ঈদসংখ্যার কবিতা।। রেজাউদ্দিন স্টালিন

উৎসর্গ

ইবনে বতুতা ভারতবর্ষ থেকে ইন্দোনেশিয়ায় রাজার দরবারে পৌঁছলো
তার বয়স হবে প্রায় অর্ধশত
রাজার দুদিকে সারিবদ্ধ অমাত্য
প্রজাবর্গ আর মাঝখানে এক যুবক বিশ বসন্তের দাগ তার দেহে
সে নিজের ঘাড়ে তাক করে রেখেছে তরবারি :
হে মহান রাজা আপনার অভিষেক আমি দাঁড়িয়েছি আত্মোৎসর্গ করতে
দেখুন আমরা বংশপরম্পরায় প্রদর্শন
করেছি আনুগত্য
আমার পিতা,তার পিতা তারও পিতা
মহোৎসবে জীবন দিয়ে প্রকাশ করেছে আনন্দ
আজ আমি এসেছি নির্ভয়ে মৃত্যুকে দেখতে
তারপর যুবকের ঘাড়ের তরবারি কোঁকিয়ে উঠলো
আর খণ্ডিত মস্তক গড়িয়ে গিয়ে থামলো রাজার পায়ের সামনে
করতালিতে চমকে উঠলো কুকুর
ভীষণ আনন্দ ও আবেগে
রাজা চুমু খেলো রাণীকে
রাণীমা বললেন- ওর স্ত্রী ও সন্তানদের
জায়গা দাও দরবারের কাছে কোথাও
যেন আমার সন্তানের অভিষেক হয়
ওর পুত্রের উৎসর্গ দিয়ে

রক্তের সরু রেখা ব্যবধান তৈরি করে দেয়
আকাশ উল্টে যায়
আর বিভক্ত হয় অসংখ্য মানুষের মাথা থেকে মেরুদণ্ড

কোটি কোটি মুণ্ডহীন লোক
কৃতদাসের ভঙ্গিতে দৃশ্যমান

বেথেল হেমের পথে হাঁটছে তারা নিঃশব্দে
একটি শক্তিশালী পুনরুত্থানের আশায়
ত্রাতা আসবেন- কথা বলবেন

একটা কাটা গলা কথা বলতে পারে না
কৃতদাস মৃত্যুর পরেও কৃতদাস

ইবনে বতুতা এবার ইন্দোনেশিয়া থেকে যাবেন নতুন কোনো দেশে
নতুন উৎসর্গের আমন্ত্রণে

পারদের পৃথিবী

বাজপাখির ডিমে পারদ ভরে মুখে রাখলে মানুষ উড়তে পারে

মানুষ পাখির প্রতিদ্বন্দ্বী
তার চোখের মধ্যে দুটো বিমান
কানের ভেতর ক্ষেপণাস্ত্র
মুখের গর্ভে বারুদের বস্তা

মানুষের পছন্দ মাছের কঙ্কাল
নীলকন্ঠ পাখির পালক
মৃত বাঘের চোখ
আর অনাথ ক্ষুদিরামের ফাঁসি

ধনীদের যুদ্ধ খুব অপছন্দ
ভোগের মাত্রা কমে যায়
গরীব যুদ্ধ ভালোবাসে
যুদ্ধ ভুলিয়ে দেয় ক্ষুধা

ভবিষ্যতে বারগুলোতে মদের সাথে পানি বিক্রি হবে পেগে
পাহাড় গলিয়ে ডিমের মামলেট হবে
গাছের রোস্ট হবে উপাদেয়
মাটির নিচের পৃথিবীতে যারা বাস করে তাদের প্রিয় খাবার মানুষের মাংস

মানুষ পছন্দ করে পুরাতন
অপেক্ষা করে নতুনের
সুন্দরীরা বসে আছে যিশু পুনরুত্থিত
হলে তাকে বিয়ে করবে

পৃথিবীর সেটাই সবচে সুন্দর শহর
যে শহর কেউ কখনো যায়নি
সবচে সুন্দর নারীকে কেউ কখনো
দেখেনি
সবচে সুন্দর কবিতা যা পড়া হয়নি

মানুষ উড়তে শিখলে আর পৃথিবীতে
ফিরবে না

দ্বৈপায়ন

তোমারজন্য আমার চোখে জলআসে
আনন্দ ও যন্ত্রণা ঢের চারপাশে।
সব প্রাণী তার অনুভূতি বলতে চায়,
চোখের চেয়ে মুখের ভাষা কৃষ্ণকায়।

হৃদয় বেশি রহস্যময় পৌরানিক,
সেইখানে কে জায়গা পাবে দার্শনিক –
কবি নাকি শিল্পী কোনো রাজন্য?
ভিন্ন পেশা প্রত্যেকেরই কাজঅন্য।

কার হৃদয়ে কে ঠাঁই পাবে গুপ্তধন,
আলীবাবা জানতে পারে বিলক্ষণ।
মন্ত্র ভুলে ঘুরতে থাকা লক্ষ লোক,
যপছে কেবল হৃদয় ভুলে চণ্ডাশোক।

তোমারজন্য আমারচোখে জল আসে
চন্দ্র নাকি সূর্য থাকো কার পাশে?
এক বাহুতে ঠাঁই পেয়েছে রক্মিনী,
অন্য বাহু তোমার প্রতি দিনদিনই-

যাচ্ছে ছুটে ক্লান্তিবিহীন দ্বৈপায়ন,
বাল্মিকী ফের লিখছে নতুন রামায়ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *