ঈদসংখ্যার কবিতা।। নওশাদ জামিল
রহস্য নোঙর
গভীর গহনস্রোতে চোখ রেখে বলি
হাতে হাতখানি ধরো—এসো, ঝাঁপ দিই
অতল জলের পিঠে ভাসাব সংসার
পাখায় পাখায় মেলে দেব লীলানাট
হাতটি বাড়াও স্রোতস্বিনী—ভেসে ভেসে
স্বপ্নে-পাওয়া ভেলা নিয়ে যাবে দূরদ্বীপে
হৃদয়বরণ ঘাটে যদি থামে ভেলা
মনে রেখো প্রেম এক রহস্য নোঙর!
হৃদমূলে, রক্তস্রোতে কী এক দহন
হাতটি বাড়াও স্রোতস্বিনী—ঝড়জলে
ভেসে ভেসে পাড়ি দেব প্রলয়পিঞ্জর
কোথায় সে দূরদ্বীপ, জলে ভেজা ঘাস?
প্রেমের প্রবালদ্বীপে চোখ রেখে বলি
জীবন কি শুধু ভেসে যাওয়া, ডুবে যাওয়া?
স্তব্ধতার গান
স্তব্ধতার গান নেমে এল
দুজনের মাঝখানে–ভাবি
স্তব্ধতার কাছে ঋণী খুব
এই যে নিমগ্ন তানপুরা
বৃষ্টিশেষে ভেজা পথ ধরে
কিছুক্ষণ হেঁটেছিল–তার
কাছেও আমার খুব দায়
এই যে তবলা–ঘুরে ঘুরে
কিছুদিন নেচেছিল, তার
কাছেও অনেক দেনা বাকি।
পৃখিবীর বুকে তুড়ি মেরে
গান গায়–অন্ধ যে ভিক্ষুক
ভাবি তার কথা–তার গান
দেখা না হলেও আছো তুমি।
বিভ্রমের হাসি
মাঝে মাঝে এ-রকম হয়
উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরেফিরে
ঘরে ফিরি, চলে আসি একা
পথ ভুলে। শৈত্যপ্রবাহের
সঙ্গে মিলেমিশে উড়ে গেছে
সেইসব পাখি–চুপি চুপি
তাদের ডানায় ভেসে ভেসে
ঘরে ফিরি–কোথায় সে ঘর?
দূর শূন্যে ঝুলে আছে ঘর
পৃথিবীর এই ক্ষুধা-শান্তি
ময়ূরশয্যার স্মৃতি যেন
সবকিছু বিভ্রমের হাসি
সব ফেলে চলে আসি একা
মহাশূন্যে–সোনার সিঁড়িতে।