প্রবন্ধ।। স্টিফেন হকিং: জগতের সৃষ্টির রহস্যের ব্যাখ্যা।। আবদুল্লাহ আল আমিন
কোনো শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা মানুষের বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনাগুলো মেরে ফেলতে পারে না। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারেন জীবনরসিক, আপাদমস্তক নিরাসক্ত যুক্তিবাদী কিংবা জগতের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে প্রবল-অনুসন্ধিতসু।
আর এর একমাত্র উদহারণ হতে পারেন স্টিফেন হকিং। মৃত্যুর কালো ছায়ার নিচে বসেও তিনি সারা জীবন জীবনের জয়গান গেয়েছেন। আকণ্ঠ পান করেছেন জীবনসুধা। এ কথা সত্য যে, আমরা সবাই প্রতিমুহূর্তে এক অনিবার্য মৃত্যুর ধুমল-কালো ছায়ার নিচে বাস করছি। কখন যে কে ঝরে পড়ে তা কেউ-ই বলতে পারে না। তারপরও আমরা বেঁচে থাকতে চাই। জীবনকে বর্ণাঢ্য, ঝলমলে ও নন্দিত করতে চাই। আমরা ভালো করেই জানি, মৃত্যু অনিবার্য । কিন্তু তাতে কি এসে যায়! মৃত্যুকে আমরা ভুলে থাকি─ভুলে থাকতে চাই। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে, চোখের সামনে মৃত্যুর কালো ছায়ামূর্তিকে দন্ডায়মান দেখে কেউ কী মৃত্যুকে ভুলে থাকতে পারে? আর জীবনকে উপভোগই-বা করে কেমন করে!
কিন্তু হকিং জীবনকে উপভোগ করতে পেরেছিলেন। আর পাঁচজন স্বাভাবিক মানুষ যেভাবে যেমন করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে, ঠিক সেই ভাবেই জীবন যাপন করেছেন এই জীবনরসিক মানুষটি।
চলৎশক্তিহীন হয়েও হীনমন্যতায় ভোগেননি। বরং নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি-রহস্য উন্মোচনে। দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে, পঙ্গুত্ব বরণ করেও জীবনকে ভালোবাসতে পেরেছিলেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ভালবেসেছিলেন। ঈশ্বরে সমর্পিত একজন নিষ্ঠাবান ধার্মিক কী হকিং-এর মতো এমন স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারতেন? সব কিছু মেনে নিয়ে তিনি কি নির্দ্বিধ হয়ে বলতে পারবেন?-
‘এই করেছ ভালো নিঠুর হে,/ এমনি করে হৃদয়ে মোর তীব্র দাহন জ্বালো।’ আপাদমস্তক আস্তিক, ঈশ্বরপ্রেমী রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ ৮১- বছরের জীবন-পরিক্রমা পার করেও কী মৃত্যুকে স্বাভাবিক চিত্তে মেনে নিতে পেরেছিলেন? রবীন্দ্রনাথ, বার্ট্রান্ড রাসেল, পিকাসো, রামকৃষ্ণ, নেহেরু, চার্চিল কেউ কী সহজ-সরল চিত্তে মৃত্যু নামক কঠিন সত্যকে মেনে নিতে পেরেছিলেন? পারেননি। রবীন্দ্রনাথও নাকি মৃত্যুর আগে শিশুর মতো কেঁদেছিলেন। ইদানিং আমাদের দেশের রথী-মহারথীরাও মরার আগেই মরে যাচ্ছেন কোভিড-১৯ এর ভয়ে। সদ্যপ্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, জামিলুর রেজা চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, সৈয়দ আবুল মকসুদ, কামাল লোহানীরা কি মৃত্যুভয় জয় করতে পেরেছিলেন? কিন্তু হকিং মৃত্যুভীতি জয় করতে পেরেছিলেন। কীভাবে যে তিনি মৃত্যুভীতি জয় করেছিলেন সেই ভেবে আমি কূল-কিনারা হারিয়ে ফেলি। তাঁর পানে চেয়ে বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে যায়। কূল-কিনারা না পেয়ে, কেবল রবীন্দ্রনাথের গানের ভেলায় ভাসতে থাকি ঘোরলাগা আচ্ছন্নতা নিয়ে:
‘মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে/ আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে।’
সত্যিই স্টিফেন হকিং মহাবিশ্বের এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। মানুষের চিন্তার ইতিহাসে তিনি এক অতি বিস্ময়কর প্রকৃতিদ্রষ্টা। নইলে যার এত আউটস্ট্যান্ডিং প্রতিভা, এতো জ্ঞান-গরিমা, এতো রসবোধ তিনি কেন স্বল্প বয়সে চলৎশক্তি হারালেন? কেন তিনি স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারলেন না? প্রকৃতির কী নির্মম খেলা! এটা কী তাঁর কর্মফল নাকি ভাগ্যবিধাতা কর্তৃক পূর্ব-নির্ধারিত? নাকি পূর্বজন্মের পাপ? যদি সবকিছু পূর্ব-নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে মানুষের তো কিছু করার-ই থাকে না! হাজারো প্রশ্নের সুতীক্ষ্ন-ফলায় ভেতরটা ক্ষত-বিক্ষত হয় বারবার, কিন্তু উত্তর খুঁজে পাই না। আমি বিজ্ঞানের শিক্ষক নই, তারপরও এই বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর প্রতি এক ধরনের টান অনুভব করি। হয়তোবা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিজ্ঞান পড়েছি, তাই! স্টিফেন হকিং-এর বইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে ১৯৯৯-এর জানুয়ারিতে যখন মেহেরপুর সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তখন আমাদের জীবনে এক ঘোরলাগা কালপর্ব চলছে। এক ঝাঁক মেধাবী তরুণ তখন মেহেরপুর কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। কবীর রানা, দিদারুল ইসলাম, সিদ্ধার্থ শঙ্কর জোয়ার্দ্দার (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান), আজিজুর রহমার, খন্দকার মফিজুর রহমান, শফিউল আজম, অদ্বৈত কুমার রায়, কিশোরকুমার মহান্ত প্রমুখ। আরও আছেন অগ্রজপ্রতিম আব্দুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম (বর্তমানে মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ)। এদের মধ্যে কেউ সাহিত্য পড়ান, কেউ বিজ্ঞান, কেউবা অর্থনীতি-দর্শন-রাজনীতি। কিন্তু সবাই ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী ও অনুসন্ধিৎসু। চাকরি নিয়ে কেউ-ই সুখী ছিলেন না। প্রায় সবার মাঝে এক ধরনের দুঃখ-হতাশা কাজ করতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলোজফিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও শঙ্করদা কেন যে নিজ ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে পারলেন না, এ নিয়েও আমাদের মাঝে ক্ষোভ-দুঃখ ছিল।
কিন্তু সব ক্ষোভ-দুঃখ, সব ব্যথা-বেদনা ভুলে যেতাম যখন আমরা ক্লাসের পর মিলিত হতাম শিক্ষক লাউঞ্জে। ঘন্টার পর ঘন্টা তুমুল তর্ক চলতো শিক্ষক লাউঞ্জে। কখনো বিজ্ঞান-কবিতা, সাহিত্য-দর্শন নিয়ে; কখনো-বা চাকরি-বাকরি, ব্যাবসা-বাণিজ্য কিংবা আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে। তর্ক হতো মহাবিশ্বের সীমা-পরিসীমা নিয়ে। কেউ কেউ প্রশ্ন করতেন, মহাবিশ্ব কোথায় থেকে এলো? মহাবিশ্ব কী কখনও সৃষ্টি হয়েছে? আর কেনই বা সৃষ্টি হয়েছে? না সৃষ্টি হলেই বা কি হতো? মহাবিশ্বের সব কিছু কী পূর্ব-নির্ধারিত? ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা-মহামারি, কখন কোনটা আসবে, তাকি আগে থেকেই ঠিক করা আছে? মহাবিশ্ব নিয়ে কেউ কি পাশা খেলছেন? ‘সময়’ কী কখনও পশ্চাদগামী হতে পারে? এই মহাবিশ্ব কেনই-বা টিকে আছে? মানুষ ও প্রকৃতির রূপ যেমন দেখছি, তা এ রকম হল কেন? অন্য রকমও তো হতে পারতো। কত রকমের প্রশ্ন! একদিন স্টিফেন হকিং-এর ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ হাতে পেয়ে চোখের সামনে টানানো পর্দাটা সরে গেল। মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন করে কৌতূহল জেগে উঠলো মনের ভেতরে। বিজ্ঞান ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমার এত কৌতূহল ছিল যে, নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতাম তর্কের আসরকে। খুব সম্ভবত বিজ্ঞানমনস্ক-যুক্তিবাদী সহকর্মীদের নিবিড় সান্নিধ্য ও হকিং-এর বই-ই আমাকে কৌতূহলী করে তুলেছিল। হকিং-এর বইটি বিজ্ঞানের বই হলেও কোনো ভারী বই নয়, জনপ্রিয় বই বলতে যা বোঝায় তেমনটিই ছিল এটি। লেখক হিসেবে হকিং এমন ধরনের-ই একটি বই লিখতে চেয়েছিলেন, যেটা পথেঘাটে সর্বস্তরের মানুষ পড়তে পারবে। হকিং-এর টেক্সটা আমার পড়া হয়নি, আমার পঠিত বইটি ছিল শত্রুজিৎ দাশগুপ্তকৃত ভাষান্তর। শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত কৃত অনুবাদ গ্রন্থটি পড়ে জানতে পারলাম, মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এই সম্প্রসারণের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আরও জানতে পারলাম যে, মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, আরেক মহাদুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে এর বিনাশ হবে, কিন্তু ‘সময়’ কাল নিরবধি চলতে থাকবে। জগৎ ও তার সৃষ্টি-রহস্য সম্পর্কে জানতে গিয়ে ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ -এ এমন এক হকিং-এর সন্ধান পেলাম, যিনি একাধারে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ও তীব্র রসবোধসম্পন্ন লেখক। তার কাছে মহাবিশ্ব যেন এক পরিহাসময় ঠাট্টা। তার বইয়ের পাতায় পাতায় ঈশ্বর আছেন। কিন্তু সেই ঈশ্বর ইহুদি বা খ্রিস্টান ধর্মের ঈশ্বর নন। আবার দর্শনের ঈশ্বরও নন। তিনি যে-ঈশ্বরের কথা বলেছেন, সে ঈশ্বর আসলে বিজ্ঞানের ‘নৈর্ব্যক্তিক ঈশ্বর’ (ওসঢ়বৎংড়হধষ এড়ফ) । এই ঈশ্বর আসলে কিছুই করেন না। তিনি আছেন মহাবিশ্বের এক প্রান্তে, যিনি সব কিছু পরিচালনা করেন সূত্র অনুসারে। যে-ঈশ্বর ছ’দিনে বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করে সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেন, তেমন ঈশ্বরের কথা তিনি বলেননি। স্টিফেন হকিং-এর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ভারতীয় সাংখ্য দর্শনের খানিকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সাংখ্য-দর্শনে বলা হয়েছে যে, প্রকৃতির বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব ও জীবজগৎ সৃষ্টি হয়েছে। এক অনিবার্য কারণে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং স্থিতিকালের সমাপ্তিতে এর প্রলয়ও অনিবার্য। প্রলয়ের পর আবারও নতুন করে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারে। প্রলয় কিংবা সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করেন না, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সবকিছু সম্পন্ন হয়, এটাই সাংখ্য দর্শনের সারমর্ম। আসলে হকিং-এর মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কীয় তত্ত্ব মানলে সাংখ্য-দর্শনের বিবর্তনবাদ মানতে হয়। পদার্থবিদ্যা ও গণিতের সূত্র প্রয়োগ করেও বলা যায় যে, মহাবিশ্বে যা কিছু হচ্ছে, তা নিয়ম অনুসারেই হচ্ছে। এটা যেন চালু-করা বিরাট কম্পিউটার মতো যেন অনবরত প্রোগ্রাম মেনে কাজ করে চলেছে। যেন মহাবিশ্বে মহাকাশে সর্বত্র গাণিতিক নিয়মের জয়ডঙ্কা। পৃথিবীতে যা ঘটছে তার সবই পূর্বনির্ধারিত। সেই অর্থে, বিশ্ব্রহ্মান্ড টা একটা নিয়মের আধার, নিয়মের বাইরে কিচ্ছু হয়না। ফসল বোনা, ফসল কাটা, নক্ষত্রের গতিবিধি, চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ সবই নিয়ম মাফিক হয়।
ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ, কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন, মহাকাশে নভোযান প্রেরণ- সবই অংক কষে নিয়ম অনুসারে করা হয়। ঘরে বসেই আমরা বলে দিতে পারি, কখন বৃষ্টি হবে, কখন ঝড় হবে। আম্পান বা‘যশ’ ক’টার সময় সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানবে, ক’টার সময় কলকাতা মহানগর তছনছ করবে। আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি, নক্ষত্রের পতন, ঋতু পরিক্রমা সবই আসলে নিয়ম মাফিক সুসম্পন্ন হয়। কোভিড-১৯ এর আবির্ভাবও প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়েছে। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মের কাছে পরাস্ত হয়ে করোনাভাইসের বিদায়ঘন্টা বাজবে। সবকিছুই নিয়ম মাফিক, নিশ্চিত এবং এক অর্থে পূর্বনির্ধারিত। মহাবিশ্বের কোথাও অনিয়ম বা অনিশ্চায়তা নেই। ‘ছন্দে উঠিছে চন্দ্রিমা, ছন্দে উঠিছে রবি তারা। প্রকৃতিতেও অনিয়ম নেই, সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনেও অনিয়ম থাকতে নেই। অনিয়ম হলেই বিপর্য়য় ঘটবে। আইনস্টাইনের মতো হকিংও বলেছেন,“ ঈশ্বর কি পাশা খেলেন?” না, তিনি পাশা খেলেন না। সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত নিয়ম অনুসারেই সংঘটিত হয়। তাই বস্তুর গতি প্রকৃতি একবার বুঝে ফেলতে পারলে সবকিছু নির্ভুলভাবে অংক কষে বের করা যায়। যার মধ্যে গাণিতিক জ্ঞান, সমাজতাত্ত্বিক বিচক্ষণতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা রয়েছে, সে খুব সহজেই বলে দিতে পারবেন, জো বাইডেন, ভ্লাদিমির পুতিন, এরদোগান ও নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ভবিতব্য কী হবে? আগামী দিনের বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, শেয়ার বাজার, প্রবৃদ্ধির হার কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তাও ব্যাখ্যা করতে পারবেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভবিষ্যত কী, তাও আগাম বলে দেয়া যাবে। বিশ্ব নিখিলের সর্বত্র যে-নিয়মের বীণা বেজে চলেছে তার গ্রামার যদি আবিষ্কার করা যায়, তাহলে আগামীদিনের দুনিয়া কেমন হবে, তা অনায়াসে ব্যাখ্যা করা যাবে। নিউটন-আইনস্টাইন হকিং-এর মতো বিজ্ঞানীরা এটা করেছেন গণিত-ফিজিক্সের সূত্র প্রয়োগ করে আর আল্লামা ইকবাল-রবীন্দ্রনাথের মতো কবি-দার্শনিকরা করেছেন দার্শনিক উপলব্ধি দিয়ে। বিশ্বপ্রকৃতির নিগূঢ় রহস্য ফিজিক্সের সূত্র প্রয়োগ করেও ব্যাখ্যা করা যায়, আবার মেটাফিজিক্স-ফিলোজফি দিয়েও করা যায়। এ কারণে সম্ভবত এরিস্টটল দৃশ্যমান জগতের নিগূঢ় রহস্য ব্যাখ্যার জন্য ফিজিক্সের পাশাপাশি মেটাফিজিক্স বইটা রচনা করেন। পদার্থবিজ্ঞান ও সাংখ্য দর্শনে ঈশ্বরকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। বিজ্ঞানী হকিং-এর নিরাসক্ত মন ফিলোজফি বা মেটাফিজিক্স বুঝতে চায়নি। এ কারণে সম্ভবত প্রতিভাধর বিজ্ঞানী হয়েও হকিং ঈশ্বরের সন্ধান পাননি। ঈশ্বরের সন্ধান যদি পেতেন, তাহলে নিশ্চয় ফিলোজফির নির্ধারণবাদ ও বিজ্ঞানের বিবর্তনবাদের মধ্যে মিল খুঁজে পেতেন। আসলে দুটো জিনিসই এক, যেটুকু অমিল রয়েছে তা কেবল ব্যাখ্যাগত অমিল। বিজ্ঞানের মতো ফিলোসফিরও কোনো জাত নেই, শত্রু-মিত্র নেই। এরা অনেকটা প্রমোদবালাদের মতো। যথোচিত‘পাওনা’ পেলে এরা প্রেম দেয়, সেবা দেয়। জগতের জন্ম রহস্য ও ভবিতব্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা হকিং এর মতো বিজ্ঞানের সূত্র প্রয়োগ করেও করা যায়, আবার দর্শন দিয়েও করা যেতে পারে।
আবদুল্লাহ আল আমিন: লেখক ও গবেষক। সহযোগী অধ্যাপক, মেহেরপুর সরকারি
কলেজ, মেহেরপুর।
বানানগুলো কোথাও কোথাও এলোমেলো হয়ে গেছে। একটু সতর্ক হওয়া দরকার।