ঈদসংখ্যার কবিতা।। অসীম সাহা

রাজনীতিক!

রাজনীতিতে লজ্জা-শরম কারো কারোর নাই কিছু
পেট হয়ে যায় টাকার গুদাম, মন হয়ে যায় খুব নিচু।
ধান্ধাবাজি, মাস্তানি আর ওস্তাদ খুব ঘুষ খেতে
নানারকম ফন্দি-ফিকির—লুচ্চামিতেও রয় মেতে!
কাজ থাকুক আর নাই বা থাকুক, বিদেশেতে ট্যুর ফেলে
এক সফরে লক্ষ লক্ষ, ছাড়ে কেউ আর তাই পেলে?
বাপের যাদের নাম-ঠিকানা খুঁজতে গেলে ঘাম ঝরে
রাজনীতিকের তকমা পেলে সিঁধ কাটে তাই নিজ-ঘরে।
ফকিন্নিদের পোলারা কি রাজনীতিতে নাম লেখে?
এদের মধ্যে কেউ বা আবার পদ পেয়ে যায় তেল মেখে!

কেউ বা আবার ঘুরে বেড়ায় বুদ্ধিজীবীর ছাপ মেরে
কেউ বা আবার বিখ্যাত হয় সৎ মানুষের ভাত মেরে।
রাজনীতিতে সৎ মানুষের দেখছি এখন অভাব খুব
জ্ঞানী এবং সুশিক্ষিত দেখলে তারা মারছে ডুব!

তাই তো এখন নেয় না জনম তাজ্উদ্দীন আর শেখ মুজিব
অন্ধকারেও জ্বালায় না আর দেশের ঘরে কেউ প্রদীপ।
এমন করেই চলছে এদেশ—সত্যি কথা বললে পর
গুম হবে সে হঠাৎ করে, খুঁড়বে হাতে নিজ-কবর।
আজব দেশের আজব কথা, বলবো আমি আর কতো?
না ভাই আমি চুপ করে যাই, জানটা বাঁচুক অন্তত।

অগ্নির কাছে প্রার্থনা

আজ রাতে তুমি আমাকে প্রজ্বলিত করো।
আমি ভীরুতাকে জয় করে তোমার কাছেই আজ আত্মসমর্পণ করলাম।
এই আমার উপশম, এই আমার অন্তিম উদ্ধার।

আমি প্রবীণ সন্ন্যাসীর মতো
বহুদিন লৌহকঠিন বেষ্টনীর অন্তরালে ডুবে থেকে
নিজের কামনার অগ্নিতে দগ্ধ হয়েছি;
দেবতার অভিশাপে স্বর্গভ্রষ্ট মানবের প্রতিকৃতিতেও
মানুষেরা দেবতাজ্ঞানে মাল্যদান করেছে আমার পদতলে।
আমি ভীরুতাকে মেনে নিয়েছি উপাসনা বলে—
আমার এই জনমনিষ্যিহীন অন্তর্গত গভীর আশ্রমে
আমি ছাড়া আর কেউ আমার সঙ্গী নয়
শুধু ঝরাপাতা, পুষ্পপল্লব আর রাত্রির অন্ধকারে
গভীর অরণ্য-প্রদেশের প্রাণিকুল ছাড়া
আমি আর কারো শ্রুতির সঙ্গেও পরিচিত নই।

আজ এই মধ্যরাতে আমার আশ্রমের অদূরে
আকস্মিক যে অগ্নিকে আমি প্রত্যক্ষ করেছি
তার সঙ্গে একমাত্র তুলনা করা চলে
ঝড়ের রাতের উত্তুঙ্গ বজ্রশিখার।
কিন্তু তারপরও সে-তো তুমি নও।

তোমার দহনে আমি দগ্ধ হই, কিন্তু তুমি আমাকে পুড়িয়ে মারো না
তোমার উত্তাপে আমি উষ্ণ হই, কিন্তু তুমি আমাকে ভস্ম করে ফেলো না।
তাই তোমার অগ্নিতে প্রজ্বলিত হবার জন্যেই
আজ রাতে এই আমার আত্মসমর্পণ!

তুমি আমাকে আলিঙ্গন করো
হে আমার চিরকালের অগ্নি।

প্রেম-৪

আমাকে নেবে না তোমার হৃদয়ে
ব্যাকুুলতা ভরা গানে—
আমাকে নেবে না বিভোর রাত্রে
তোমার নিভৃত প্রাণে?
আমাকে নেবে না তোমার বাগানে
যেখানে গোলাপ ফোটে;
আমাকে নেবে না তোমার গভীরে
যেখানে মায়াবী ঠোঁটে—
তৃষ্ণা-প্লাবন প্রবল আবেগে
ছোটে বৃন্তের দিকে;
যখন তোমার সকল শরীর
ছুঁয়ে দেয় প্রকৃতিকে?
তখন আমার কম্পিত দেহে
রাতের প্রহর নামে;
তখন আমাকে ঢেকে রাখো তুমি
প্রণয়ের নীল খামে!
এভাবে আমরা দু’জনে দু’জন
মিশে যাই ‍এক স্রোতে;
আমাদের প্রেম ছড়িয়ে পড়ুক
প্রণয়ের বিশ্বতে।

প্রেম-৩

স্বর্গের হুরি তুমি, স্বর্গের রানি;
চোখে চোখে, মনে মনে হলো জানাজানি।
তুমি ‍এলে জ্যোতি নিয়ে পৃথিবীর ’পরে;
তুমি ‍এলে চুপি চুপি ‍এই অন্তরে।
স্বর্গের হুরি বলো, “তুমি কি আমার?
এসেছো কি ফেলে তুমি, স্মৃতির খামার?”
মর্ত্যে ‍এসেছো যদি ভুলে যাও স্মৃতি;
মানুষের হয়ে তুমি রেখে যাও কৃতি।
তুমি জানো, মানুষের আমি প্রতিনিধি;
তুমি তো জানো না রীতি, আর বাকি বিধি।
তোমার জন্যে তবু ‍এ-মন আকুল;
তোমার গর্ভে আছে মানবিক ফুল।
তুমি সে-মানবী-শিশু দাও ‍উপহার;
তোমার-আমার ভ্রূণে জন্ম যে তার।
তুমি কাছে চলে ‍এসো, ও আমার মিতা;
পৃথিবীজুড়ানো ‍এক প্রিয় সংহিতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *