দুটি অণুগল্প।। তৃষা ও রিজিক।। শব্দনীল
রিজিক
অফিসের পথে একটি কফিনের দোকান আছে। আসতে-যেতে কদিন আগেও দোকানীর বিরস মুখে পান চিবাতে দেখতাম। ইদানীং তার মুখে খুশির জেল্লা খেলা করতে দেখি। পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে বেস বুঝতে পারি। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন দোকনটির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি ঠিক বুঝতে পারিনি। ঘোর কাটলো দোকানীর ডাক শুনে। মুখের সামনে এসে ভ্রু নাচাতে নাচাতে প্রশ্ন করলো- মামা কী চাই?
তার পান চিবানো রাঙ্গা মুখ দেখে আমতা আমতা করে বললাম- দাম কতো?
সঙ্গে সঙ্গে মুখ করুণ করে বলো, বুঝলে মামা পেট কারো কথা শুনে না। তাই এই ব্যবসা। কিছু মনে করেন না, গ্যাছে কে?
- কেউ না, হঠাৎ মনে হলো তাই…
তার কৌতুহলি চোখ আমাকে সম্পূর্ণ দেখে দোকানের ভেতর যাওয়ার ইঙ্গিত করলো। ভেতরে গিয়ে দোকানীর টেবিলের সামনে বসতেই সে বলে উঠলো, দিনকাল ভালো না মামা। এসবের খোঁজ আগেই রাখা ভালো। কদিন পরে তো সাপ্লাইয়ের টানাটানি পড়বে। আপনি মামা বুদ্ধিমান তা কোন কিসিমের নিবেন, তিন কিসিমের আছে?
নিম্নবিত্ত
মধ্যবিত্ত
উচ্চবিত্ত
শেষ বিদায় বলে কথা, একটু ভাল কাঠের বা ভালো দামের না হলে সমাজে আপনার রেখে যাওয়া মানুষগুলো মুখ দেখাবে কি করে বলুন?
ভালো কাঠেরও আছে, তয় দাম একটু বেশি। পাঁচ হাজার। এই সময়ের তুলনায় দামডা একটু বেশি। কি করবো কন, সাপ্লাই কম আবার অন্য দিকে তরিতরকারির দাম হুঁ হুঁ বাড়ছে। বেঁচে থাকন বড় দায় মামা।
কফিনে রিজিক, বুঝলা মামা। সব তারই দয়া।
তৃষা
- আচ্ছা, আপনি অভিমান করেন?
পরন্ত বিকালে উড়ে যাওয়া পাখি দেখতে দেখতে হঠাৎ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো তৃষা। - পৃথিবী ভালোবাসাময়। রাগ, ক্ষোভ, অভিযোগ বা অভিমান স্বার্থসিদ্ধি হয়।
- ওই হ্যালো, লেকচার শুনতে চাইনি। প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি শুধু।
- যাও কেনো খুঁজতে?
- আক্ষেপ থেকে।
- আক্ষেপ! সে তো অভাববোধ থেকে হয়। তোমার অভাব আছে বুঝি?
গোধূলির শেষ আলোর মতো আমার চোখের সামনে নিভে যেতেযেতে সেদিন বলেছিলো, আবার দেখা হলে উত্তর দিবো, এখন চলুন।
তৃষার শ্বাসকষ্ট ছিলো। আজ সকালেই খবর পেলাম করোনার ছোবলের আগেই কোর পালমোনাল খেয়ে দিয়েছে তাকে।
গত পরশু তার দেওয়া শেষ টেক্স এখনো চোখে ভাসছে-
‘মাটির খাঁচায় ঢুইকা গ্যাছে ভয়
পোষা পাখি আকাশ ছুঁতে চায়।’