ছড়া গণ আন্দোলনের হাতিয়ার~ব্রত রায়

সমকালীন ছড়ায় যিনি ইতোমধ্যে ছাড়িয়েছেন নিজস্ব সৌরভ। ছড়া সাহিত্যের আলোচিত মুখ। তিনি সবার অত্যন্ত প্রিয়মুখ ব্রত রায়। তাঁর লেখা রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুভিত্তিক স্বভাবসুলভ রসিকতাপূর্ণ ছড়াগুলো আনন্দদানের পাশাপাশি বিবেক জাগ্রত করতেও যথেষ্ট শক্তিশালী।

ব্রত রায়ের বাবা গুণী শিক্ষক শিশির কুমার রায় এবং মা ব্যাংক কর্মকর্তা রেবা রানী রায়। বড়ভাই সুব্রত রায়ও একজন ছড়াকার। তাঁর জীবনের একটা বড়ো অংশ কেটেছে গ্রামীণ পরিবেশে। তিনি বরিশাল জিলা স্কুল ও ব্রজমোহন কলেজ পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নেন। ব্রত রায় জার্মান থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে দেশে ফিরে চাকরির পাশাপাশি সাহিত্যকর্মে নিযুক্ত আছেন।

এই দেশবরেণ্য ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, গল্পকার ও প্রকৃতি প্রেমিকের মুখোমুখি হয়েছেন ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক মোস্তাফিজুল হক।

মোস্তাফিজুল হক: শ্রদ্ধেয় ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক আপনাকে কাব্যশীলন ওয়েবম্যাগের পক্ষ থেকে স্বাগতম।

ব্রত রায়: ধন্যবাদ।

মোস্তাফিজুল হক: আপনি প্রকৌশলী হয়েও এতো মজার মজার ছড়া লেখায় কীভাবে ব্রতী হলেন?

ব্রত রায়: হা হা হা। দু’টোর একটা বোধ হয় ভুল। হয় পেশাটা, না হয় নেশাটা। তবে প্রকৌশলী হওয়াটা সাহিত্যকর্ম করার অন্তরায় নাও হতে পারে, যদি আপনি ঠিকঠাক ভারসাম্য রাখতে পারেন। হুমায়ূন আহেমদ নিজে কাঠখোট্টা মানুষ ছিলেন কিন্তু তাঁর সাহিত্যে আমরা উল্টো পরিচয় পাই।

মোস্তাফিজুল হক: আপনার ছড়ার লেখার সূচনা সম্পর্কে কিছু বলেবন কি?

ব্রত রায়: ছড়া তো বাঙালির রক্তে! আমরা কথায় কথায় ছন্দ মেলাই, অন্ত্যিমল দেই। সেটা ঘুমপাড়ানি ছড়া হোক আর রাজনৈতিক শ্লোগান হোক। আমার বড়ভাই সুব্রত রায় ছোটবেলায় খুব ভালো ছড়া লিখতেন। কিন্তু
আমি একটু পরে ছড়ায় আসি।

মোস্তাফিজুল হক: বুয়েটে পড়ার সময়ও কি আপনি সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন? তখন কি কখনো মনে হয়নি যে, আপনি ভুল কাজ করছেন?

ব্রত রায়: তখন মূলত আমি গদ্য লিখতাম। ছড়াও কিছু লিখেছি। আমার তো মনে হয় আমি সব সময় ভুল কাজই করি। ছড়া লেখা ঠিক কাজ কিনা তাও জানি না।

মোস্তাফিজুল হক: আধুনিক ছড়ার কাঠামো কেমন হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন?

ব্রত রায়: কঠিন প্রশ্ন। আমি আসলে একাডেমিক ছড়াকার নই। যে ছড়া সহজ সেই ছড়াই ভালো। ছড়ার কিছু ব্যাপার আছে যেমন মাত্রা, ছন্দ ও মিল। এগুলো ঠিকঠাক রেখে কিছু একটা বলুন। ছড়ায় মজা আনুন। এখন মানুষ নতুন কিছু চায়। ধরুন শুধু ছন্দের ঝনঝনানির দিন এখন আর নেই। ছড়া হবে মানুষের মুখের কথার মতো। ধরুন
যেকােনো ইস্যুতে শত শত ছড়া লিখিত হয় এখন। একটু আলাদা না হলে আপনার লেখা কেন পড়বে পাঠক?

মোস্তাফিজুল হক: স্বরবৃত্তের পাশাপাশি মাত্রাবৃত্তেও কীভাবে এতো সাবলীল ছড়া লিখেন? অনেকই বলেন মাত্রাবৃত্ত ছড়ার ছন্দ না, এ বিষয়ে কিছু বলবেন কি?

ব্রত রায়: আমি এই প্রশ্ন অনেকের ছড়া পড়েই করি, যেমন ছড়াকার রােমেন রায়হান। মাত্রাবৃত্তে তাঁর মতো স্বচ্ছন্দ খুব কমই আছেন। মাত্রাবৃত্ত ছড়ার ছন্দ না – এটি একটি কথার কথা। মাত্রাবৃত্তে প্রচুর সার্থক,
পাঠকপ্রিয় ছড়া সৃষ্টি হয়েছে। আপনি কীভাবে কোন ছন্দকে ব্যবহার করতে পারছেন সেটাই আসল।

মোস্তাফিজুল হক: ওয়েবম্যাগ ও ফেইসবুক লেখক তৈরিতে কােনো ভূমিকা রাখছে কী?

ব্রত রায়: অবশ্যই রাখছে। অনলাইনে লেখালেখির সুবিধা হচ্ছে লেখক-পাঠক-বোদ্ধার মিথষ্ক্রিয়াটা খুব সহজেই হয়। সেটা নিয়ে লেখক ঋদ্ধ হতে পারেন। এটা হচ্ছে পজেটিভ দিক। আবার অতি প্রশংসা ও লাইক কালচার একজন লেখকের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মোস্তাফিজুল হক: আপনি সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা কার নিকট থেকে পেয়েছেন?

ব্রত রায়: অবশ্যই পরিবার থেকে। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। হুমায়ূন আহমেদের মতো বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলে পরিবারের পক্ষে সমর্থন দিয়ে যাওয়া সোজা কাজ নয়। লেখালেখি যেহেতু আমার পেশা নয়, এটা এখন পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারছি। পাশাপাশি বন্ধু ও সহলেখক এবং সর্বোপরি পাঠকদের সমর্থনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি পত্রিকাগুলো থেকেখুব ভালোবাসা পেয়েছি। আমার অজান্তেই কিছু বন্ধু তৈরি হয়ে গেছেন যাঁরা নানান পাতার বিভাগীয় সম্পাদক। বিশেষ করে অদ্বৈত মারুত, আহমেদ রিয়াজ, মেহেদী আল মাহমুদ, ইমন চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম জুয়েল, মাহফুজ রনী, ইকবাল খন্দকার, নাসরীন মুস্তাফা, আশিক মুস্তাফা, প্রমুখের কথা বলব। সিনিয়র ছড়াকারদের প্রভূত ভালোবাসা পেয়েছি। কাকে রেখে কার কথা বলব?

মোস্তাফিজুল হক: সর্বপ্রথম যে পত্রিকা বা ম্যাগািজনে আপনার লেখা প্রকাশিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?

ব্রত রায়: দৈনিক সমকালের সারাবেলা পাতায় সমকালীন ছড়া ছাপা হওয়া আমার লেখালেখি জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর আগেও ছোটখাট সংকলন ও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে কিছু লেখা তবে সেগুলো উল্লেখযোগ্য নয়।

জাতীয় পত্রিকায় ছড়া ছাপা হওয়ায় আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। আসলে পত্রিকাগুলোর একটা ন্যুনতম মানদণ্ড থাকে। ফলে ছাপার যোগ্যতা অর্জন মানে একধরনের স্বীকৃতি।

মোস্তাফিজুল হক: আপনার ছড়ায় নিপীড়িত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথাই বেশি উঠে এসেছে। এক্ষেত্রেআপনার এই চেতনাবােধের মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?

ব্রত রায়: কারণ আমিও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। হা হা হা। আসলে ক্ষমতা ও সম্পদ সর্বদাই মুষ্টিমেয় মানুষের দখলে। আপনি কোথাও না কোথাও কােনো না কােনোভাবে নিপীড়িত। নিপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা বলা মানে নিজের কথা বলা।

মোস্তাফিজুল হক: “এই দুনিয়ায় দুই ধরনের মানুষ বোধ হয় আছে/ এক ধরনের মানুষ যারা পেরেক মারে গাছে/ ডাল ভেঙে নেয় অকারণেই, এবং ছেঁড়ে পাতা/ আমার মতে সম্ভবত খারাপ তাদের মাথা!/ আরেক ধরন- গাছকে ভীষণ ভালবাসেন যারা/ নিজের টাকায় পথের ধারে লাগান গাছের চারা/”
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সর্বপ্রথম একক ছড়ার বই ‘গাছের দলের লোক’ লেখার অনুপ্রেরণা কোত্থেকে পেলেন?

ব্রত রায়: আমি জন্মগত ভাবেই প্রকৃতিপ্রেমী। আমার জীবনের একটা বড়ো অংশ গ্রামে কাটায় প্রকৃতির সঙ্গেনিবিড় একটা যোগাযোগ আমার তৈরি হয়েছে। আর এইদেশ পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি বারবারই হয়েছে, ফল পরিবেশ-প্রকৃতিকে বাঁচানোর একটা চিন্তা সব সময়েই আমার মধ্যে কাজ করে। সেটা নিজের অস্তিত্ব বাঁচানোর জন্যই। ‘গাছের দলের লোক’ আমার সেই ভাবনার একটা বহিঃপ্রকাশ। অনেকে মাঠে কাজ করেন। আমার সেই সুযোগ নেই। অন্তত লেখালেখি করে যদি কিছু সচেতনতা তৈরি হয় মন্দ কী?

মোস্তাফিজুল হক: যতটা জানি- আপনি ‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার-২০১৭’ পেয়েছেন। এই সম্মাননা প্রাপ্তিতে আপনার অনুভূতি কী?

ব্রত রায়: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। দেশ পাবলিকেশন্সে যাঁরা পাণ্ডুিলিপি জমা দেন তাঁদের নানান ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে বইটি এখনো বাজারে আসেনি।

মোস্তাফিজুল হক: প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বসহ নিয়মিত আপনার ছড়া প্রকাশ করছে। তাঁরা সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রে কতটা আন্তিরক?

ব্রত রায়: সম্মানী শব্দটা তো সম্মান থেকে এসেছে। সম্মান পেতে কার ভালো লাগে না? বাংলাদেশের প্রধান দু’টিদৈনিক পত্রিকা নিয়মিতই সম্মানী দেয়। কিছু পত্রিকা খুব অনিয়মিত ভাবে দেয়। বেশিরভাগই দেয় না। তবে কিছু পাক্ষিক ও মাসিক প্রকাশনা থেকে সম্মানী দেওয়া হচ্ছে ইদানিং, যেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অনেকের জন্যই এই সম্মানীটুকু খুব জরুরি। বিশেষ করে যাঁদের অন্য কােনো পেশা নেই।

মোস্তাফিজুল হক: আপনি তো গল্পও লিখছেন? সাহিত্যচর্চা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ব্রত রায়: আমি শুরু করেছিলাম গল্প দিয়েই। ছড়াকার হব ভাবিনি। এখন আবার অনেকদিন বিরতির পর গল্প লিখতে শুরু করেছি। গল্প লেখার ব্যাপারে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে। দেখি কতদূর করা যায়। ছড়া দিনে একাধিক লেখা যায়। গল্পের জন্য আলাদা প্রস্তুতি ও আয়োজন দরকার।

মোস্তাফিজুল হক: সমসাময়িক কার কার লেখা আপনার ভালো লাগে বা কাদের লেখা পড়েন?

ব্রত রায়: এই প্রশ্ন খুব নিরীহ নয়! আমি নর্মালি এটা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করি। ধরুন আমাকে যাঁরা প্রিয় ছড়াকার মনে করেন তাঁদের মনের মধ্যে একটা স্বাভাবিক চাওয়া এরকম হয় যে আমিও তাঁদের সম্পর্কে অনুরূপ কথা বলব। কিন্তু সেটা সব সময় সত্য নাও হতে পারে। তাই আমার সমসাময়িক ও বন্ধুস্থানীয়দের আমি এই
তালিকা থেকে বাদ রাখব। তবে খুব নিরাপদে বলা যায়, যে-কারোর ভালো লেখাই ভালো লাগে।
ছড়ার ক্ষেত্রে আমি প্রভাবিত রিটন ভাই, রােমেন ভাই, জাহান ভাই, জগলুল ভাই দ্বারা।
গল্প বা শিশুসাহিত্যের অন্য শাখাগুলোর খবর ইদানিং রাখা হয় না। তবে আমার শৈশব-কৈশােরে সুকুমার, জুলভার্ন, সত্যজিৎ , লীলা মজুমদার, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু, জাফর ইকবাল, আলী ইমাম, কাইজার চৌধুরী, প্রমুখ জায়গা দখল করেছিলেন।

মোস্তাফিজুল হক: নবীন ছড়াকারদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? তাঁদেরকে লেখার পাশাপাশি কোন লেখকের লেখা
পড়তে বলবেন?

ব্রত রায়: পরামর্শ দেওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের নতুন লেখকদের অনেকেই ছন্দ-মাত্রা-মিল নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ও শিক্ষিত। আবার অনেকেই এসব নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামান না। তাদের বলি, ছড়ার বেসিক গ্রামারটুকু জানতে হবে। বাংলাভাষা শিখতে হবে। সমাজ সচেতনতা ও লেটেস্ট ইস্যুতে আপডেট থাকা খুব জরুরি। প্রগতিশীলতাকে মনে ধারণ করা দরকার। এবং অতি অবশ্যই পড়তে হবে। ভালো ছড়া পড়তে হবে। আর যেকোনো বিষয়ে কিছু লিখতে হলে সেটাকে নানান সূত্র থেকে ভেরিফাই করে নিলে লেখার গ্রহণযোগ্যতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।

মোস্তাফিজুল হক: আপনার ‘লাইফ ইজ ডিউিট ফুল’, ‘আবুল সমগ্র’, ভালো ছড়া, আলো ছড়া’, ‘ছড়া আর টরা’, ‘গাছের দলের লোক’ বইগুলোর কােনোএকটি নিয়ে পাঠক প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি?

ব্রত রায়: স্বীকার করেত দ্বিধা নেই ছড়ার বই চলে না। আমার বইগুেলাও চলেনি। যারা ছড়া লেখেন মূলত তারাই কেনেন আর দুয়েকজন পরিচিত মানুষ। তবে বাচ্চাদের জন্য লেখা ছড়ার বইয়ের কাটতি আছে কিছুটা। আমি খুব একটা ভালো রিভিউও পাইনি কােনো বই সম্পর্কেই। মানে হৈ চৈ করার মতো কিছু হয়নি।

মোস্তাফিজুল হক: আধুিনক ছড়া শুধু ‘নন্সেন্স রাইম’ নয়, বরং সমাজ পরিবর্তন ও ন্যায়ের কথা বলে। সুতরাং ছড়াকারই প্রকৃত কবি- এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

ব্রত রায়: আমি আসলে ছড়ার শক্তিতে বিস্মিত হই। ধরুন প্রতিটি গণ-আন্দোলনে ছড়া হচ্ছে একটা হাতিয়ার। আর ছড়ার সঙ্গে কবিতার কােনো বিরোধ নেই। এরা পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলে। যে যার মতো করে মানুষ, সমাজ বা দেশ বা প্রগতির কথা বলে। ছড়াকার আর কবির মধ্যে পার্থক্য কী বা আদৌ কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই। আমি দেখি সব বিখ্যাত কবিই ছড়া লিখেছেন, লেখেন। আমি নিজেকে কবি ভাবি না, আবার কেউ আমাকেকবি বললেও আপত্তির কিছু দেখি না। সংজ্ঞাটাই আমার কাছে পরিষ্কার নয়।

মোস্তাফিজুল হক: শ্রদ্ধেয় কবি, ছড়াকে অনেকেই শিশুসাহিত্য বলে থাকেন। আপনি ছড়াকে কীভাবে মূল্যায়ন করতে চান?

ব্রত রায়: এ বিষয়ে আমি একাধিকবার বলেছি। ছড়া সকল বয়সের ও মননের পাঠকের জন্য লিখিত হয়। যে ছড়া শিশুদের উপযোগী তা শিশুসাহিত্য। যারা মনে করে ছড়ামাত্রই শিশুেতাষ তারা বোকার স্বর্গের স্থায়ী বাসিন্দা।
তবে আমরা প্রচুর মহৎ ছড়া পেয়েছি যার শিশুতোষ কাঠামোর আড়ালে খুব বড়ো রাজনৈতিক বক্তব্য লুকিয়েআছে। ধরুন সুকুমার রায়ের ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ ছড়াটার কথা। এটা স্কুলের বইয়ে পাঠ্য, পড়ে বাচ্চারা মজা পায়, কিন্তু এই ছড়াটা মূলত এই উপমহাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ের অহিংস আন্দোলন এবং সেই আন্দোলনের পুরোধা মহাত্মা গান্ধীকে ব্যঙ্গ করে লেখা।

মোস্তাফিজুল হক: শিশুসাহিত্য কেমন হওয়া উচিৎ? এর কাম্য পরিধি কী ছড়া ও গল্পেই সীমিত থাকবে, না সকল শাখায় বিচরণ করবে?

ব্রত রায়: আমরা একটি শিশুকে নিয়ে যে চিকিৎসকের কাছে যাই তাকে বলি শিশুচিকিৎসক। শিশুদের চিকিৎসা
কি সহজ বিষয়? শিশুদের শরীর কি এককোষী এমিবার মতো? মােটেই না। প্রাপ্তবয়স্ক মানবদেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই শিশুদেহে বর্তমান। শিশুসাহিত্যও ঠিক সেরকমই। একে খুব হেলাফেলা বা সোজাসরল মনে করার কারণ নেই। একসময় শিশুসাহিত্য ভূতপ্রেত, দত্যিদানো, রাজারানি, ফড়িং, ইত্যাদিতে সীমিত ছিল। সেদিন নেই। এখনকার শিশুকিশোরদের মনের খোরাক জোগানো সহজ কাজ নয়। শিশুদের জন্য ছড়া, গল্পের পাশাপাশিবিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক বই, জীবনীগ্রন্থ, ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে থাকতে হবে। বড়রা যেমন তাদের জন্য লিখবেন, শিশুরাও নিজেদের জন্য লিখবে। সাহিত্যের সঙ্গে শিশুদের সম্পৃক্ত করাটা খুব জরুরি।

মোস্তাফিজুল হক: আপনার ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে আমাকে সময় দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় কবি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সবসময়।

ব্রত রায়: আমি আসলে খুব ব্যস্ত মানুষ নই। বলতে পারেন অলস। অলসতাকে উপেক্ষা করে সময় দিয়েছি বলেধন্যবাদ দিতেই পারেন! হা হা হা। আপনাকেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। শুভকামনা রইল কাব্যশীলনের জন্য।

৫ thoughts on “ছড়া গণ আন্দোলনের হাতিয়ার~ব্রত রায়

  • সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯ at ৯:৩৯ অপরাহ্ণ
    Permalink

    ‘ব্রত রায়’ ছড়ার জগতে বিস্ময় এক নাম..
    শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।

    Reply
  • সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯ at ৩:৪৩ অপরাহ্ণ
    Permalink

    খুব ভালো লাগলো । ব্রত রায় আমার প্রিয় ছড়াকারদের মধ্যে একজন । সাক্ষাৎকারে ছড়া সম্পর্কে, এবং ছড়াকারদের সম্পর্কে তার ভিউ পড়লাম, জানলাম অনেক কিছু । সত্যিই ভালো লাগলো ।

    Reply
  • সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯ at ৪:৩৪ অপরাহ্ণ
    Permalink

    যিনি উঠতে বসতে ছড়া লিখতে পারেন এবং যেকোনো বিষয় নিয়ে তাৎক্ষণিক ছড়া লিখতে পারেন তিনি ব্রত রায়। ছড়ার জগতে এক বিস্ময়কর নাম। অনেক সাবলীল ভাবে যে ছড়াগুলো তিনি লিখেন আমার মত পাঠক মুগ্ধ হয়েই তা পড়ে।

    Reply
  • সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯ at ৫:১১ অপরাহ্ণ
    Permalink

    ব্রত রায় আমার প্রিয় ছড়াকার। তাঁর অবদানে বাংলা সাহিত্য আরো অনেক বেশী সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, সেই শুভ কামনা রইলো।

    Reply
  • সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯ at ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ
    Permalink

    চটপট ছড়া লেখায় ওস্তাদ ব্রত রায়। কী সাবলীলভাবেই তিনিসমসাময়িক বিষয় তুলে ধরেন। ভালোবাসা প্রিয় ছড়াকার।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *