সাক্ষাৎকার

যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি সেই স্বাধীন দেশে আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই।। ইসহাক খান

ইসহাক খান সত্তর দশকের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক, গল্পকার ও নাট্যকার। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস ও শিশুতোষ গ্রন্থসহ মোট ত্রিশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। টিভি নাট্যকার হিসেবেও বিশেষভাবে পরিচিত ইসহাক খান। বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন চ্যানেলে প্রায় শতাধিক নাটক প্রচারিত হয়েছে তার। ইসহাক খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের অধীনে ময়মনসিংহ, কামালপুর, হাতিবান্ধা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ অংশ নেন তিনি। ১৯৮২ সালে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত গল্প প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ গল্পকার হিসেবে পুরস্কৃত হন ইসহাক খান। এছাড়া সাহিত্যে অবদানের জন্য ‘ডাকসু’ সাহিত্য পুরস্কার, সোনার বাংলা সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা, শুভজন লেখক সম্মাননা ও আমরা ক’জনা সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। বর্তমানে তিনি মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধার ইসহাক খান এর মুখোমুখি হয়েছেন। ফখরুল হাসান, লেখক ও প্রকাশক কাব্যশীলন সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনা করেছেন শিশুসাহিত্যিক ও সাব এডিটর কাব্যশীলন মোস্তাফিজুল হক।

ফখরুল হাসান:

শ্রদ্ধেয় ইসহাক খান ভাই কেমন আছেন?

ইসহাক খান:

ভালো আছি।

ফখরুল হাসান:

সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি রেখে সাহিত্যকে কেন বেছে নিলেন? আর আপনার লেখা মুক্তিযুদ্ধের বইগুলো সম্পর্কে জানতে চাই।

ইসহাক খান:

স্কুলজীবন থেকে আমি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। স্বাধীনতার পর দেশের পরিস্থিতি দেখে আমি প্রচণ্ড হতাশ হই। সেই হতাশা আমাকে রাজনীতি বিমুখ করে। লেখালিখি হয়ে ওঠে আমার আদর্শিক হাতিয়ার। বিশ্ববিদ্যালয় পাসের পর কিছুদিন চাকরি করেছি। চাকরি করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে চাকরি আমার কাজ নয়। সিরিয়াস সাহিত্য করতে চাইলে একসঙ্গে দুটো করা সম্ভব না। তাহলে কোনটাই হবে না। তাই লেখালিখিকেই মূল কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছি।

ফখরুল হাসান:

আপনি তো একজন মুক্তিযোদ্ধা, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক। আপনার কি মনে হয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে বই রচিত হয়েছে? মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নাটক-সিনেমা নতুন প্রজন্মকে পুরোপুরি ধারণা দিতে পেরেছে কি?

ইসহাক খান:

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা ধরণের বই প্রকাশিত হয়েছে। কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি তাঁদের দেখা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ মুলক বই লিখেছেন। সেগুলো ব্যক্তির অভিজ্ঞতা। তাতে মুক্তিযুদ্ধ কমই আছে? আর সাহিত্যের কথা যদি বলি, তাহলে বলবো মুক্তিযুদ্ধের গল্প বা উপন্যাস যা লেখা হয়েছে তা সবই অসম্পূর্ণ। প্রতিষ্ঠিত এবং নবীন যারাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন, তাদের লেখার মধ্যে পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধ নেই। মুক্তিযুদ্ধের উপসর্গ আছে। পাকিস্তানি আর্মির অত্যাচার নির্যাতন আছে, দলে দলে লোক পালিয়ে যাচ্ছে। নারী নির্যাতন হচ্ছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে _ এ সবই আছে গল্প উপন্যাসে, কিন্তু যুদ্ধ নেই। যদি যুদ্ধই না থাকে তাহলে সেটাকে মুক্তিযুদ্ধের লেখা বলা কি সঙ্গত? আমি মনে করি সঙ্গত না। এটার কারণ হয়েছে যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখছেন তাদের কারোরই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নেই। লোক মুখে শুনে সাহিত্য লিখলে সে সাহিত্য যথার্থ হবে না।

নাটকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দেশ স্বাধীন হবার পর কিছু সিনেমা তৈরি হয়েছিল যা ছিল আবেগে ভরা। মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। আর নাটকের কথা না বলাই ভাল। মুক্তিযুদ্ধের গল্প উপন্যাসের মতো নাটকও যুদ্ধের উপসর্গে ভরপুর। যুদ্ধ নেই।

ফখরুল হাসান:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক হিসাবে আপনার কি মনে হয় না বঙ্গবন্ধুর নামে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার চালু করা উচিত?

ইসহাক খান:

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও মানসম্পন্ন লেখা হওয়া দরকার। এখন যা লেখা হচ্ছে সব একপেশে। দোষগুণ মিলিয়ে মানুষ। তাঁর দোষটা বা ভুলটাও লেখা দরকার। তবে তাঁর নামে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়া হলে তাঁকে খাটো করা হবে। তাঁর নামে আন্তর্জাতিক পদক দেওয়া যেতে পারে। তাহলেই তাঁকে যথাযথ মুল্যায়ন করা হবে।

ফখরুল হাসান:

আপনার লেখা বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাস পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিশোর গল্প লেখার রহস্য কী? আপনি তো কিশোর উপন্যাস না লিখে সেগুলো উপন্যাসও করতে পারতেন?

ইসহাক খান:

মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাস লেখার কারণ, আমি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে চাই। কারণ স্বাধীনতার পর একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা ভুল ইতিহাস জেনে বড় হয়েছে। এখনো তারা সেই ভুল ইতিহাস আঁকড়ে ধরে আছে। আমি বড়দের একটি উপন্যাস লিখেছি। লড়াই। ১৯৯৪ সালে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। আরও লিখবো। প্রস্তুতি পর্ব চলছে। মুক্তিযুদ্ধের একটি দীর্ঘ উপন্যাসের খসড়া করেছি। আগামী ২০২১ বইমেলায় পাওয়া যাবে।

ফখরুল হাসান:

লিখতে লিখতে কবি নজরুল পাগল হয়েছিলেন। রবিঠাকুর দাড়ি পাকিয়েছিলেন। তাঁদের এত তাড়াহুড়া ছিলো না। কিন্তু আমাদের সময়ে এসে দেখতে পাচ্ছি খুব বেশি তাড়াহুড়ো করছে অনেকে। এর কারণটা কী?

ইসহাক খান:

আমাদের তরুণ লেখকদের মধ্যে একধরণের অস্থিরতা চলছে। তারা দ্রুত বিখ্যাত হতে চায়। দ্রুত সফলতা পেতে চায়। তারা জানে না, সাহিত্য সাধনার বিষয়। এর ফল রাতারাতি পাওয়া যাবে না। এটা নিয়ে ভাববার কিছু নেই। একসময় তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে তাদের কি করা উচিত।

ফখরুল হাসান:

আপনি কী মনে করেন, একজন কবি, কথাসাহিত্যিক বা নাট্যকারের আমাদের দেশে নিজের মতো করে কাজ করার অবাধ স্বাধীনতা আছে?

ইসহাক খান:

আমাদের দেশে লেখার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এখানে ধর্মীয় মৌলবাদ অত্যন্ত গোঁড়া। তারা কোনো যুক্তি মানে না। কোনো লেখা তাদের অনুভূতিতে আঘাত করলেই তারা সেই লেখককে হত্যা করতে দ্বিধা করে না। বর্তমানে বাংলাদেশে কলমের স্বাধীনতা নেই। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

ফখরুল হাসান:

একজন লেখক হিসেবে বাংলা একাডেমির পুরস্কারকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? প্রশ্নটি এ কারণেই যে, একাডেমির পুরস্কার নিয়ে বিগত সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত কী?

ইসহাক খান:

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেশের সবচেয়ে সম্মানীয় পুরস্কার হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। বাংলা একাডেমির পুরস্কার এখন একটি তামাশা মাত্র। এই পুরস্কারের কোন নীতিমালা নেই। একসময় আমার মনে হতো বাংলা একাডেমি পুরস্কার মানে লাইফ টাইম এচিভমেন্ট। যারা লেখালেখি করেন একসময় তারা সবাই এই পুরস্কার পেয়ে যাবেন। পরে দেখলাম আমার ধারণা ভুল। বছর দশেক আগে একজন আশির দশকের লেখক বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেন। তখনও ষাট এবং সত্তুর দশকের বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য লেখক একাডেমি পুরস্কার পাননি। তাহলে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার অর্থ কী? এখন কেউ বলতে পারেন, তিনি ভাল লিখেন এই জন্যে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো তাহলে ভাল লেখক বিবেচনার মাপকাঠি কী? লেখক আহমদ ছফাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়নি। তার মানে কি আহমদ ছফা খারাপ লেখক? সারা পৃথিবীতে গ্রন্থের নাম উল্লেখ করে পুরস্কার দেওয়া হয়। আমাদের দেশে মুখ দেখে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকার বাছবিচার করা হয় না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তাদের তল্পিবাহকরা পুরস্কার পাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের চাটুকাররা পুরস্কার পাবে। এর মধ্যে আবার ধরপাকড়ের ব্যাপারও আছে। একজন ২০০ টি বই লিখে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছে। একজন একটি বই লিখে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছে। ওই একটি বই যদি পুরস্কারের মাপকাঠি হয়ে থাকে, তাহলে নীতিমালায় গ্রন্থকে উল্লেখ করে পুরস্কার প্রবর্তনের কথা থাকতে হবে। বাংলা একাডেমি পুরস্কার একটি হ-য-ব-র-ল পুরস্কার।

ফখরুল হাসান:

মুক্তিযুদ্ধের লেখা গ্রন্থগুলো নিয়ে বাংলা একাডেমি বা আমাদের রাষ্ট্র যে ধরনের কাজ করে তা কি যথেষ্ট বলে মনে করেন?

ইসহাক খান:

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের সাহিত্যে যে ধরণের কাজ হয়েছে তা মোটেও উল্লেখযোগ্য কাজ নয়। আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে মহৎ একটি উপন্যাস লেখা হয়নি। যা লেখা হয়েছে আমার বিচারে একটিও মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য নয়। সবাই একই কথা ঘুরে ফিরে লিখেছে। সেখানে শরণার্থীর পলায়নের কাহিনী আছে। ধর্ষণের চিত্র আছে। দেশের অভ্যন্তরে মানুষের আতঙ্কগ্রস্ত দিন যাপনের কথা আছে। কিন্তু যুদ্ধের কোনো কথা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যার কোনো কথা নেই। তাহলে সেটা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস বা মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য হয় কিভাবে? বাংলা একাডেমির কাজ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণাধর্মী লেখা প্রকাশ করা। এই কারণে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আসল কাজ কিছুই হয়নি। সেখানে যারা চাকরি করেন, তারা কেউ ওই পদের যোগ্য নন। বেশিরভাগই রাজনৈতিক কারণে চাকরি পেয়েছেন। তারা সেখানে চাকরি করেন। গবেষণা নিয়ে তারা ভাবেন না। এখন ব্যাপারটা এমন হয়েছে বছরে একবার বইমেলা করাই তাদের একমাত্র কাজ। এছাড়া আরও সমস্যা হলো ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের সরকার ক্ষমতা দখল করার কারণে বাংলা একাডেমির মুল কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে বার বার। এমনও হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা ক্ষমতায় গিয়ে তাদের মতো কাজ করেছে। তার ফলে বাংলা একাডেমি তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে।

ফখরুল হাসান:

আপনি বললেন, আমাদের নাটক, সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধের আংশিক দেখানো হয়েছে। যা আপনার দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের শতকরা পাঁচ ভাগ। প্রশ্ন হচ্ছে পরিপূর্ণভাবে কেন মুক্তিযুদ্ধের নাটক, সিনেমা হচ্ছে না? আপনার দৃষ্টিতে সমস্যা গুলো কী কী বা কোথায়? নাকি পুরোপুরি যুদ্ধের নাটক, সিনেমা তৈরি সম্ভব না?

ইসহাক খান:

হ্যাঁ, আমি বলেছি আমাদের নাটক সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধ এসেছে ৫%। পূর্ণাঙ্গ একটি সিনেমা করার জন্য আমাদের তেমন একজন দক্ষ একজন চিত্রনাট্যকার লাগবে। যিনি যুদ্ধের ঘটনাসমূহ উপলব্ধি করতে সক্ষম। যুদ্ধের সিনেমা তৈরি করতে অনেক উপকরণ দরকার। যা আমাদের নেই। নেই মানসিকতা। নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। নেই দক্ষ নির্মাতা। সবমিলিয়ে প্রচণ্ড ঘাটতির মধ্যে আমাদের বসবাস। এখন পর্যন্ত ক্লাসিক একটি উপন্যাস লেখা হয়নি। কবে হবে, আদৌ হবে কিনা আমি সন্দিহান।

ফখরুল হাসান:

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হয়েছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থাগার নেই। এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

ইসহাক খান:

মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থাগার নেই। আমাদের অনেক কিছু নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চলল; প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা করতে পারেনি কোনো সরকার। রাজাকারের তালিকা করেছে সেখানে মুক্তিযোদ্ধার নাম! এতো বড় অপরাধের পরও সেই মন্ত্রীর কোনো শাস্তি হলো না। সে এখনও বহাল তবিয়তে আছে। দেশ এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে আমি ভীষণ হতাশ। যে হারে রাজাকারের সমর্থক সংখ্যা বাড়ছে ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের নাম নিশানা খুঁজে পেতে গবেষণা করতে হবে। যে আশা নিয়ে একদিন নিজেকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলাম, সে আশা অনেক আগেই খিড়কির দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গেছে।

ফখরুল হাসান:

একটি ভিন্ন প্রশ্ন, যদিও সাহিত্যের সাথে যায় না, তবুও প্রশ্নটা আসে, যেহেতু আপনি লেখালেখি করেন। যুদ্ধের এমন কোনো স্মৃতি পাঠকদের জন্য বলবেন কি যা মনে হলে এখনো হৃদয় কাঁদে?

ইসহাক খান:

যুদ্ধের স্মৃতি মূলত বেশিরভাগই বেদনার স্মৃতি। তার মধ্যে কিছু কিছু স্মৃতি হৃদয়কে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। মনে হলে একা একা কষ্ট পাই। এক রাতে আমরা একজন শান্তিকমিটির চেয়ারম্যানকে ধরতে তার বাড়ি ঘেরাও করি। বেটা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। আমাদের কমান্ডার গুলির নির্দেশ দেন। আমরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করি। গগনবিদারি চিৎকার দিয়ে বেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমরা নিশ্চিত ছিলাম বেটা রাজাকার গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কাছে গিয়ে দেখার পর আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ওই রাজাকারের পাশে একজন মহিলা গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। হৈচৈ শুনে ওই মহিলা বাড়ির পেছনে তামাশা দেখতে বেরিয়েছিল। মহিলা ছিল গর্ভবতী। তার কোলে একটি বাচ্চা ছিল। কোলের এবং গর্ভের বাচ্চাসহ ওই মহিলা নিহত হয়। এই ঘটনার পর আমি বহুদিন ঠিকমতো ঘুমোতে পারিনি। চোখ বুজলে এই ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠত। আজও এই ঘটনা আমাকে বেদনাক্রান্ত করে।

ফখরুল হাসান:

শ্রদ্ধেয় লেখক, নাট্যকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আপনার কাছে ঋণী হলো সৃজনশীল ওয়েবম্যাগ কাব্যশীলন পরিবার। আপনার শত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদেরকে সময় দেবার জন্য অনিঃশেষ শ্রদ্ধা।

ইসহাক খান:

আমিও অনেক আনন্দ পেয়েছি। ধন্যবাদ ওয়েবম্যাগ কাব্যশীলন পরিবার। ধন্যবাদ তোমাকে, অনেক পাঠকের কাছে আমাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। অনেক শুভ কামনা সবার জন্য।

সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনা করেছেন সাব এডিটর মোস্তাফিজুল হক।

One thought on “যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি সেই স্বাধীন দেশে আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই।। ইসহাক খান

  • Zahirul Hossain Khan

    অসাধারণ ছিল কথাগুলো। সত্যি তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ভালো লেখক। সাক্ষাতকারে যা বলেছেন কাউকে তোষামোদের জন্য বলেন নি। আমার মনে হলো এমন ব্যক্তিত্ব থাকলেই সত্য কথা বলা সম্ভব। লেখকোর প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইলো। কাব্যশীলনের প্রতি রইলো আরও এমন অনেকের সাক্ষাৎকার যারা তোষামোদ করে কথা বলবে না । শুভকামনা রইলো ।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *