অণুগল্প

অণুগল্প।। মোহমায়া।। তাসলিমা কবীর রিংকি

বছর তিনেক ধরে স্বনামধন্য কোম্পানীতে এ্যাকাউন্টেট হিসেবে জব করি। অধ্যাপক ডাক্তার বাবার ছোট ছেলে আমি। তাই, বাবাকে বা সংসারে টাকা দিতে হয়না।
অনেকবার বাবাকে টাকা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। বাবা বলে, আমি এখনো বেঁচে আছি, তুমি তোমার নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে নাও।
দুই বছর হলো ধুমধাম করে বাবা আমার বিয়ে দিয়েছে।
শহরের শীর্ষ এক ব্যবসায়ী বাবার ইউনিভার্সিটির বন্ধু ছিলেন। বিয়েটা হলো বাবার সেই বন্ধুর মেয়ের সাথে।
দেখতে মোটামুটি একে বারে খারাপ না।
কিন্তু আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না, আমি আমার বন্ধুর বোন বন্যাকে পচ্ছন্দ করতাম। সে কিছুদিনের মধ্যেই ভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কোন জব খুঁজে নিব।
মা’কে চুপিচুপি তা বলতেই সরাসরি না করে দিলো,
আমি অপরিচিত কোন মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিবো না। তাছাড়া তোমার বাবাও মেনে নিবেন বলে মনে হয় না।
মা প্লিজ বন্যাকে আমি অনেক ভালোবাসি।
যাকে আমরা তোমার জন্য পচ্ছন্দ করেছি তাকেই বিয়ে করতে হবে, আর হা বাবলিকে তো তুমি এখনো দেখোনি,
কাল গিয়ে একবার দেখে এসো, দেখলে মনে হয় বন্যাকে ভুলে যাবে।
সামনে ইন্টার পরিক্ষা দিবে, আমরা চাই তার আগেই বিয়েটা হয়ে যাক।
মানুষ পরিক্ষার জন্য বিয়ে পিছিয়ে দেয়, আর তোমরা কি-না আগে দিতে চাও?
হা চাই, কারন আমি তাকে গাইড করবো।
তাদের মেয়ে সারাজীবন তারা করে এসেছে এখন আবার তোমারও দরদ উথলে উঠলো?
এতো কথা বলো কেনো? যা বলছি করো, আগে গিয়ে দেখে এসো, তারপর এ নিয়ে কথা বলবো।

মা’র সাথে জোরাজোরি করে লাভ নেই দেখে পরের দিন দুজন বন্ধু নিয়ে কনে দেখতে গেলাম।
বাবা কল করে তার কলিগ-কে আমাদের আসার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছে।
ভালোই আপ্যায়ন করলো।
কনে এলো, কিন্তু কি বুঝবো দেখে, পার্লার থেকে সাজিয়ে এনে বসিয়ে দিয়েছে আমাদের সামনে, মুখে তো মনে হচ্ছে এক মন আটা মেখে আছে, মনে মনে রাগ হলো তা দেখে। আটপোড়ে তাঁতের জামদানী শাড়ী পরা খোলা চুলে। শুধু এইটুকুই ভালো লাগার।

হবু শশুরের বাসা থেকে বেরিয়ে সিগারেট ধরালাম, অনেকক্ষণ থেকে গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাকে আনমনা দেখে সাথের বন্ধুরা বার বার জানতে চাইলো কি হয়েছে?
কিছু না।
কনে কি তোর পচ্ছন্দ হয় নি?
না তা না, আসলে তোরা তো বন্যার কথা জানিস, কি যে করি বুঝে উঠতে পারছি না। আসল কথা হলো বন্যার জন্য মাথায় আমার সাইক্লোন চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *