অণুগল্প।। হানিমুন।। ছন্দা সরকার

শুনেছি বিশাল সমুদ্রের সামনে এলে মানুষের দুঃখগুলো অনেক ক্ষুদ্র হয়ে যায়। কক্সবাজারে হানিমুনে এসে আনন্দে মুখরিত সবার মাঝে এক ব্যক্তি মুখভর্তি লম্বা দাঁড়িতে সমুদ্রের দিকে আনমনে তাকিয়েই আছেন কি যেন হারিয়েছেন। দুঃখে ভারাক্রান্ত ব্যক্তিটির চোখে জলও লক্ষ্য করলাম।কৌতুহলের জন্য তাকে প্রশ্ন করলাম। প্রথমে চুপ করে থাকলেও পরে তার দুঃখের কাহিনী বলেন। উনার নাম অর্নব।

সময়টা ছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস। দীর্ঘ সাত বছর রিলেশন করে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে অর্নব মিষ্টি মেয়ে আরুহিকে। সদ্য বিবাহিত অর্নব ও আরুহির জীবন ভরে উঠেছিল ফাগুনের ফুলের সমাহারে। রাজশাহী শহরে ছিল তাদের বসবাস। স্ত্রী আরুহির ছোট বেলা থেকে সমুদ্রে দেখার প্রবল ইচ্ছে। অর্নব আরুহিকে কথা দিয়েছিল আরুহির ইচ্ছে পূরণ করার জন্য হানিমুনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যাবে।

বিয়ের সাত দিন পর রাতে তারা হানিমুন করতে কক্সবাজারে পৌঁছে হোটেলে উঠে।পরের দিন সকালে সমুদ্র সৈকতে যায় তারা। নীল রঙের শাড়িতে আরুহির খুশি ছিল দেখার মত। আনন্দে উচ্ছ্বসিত আরুহি অর্নবকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল- শুধু তোমার জন্যই আমার স্বপ্ন সত্যি হল অনেক ভালবাসি তোমায় অর্নব! অর্নবও বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল- সারাজীবন এইভাবেই ভালোবাসা পাই যেন তোমার !

সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউ এসে তাদের ভিজিয়ে দেয়। সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে কম জল মনে করে আরুহি অর্নবের কাছ থেকে বেশ দুরে চলে যায়। হঠাৎ একটা বড় ঢেউ এসে আরুহিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।আরুহির চিৎকারে ছুটে যায় অর্নব ও আশেপাশের আরও কয়েকজন মানুষ উদ্ধারের জন্য। কিন্তু খুঁজেও পায় না।চোখের পলকেই আরুহিকে অর্নবের জীবন থেকে ছিনিয়ে নেয় সমুদ্রের ঢেউ।

হানিমুনের আনন্দ শোকে পরিনত হয় যেন এক মুহূর্তেই। আরুহিকে হারিয়ে সমুদ্র সৈকতে শোকের কান্নায় অর্নব পাগলের মত অবস্থা। তারপর থেকে অর্নব আর নিজের দেশে ফিরে যায়নি কক্সবাজারেই রয়ে গেছেন। আরুহির স্মৃতিতে ক্ষত বুক নিয়ে সমুদ্র সৈকতে এসে ছলনাময়ী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকেন আনমনে। কখনও নির্জন মনে হাটতে থাকেন। এখন এই ভাবেই দিন অতিবাহিত হয় অর্নবের ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *