সাজিদ মোহন- এর কিশোর কবিতা
দুপুর
আলসেকুঁড়ে ক্লান্ত দুপুর
পাতা-পাখার বাতাসে চোখ
একটু লেগেছিলো
হঠাৎ ছোট বুলবুলিটা
উদাস করে দিলো, তাকে
পাগল করে দিলো।
মিষ্টি করে ডাকলো পাখি-
দুপুর, ওগো দুপুর
গুল্মবনে হঠাৎ শুনে
দুষ্ট কারো নুপূর।
স্বপ্ন ভেবেছিলো দুপুর
দুচোখ ছিলো বোঁজা
খালের পাড়ে ফুটেছে জুঁই
ফুটেছে হারগোজা।
কনকচাঁপার গন্ধে বাতাস
স্নিগ্ধ হলো আরও
বিরতিহীন ঝিঁঝির ডাকে
ঘুম আসে না কারও।
ঘুম আসে না দীঘির পাড়ে
নরম শটিফুলের
ঘুম না আসা দুষ্ট মেয়ে
সারা দুপুর ঘুরে, ছায়ায়
বসলো বটমূলের।
তাকে দেখেই বুলবুলিটা
ডাকলো- দুপুর… দুপুর
স্বপ্ন ভেঙে দেখলো দুপুর
ঘুম না আসা মেয়ের পায়ে
সত্যি দুটি নুপূর।
ইতিহাসের পাতায় দেখ
সমুদ্র কি তোমার
নাকি হাঙর,শুশুক মাছের?
এই পৃথিবী
নয় তো তোমার একার
এই পৃথিবী শিমুল পলাশ গাছের।
এই পৃথিবী পাখির
এই পৃথিবী ফুলের
হঠাৎ এসে ভাগ বসিয়ে
কদিন পরেই কাঁদবে তুমি
গুনবে মাশুল ভুলের।
তোমার ঘরে দেয় দেয়নি হানা
কখনো বাঘ-শেয়াল
উল্টো তুমিই বন জ্বালিয়ে
গড়ছ আবাস পাহাড় কেটে
তুলছ বিভেদ দেয়াল।
এক পা দু পা আকাশটাও
করছ তুমি দখল
আসছে সময় প্রমাণ হবে
আসল কে আর নকল।
পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন
প্রথম বসুন্ধরায়
ইতিহাসের পাতায় দেখ
মিথ্যে অহমিকা তোমার
পথের ধূলোয় গড়ায়।
কি নিয়ে লিখব বলো
কি নিয়ে লিখব আমি
বুনো ঝোপে পাখি
আগের মতন করে
না যে ডাকাডাকি।
পথের দুপাশে ছিলো
ফুলেরা অচেনা
শুনেছি পাহাড় নাকি
হয়ে গেছে কেনা!
আকাশ হয়েছে কেনা
কতদিন আগে
মেঘগুলো নিয়ে গেলে
ওরা ভাগে ভাগে,
কি হবে তখন আহা
কি হবে জানি না
পাহাড় কাঁদবে একা
প্রিয় মেঘহীনা!
কেনা হয়ে গেলে নদী
সাগরের জলও
কি নিয়ে লিখবে কবি
বলো, তুমি বলো?
নিজের ভাজে লুকিয়ে
চোখ পড়েছে এখন আমার
ফুলের দিকে
যে ফুলগুলো অবহেলায়
থাকতো ফুটে বারান্দাতে,
আমার ভীষণ ব্যস্ততাতে
হয়নি ছোয়া কখনো তার
সবুজ পাতা
ফুটতো তারা নিজের মত
দিনে রাতে।
তাকাই দেখি মুখটি কেমন
মায়া মায়া
আমার দিকে তাকিয়ে আছে
লক্ষ কোটি অভিমানে
কখনো তো চাইনি আমি
জানতে আহা
মিষ্টি কোমল দোপাটিটির
একটা কোন কথার মানে।
আদর করে হাত বোলাতেই
লজ্জা পেয়ে নিজের শরীর
গুটিয়ে নিলো লজ্জাবতী
উড়ে উড়ে ফুলের উপর
যাচ্ছে উড়ে প্রজাপতি।
রাগি রাগি চোখ মেলে সে
তাকিয়ে আছে আমার দিকে
যেন আমি উড়ে এসে
আগুন্তুক এক
ছুঁয়ে দিলাম ঘনিষ্ট তার বান্ধবীকে।
একটু দূরে সরে যেতেই
পাপড়ি মেলে ধরলো গোলাপ
পাপড়ি মেলে ধরলো জবা
উড়ে এসে প্রজাপতি
বসলো গিয়ে গন্ধরাজে
দেখে দেখে আমি নিজেই
লজ্জাবতীর পাতার মতো
লুকিয়ে গেলাম নিজের ভাজে।
একটু ভালোবেসো
একটা ছোটো চিরল বিরল
গাছ লাগালাম আমি
গাছটা শুধু গাছ না যেন
সোনার চেয়ে দামি।
একটু বড় হতেই গাছে
বাঁধলো পাখি বাসা
উঠলো জমে গাছের ডালে
পাখির ভালোবাসা।
কদিন পরে বাড়লো গাছের
ডালপালা ও পাতা
গাছের নিচে বসলো এসে
একটা ছেলে
বৃষ্টি এসে বাতাস যখন
উড়িয়ে নিলো ছাতা।
রৌদ্র খরতাপে
বসলো এসে ক্লান্ত পথিক
গাছ বিছালো ছায়া
গাছটা যেন মাতৃস্নেহ
গাছটা যেন মায়া।
কদিন যেতে গাছের শাখা
সাজলো ফলে ফুলে
গাছটা তখন তার হৃদয়ের
দরজা দিলো খুলে।
তার হৃদয়ের দরজা খুলে
ডাকলো এসো এসো
তোমার হৃদয় দরজা খুলে
একটু দিয়ো আদর তাকে
একটু ভালোবেসো।
ভালো লেগেছে। বেশ নতুনত্ব আছে।