েবম্যাগ কাব্যশীলনের জন্য এই তরুণ কবি ও গবেষকের সঙ্গে সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন কবি শব্দনীল।
কাব্যশীলন: কবি বঙ্গ রাখালের কাব্যচর্চার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলুন-
বঙ্গ রাখাল: এক এক জনের কাব্যচর্চার ধরন এক এক রকম। আমার কল্পনা- আমার ভাবনা-চিন্তা নিতান্তই আমার মত হবে নিশ্চয় অন্য কারও মত হওয়ার কথা না। যেমন: আমি আমার কবিতার মধ্যে এক ধরনের ঘোর রাখতে পছন্দ করি আবার কখনো কবিতাকে অতিজটিল এবং বোধগম্যহীন করে তুলতেও রাজি না। কেননা আমার কবিতায় তো আমার ভাবনা একই সাথে আমার চিন্তাও বটে। কবিতা যদি সামান্য হলেও চিন্তার উন্মেষ না ঘটাই তাহলে সেই কবিতা লেখে লাভ কী? তবে হ্যাঁ। অনেক কবিতা আছে যে কবিতায় অতিসারল্য ভাবে বলে কিন্তু দার্শনিকতার জগৎ থাকে অনেক গভীরে মূলত আমার কবিতার চর্চা এমনই। আর আমার কবিতার অন্য একটা ব্যাপার আমি মূলত আমার কবিতায় মধ্যে শতেক গল্পকে, চিন্তাকে উপস্থাপন করারই চেষ্টা করে থাকি। আমাদের মস্তিষ্ক যেমন একদিকে তাকিয়ে থাকা মানে সেদিকেই নিজেকে নিয়োজিত রাখে না, একই সাথে অন্য কাজও করে থাকে তেমনই ভাবে আমার কবিতার মাঝে বলতে চেয়েছি আমাদের যন্ত্রণা বা দুঃখ কষ্টের কথা। মূলত নিজের জীবনের কথায় তো বলতে এসেছি আর প্রত্যেকের জীবন নিশ্চয় এক না। যেহেতু আমাদের প্রত্যেকের জীবন ভিন্ন সেহেতু কবিতাও ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক এতে কোন সন্দেহ নেই।
কাব্যশীলন: কবিদের ভেতর একধরনের বিতর্ক আছে, অনেক বলেন কবিতা সকলের জন্য, আবার অনেকে বলেন কবিতা সকলের জন্য নয়। আপনার কোনটি মনে হয়-
বঙ্গ রাখাল: কবিতা আসলে সকলের জন্য নয়। কবিতা মূলত লেখা হয় সেই শ্রেণির মানুষের জন্য যারা সামান্য হলেও চিন্তাশীল কিংবা ভাবনাশীল। স্পষ্ট করে বলতে গেলে কবিতা বিশেষ এক শ্রেণির জন্য। আমরা আসলে ঐ রাস্তার ছেলেকে নিয়ে রাস্তার কবিতা লেখতে পারি আসলে তার অধিকার বা ন্যায্যতা নিয়ে কবিতা লেখি কিন্তু আমরা কি সত্যি তার জন্য কবিতা লেখি। আর যারা বলেন আমি আসলে শোষণের বা অবহেলিত মানুষের জন্য কবিতা লেখি সে আসলে ভণ্ডামী করে নতুবা মিথ্যা বলে। যে একটা পক্ষকে বেছে নেয় তখনই বুঝবেন ওর মধ্যে ঝামেলা আছে। তাই কবিতা সকলের জন্য না। তবে একটা কবিতা তখনই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠে যখন সেটা মানুষের মুখেম, মুখে ফেরে। আসলে ভাল কবিতা আর জনপ্রিয় কবিতা আবার এক না। একজন শ্রমিকের কাছে কবিতার কি এমন মূল্য আছে- তার কাছে মূল্য ভাতের। কারণ এই ভাতের জন্যই ঘরে স্ত্রী সন্তান অপেক্ষা করছে।
কাব্যশীলন: নর-নারীর আকাঙ্খা, কামনা-বাসনাকে কবিতায় চিত্রায়িত করলে অনেকে অশালীন মন্তব্য করেন, তির্যক চোখে তাকান। এই মন্তব্য ও তির্যকতার যৌক্তিকতা কতটুকু আছে-
বঙ্গ রাখাল: আসলে যদি সত্যিকার অর্থেই বলতে হয় তাহলে বলতে হয় যে নর-নারীর কামনা বাসনা বা আকাঙ্খা ছাড়া কি আর আছে আমাদের জীবনে। আর যারা নর-নারীর কামনা বাসনাকে আশ্রয় করে কবিতা লেখেন তারা তো মূলত আপনার আমার মুখোশকেই উন্মোচিত করে দেন। আমি কেন বলতে পারব না। একজন নারী পুকুরে বুকের মধ্যে হাত দিয়ে তার স্তনকে পরিষ্কার করছে আবার আমরা গ্রামে অনেক পুরুষকে দেখেছি পুকুরের পারে গাছে হেঁলান দিয়ে নারীদের এই পুকুরস্নান দেখছে। আসলে এটেই শ্বাশত। তাইলে এটা আমার কবিতায় কি চিত্রায়িত করতে পারব না। কিংবা আমি সমাজের নোংরামীকে কি আমার কবিতায় বলতে পারি না? কারণ আমরা জানি কবিরা তো মানুষের পশুত্ব চেহারাকে ভিতর খুঁড়ে বের করে আনেন মানুষের সম্মুখে। আর যারা তির্যক চোখে তাকায়- তাদের আতে ঘা লাগে বা তারা অসুস্থ, বিকৃত মানসিকতার মানুষ। আমরা কি বলব আমি আমার স্ত্রীকে চুম্বন করি না, তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয় না। কোন নারীর দিকে তাকায় না। আসলে আমরা সবাই এই কাজগুলো করি এবং নিজেকে অন্যের কাছে সৎ, ভাল, যোগ্য করে প্রমাণিত করতে সর্বদা ব্যস্ত। কিন্তু কবিরা সমাজের সেই চিত্রকেই তো তাদের কবিতায় চিত্রায়িত করেন এতে তাদের লাগাটা স্বাভাবিক। আর আপনি আসছেন বলতে এসে কে তির্যক চোখে তাকালো কিংবা ভাল চোখে তাকালো এটাতো দেখার দরকার নাই। নিজের কাজটা নিজের মনে করে করাটাই উত্তম।
কাব্যশীলন: স্বাধীনতার পরবর্তীকালীন সময়ে বাংলা সাহিত্যের কোন দশককে পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন-
বঙ্গ রাখাল: পাঠকের জন্য সব দশকই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রত্যেক দশকেই কেউ না কেউ ভাল লিখেছেন আর প্রত্যেকেই একই কবিতা লেখেননি নিশ্চয়। তাই পাঠককে খুঁজে খুঁজে প্রত্যেকের লেখায় পড়া উচিত। তখন সচেতন পাঠক মাত্রই নিজের জন্য কোন দশক গুরুত্বপূর্ণ তিনি তা খুঁজে নিতে সক্ষম হবেন।
কাব্যশীলন: আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছেন। আপনার গবেষণার কর্যক্রম কতটা প্রভাব বিস্তার করবে বলে মনে করেন নতুন প্রজন্মের কাছে-
বঙ্গ রাখাল: আমার কাজ কতটা প্রভাব বিস্তার করবে নতুন প্রজন্মেকে সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আমি কতটা নিষ্ঠার সাথে কাজটি করতে পেরেছি। তবে এটাই বলতে চাই যে কাজগুলো কখনো করা হয়নি বা হলেও সামান্য এই কাজগুলোই আমি করেছি। আর এই কাজগুলো নিশ্চয় আমাদের নতুন প্রজন্মকে সামান্য হলেও ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের চিত্র তুলে ধরবে এবং তারা বুঝতে পারবে তাদের দেশজন্মের করুণ ইতিহাস। সাধারণ মানুষও জীবন দিয়ে আমাদের আবাসনকে পক্ত করে দিয়ে গেছেন। এই ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মকে ভাবিত করবে এবং সামান্য হলেও দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জাগাবে।
কাব্যশীলন: লোকজ ধারা কি আমাদের সাহিত্যের মূল উপদান বলে মনে করেন-
বঙ্গ রাখাল: অবশ্যই মনে করি। এটাকে মনে না করার তো কিছু দেখি না। যারা মনে করেন না তারা নিজের শিকড়কেই অস্বীকার করে। যাকে বলে কাকের ময়ূর বেশ আর কি।
কাব্যশীলন: আজকের বঙ্গ রাখাল হতে কার প্রভাব বেশি ছিলো বলে মনে করেন ঝিনাইদহের প্রকৃতি নাকি গণবিশ্ববিদ্যালয়-
বঙ্গ রাখাল: যদি এক কথায় বলতে বলেন তাহলে বলব ঝিনাইদহের প্রকৃতি। কারণ আমি এক গ্রামীণ সংস্কৃতির মধ্যেই বড় হয়েছি। আমাদের বিশাল বাড়িতে আমরা বাড়ির অনেক ছেলে-মেয়ে এক সাথে বেড়ে উঠেছি। পারিবারিক একটা আবহ এবং আমার মা সুন্দর সুন্দর গজল ও ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালী গান গাইতেন মনের সুখে। সারাক্ষণ তার কাছে রেডিও থাকতো। বাবাও গান-বাজনা পছন্দ করতেন। যেখানেই গান হোক না কেনো নিজেরা সকলে মিলে সেখানে যেতেন এমনকি আমাকেউ নিয়ে বায়োস্কপ এবং গাজীর গান দেখিয়ে এনেছে। কীর্তন গানে গিয়ে কীর্তন শুনেছি, দুর্গাপুজায় গিয়েছি, মেলা, অষ্টগান এসবই কেমন ভাবে যেন আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছিল ছোটবেলা থেকেই। যে কারণে আমার কবিতা বা মুক্তগদ্যে অধিকাংশই আমার স্মৃতিজড়িত বিষয়গুলো ফুটে ওঠে। আমি চাইও আমার এই বিষয়গুলো বলা উচিত। কারণ আমি তো আমার কথায় বলব। আমি তো আপনার কথা বলব না। সব কিছু মিলিয়ে ঝিনাইদহের আবহমানতা আমার মনন গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আর গণ বিশ্ববিদ্যালয় যে তা আমাকে প্রভাবিত করেনি তা কিন্তু না। তবে এটার প্রভাব আবার ছিল অন্য রকম। তাহলে বলতেই পারি আমার মননকে শাণিত করেছে গণবিশ্ববিদ্যালয়।
কাব্যশীলন: এমন কোনও অভিজ্ঞতার মধ্য গিয়েছেন কি যার জন্য লিখতে বসেছেন টেবিলে-
বঙ্গ রাখাল: আসলে আমি যা বলি তা তো সবই আমার চোখের সামনের ঘটে যাওয়া বিষয়কেই আমি আমার মত করে বলতে থাকি বা বলার চেষ্টা করি মাত্র। আসলে বানোয়াট জিনিস দিয়ে আপনি কতদূরে যাবেন। তাই আমি সব আমার সমস্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই নিজের জীবনকে বোঝার চেষ্টা করি এবং তা নিয়ে লেখতেও বসে যাই।
কাব্যশীলন: লিটলম্যাগ’কে সাহিত্যের আতুর ঘর বলা হয়। দিন দিন আতুর ঘর শ্রীহীন হচ্ছে। লিটলম্যাগ কর্মী হিসেবে এই শ্রীহীনতার দায়ভার কতটুকু নিজের কাঁধে নিতে চাচ্ছেন-
বঙ্গ রাখাল: এই দায় আমাদের সবার। আমি ইচ্ছে করলেই আজ সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে না। কিংবা ঠিক হবে না। আসলে এই অবস্থার জন্য আমরা যারা সাহিত্যকর্মী বা লিটলম্যাগকর্মী তারা প্রত্যেকই দায়ী। কেননা এই লিটলম্যাগের জন্ম আপনা আপনি হয়নি। এটা একটা বিস্ফোরণ। লিটলম্যাগ কর্মীরা কখনো অন্যের কাছে গিয়ে ধন্না দেয় না। অন্যের কুখাদ্যকে সুখাদ্য হিসেবে চালিয়ে দেয় না। নিজেদের পরিশ্রমের ফসল লিটলম্যাগ। এক একটা সংখ্যা যেন নিজেদের রক্ত পানি করা সংখ্যা। এরা মাথা নত করতে আসেনি নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করার জন্যই তৈরি হয় লিটলম্যাগের। কিন্তু আজ আর চোখে লিটলম্যাগ দেখি না। যা আছে তা সংকলন। রাতারাতি বিজ্ঞাপন দিয়ে সকালেই চলে যায় প্রেসে—বনে যান লিটলম্যাগ সম্পাদক হিসেবে। সে জানেও না আকারে ছোট হলেই লিটলম্যাগ হয় না। তাই এই দায় আমাদের আর আমাদের মানে আমার ঘাড়ে এসেও বর্তায়। আমরা নিজেরাও তাদের সুযোগ করে দিয়েছি এবং তারা যে কারণে আজ সাহিত্যের নামে বস্তাপঁচা কবিতা গল্পকে টাকা বা বিজ্ঞাপন নিয়ে ঢাউস ঢাউস সংখ্যা করে লিটলম্যাগ বলে লিটলম্যাগের বারটা বাজাচ্ছে। যারা নিজেদের আদর্শ থেকে সামান্যের জন্যও নতি স্বীকার করেনি- তৈরি করেছেন শক্তিশালী লেখক। সুযোগ করে দিয়েছেন উদীয়মান সম্ভাবনাময় কবি-সাহিত্যিকদের। এমন সম্পাদক বা লিটলম্যাগ কর্মী কোথায় পাব?
কাব্যশীলন: শেষ প্রশ্ন, আপনি কেনো লেখেন?
বঙ্গ রাখাল: নিজের অজান্ত মনকে শান্ত করার জন্যই মূলত লেখি। আমার অনেক কথা বলার আছে আর এই না বলা কথা বলার জন্যই আমি লিখি। আর আসলে তো অন্য কোনো কাজ পারি না। সেই কারণেও লেখি। তবে আমি যদি না লেখতাম তাহলে এতক্ষণ যে কথাগুলো বললাম এই কথাটাও বলতে পারতাম না। তাই নিজের অব্যক্ত কথাকে অন্যের জানানোর জন্যই লেখি। কেন লেখি এর জবাবটা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’ই বুঝি দারুণভাবে দিয়েছেন-জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি এ জগতে কেউ তা জানে না। কিন্তু সকলের সঙ্গে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সমভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি। দান করি বলা ঠিক নয়, পাইয়ে দিই। তাকে উপলব্ধি করাই। আমার লেখাকে আশ্রয় করে সে কতকগুলি মানসিক অভিজ্ঞতা লাভ করে—আমি লিখে পাইয়ে না দিলে বেচারি যা কোনোদিন পেত না। কিন্তু এই কারণে লেখকের অভিমান হওয়া আমার কাছে হাস্যকর ঠেকে। পাওয়ার জন্য অন্যে যত না ব্যাকুল, পাইয়ে দেওয়ার জন্য লেখকের ব্যাকুলতা তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। পাইয়ে দিতে পারলে পাঠকের চেয়ে লেখকের সার্থকতাই বেশি। লেখক নিছক কলম-পেষা মজুর। কলম-পেষা যদি তার কাজে না লাগে তবে রাস্তার ধারে বসে যে মজুর খোয়া ভাঙে তার চেয়েও জীবন তার ব্যর্থ, বেঁচে থাকা নিরর্থক।
বঙ্গ রাখালের এই কথাচিত্র হোঁচট খেলাম। তিনি বললেন
“ কলম-পেষা যদি তার কাজে না লাগে তবে রাস্তার ধারে বসে যে মজুর খোয়া ভাঙে তার চেয়েও জীবন তার ব্যর্থ, বেঁচে থাকা নিরর্থক।”
রাস্তার ধারে বসা মজুরের জীবন ব্যর্থ হবে কেন? তার পরিশ্রমের কী কোন মূল্য নেই। তাতে কি তার পরিবারের সামান্য সংস্হান হয়না? সে মজুর বলে কী তিনি বলতে পারলেন ‘ যে মজুর খোয়া ভাঙে তার চেয়ে ও জীবন তার ব্যর্থ , বেঁচে থাকা নিরর্থক ? “ অথচ তিনিই কবিদের সাধারন মানুষকে নিয়ে লেখার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মজুর আমার কাছে সম্মানীত । সে পরিশ্রম করছে জীবনের জন্য , আমি সে জীবনকে ব্যর্থ মনে করিনা। ‘কলম পেষা কাজে লাগা’ কথার মধ্যে মেটেরিয়াল লাভের ভাবাটাই ক্যকটাসের মত কঁাটা নিয়ে দন্ড মান। বৈষম্যবিহীন পৃথিবীর সংগ্রাম এখন আমেরিকায়, ইউরোপে-এই দাবানল পুড়েছ।