ঈদসংখ্যার কবিতা।। ফকির ইলিয়াস
শিলা,জলজ ছায়ার প্রাচীর
ছায়া দিয়ে ঢেকে রাখা প্রাচীর আমার আদেশ মানে’নি। বৃষ্টিও শোনে’নি
পুরনো গর্জনের আদিকথা। যারা নতুন ঢেউয়ের আরাধনা করে- যারা;
বর্যার যৌবনকে নিজেদের যৌবন ভেবে নদীতে কাটে সাঁতার-তারা কারো
আদেশ না মেনেই ডুব দেয়া শিখে। রপ্ত করে উজান বাওয়ার কারুকাজ।
ফুঁ ও ফাঁদের পার্থক্য জেনে যে মন শিলা দিয়ে বানাতে পারে হৃদয়ের ঢাকনা
সে চিরকালই থেকে যায় শ্রীজন্মের দাস হয়ে। কোনো দাসী তার পাশে
দাঁড়াবে কী না; কিংবা কোনো বন তার জন্যে খুলে দেবে কী না ভালোবাসার
অনাদি সন্ন্যাস- সেই ভাবনাও তাকে থামাতে পারে না, দ্বিমুখি আঁধারে।
যদিও আঁধারবর্ণ বহুমুখি হয়, যদিও মাতৃহারা পাখিছানার মতো একাকি দুপুর
কান্না ভুলে যায়- তবুও অনেকগুলো শিলাখণ্ডের ভার বহন করে পথ চলে
জল ও জমিন। মানুষ কেবল সেই জমিনে পায়ের ছাপ রাখতে কসরত করে।
তোর গায়ে অনিয়মিত জ্বর
বয়সের শত্রু বয়স নিজেই। বনের শত্রু বন।জন কিংবা জনান্তে যে মাঠের
ছবি মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়- যেই ছবির শত্রুও আরেকটি ছবি। চিত্র কখনও
আরেকটি চিত্রের মিত্র হয়ে উঠতে পারে না।
উত্তাপের শত্রু নয় শীত। অথবা যে কাঁপন নিয়ে পৃথিবী এত বেশি গর্ব
করে- সূর্যের আদিপ্রেমিকা আজও জানে না সেই কাঁপনের সংজ্ঞা। আর
এই যেমন,চাঁদরাতের গল্প শোনতে শোনতে যে প্রেমিকা ঘুমিয়ে পড়ে চন্দ্রপুর
গ্রামে; সে জানে এই গ্রামেই একদিন লালমেহেদি হাতে নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে
বসেছিলেন তার মাতামহ।
তোকে আমি এসব গল্প আজ শোনাতে চাইছি না, প্রিয় জয়ন্তকুমার!
শুধু জানতে চাইছি- এই অনিয়মিত জ্বর তোকে কতদিন থেকে ভোগাচ্ছে!
কতদিন থেকে এভাবে তুই তাকিয়ে আছিস, মিথ্যুক ওই আকাশের দিকে!
বিখণ্ড উপদ্বীপের উত্তরে
এটা কোনো প্রশ্নের জবাব নয়। এটা নয়, দক্ষিণকে খণ্ডন করার জন্যে
নতুন কোনো উত্তর।এমনও নয়, দ্বীপের গভীরে জন্ম নেয়া যে উপদ্বীপ
গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে মানুষকে আশ্রয় দেয়,তারও কোনো লিখিত ইতিহাস।
তবুও মানুষ ভূগোলের চাইতে ইতিহাসের গল্প শোনতেই বেশি ভালোবাসে।
কারণ ইতিহাসে মৃত মানুষের খণ্ডিত কাহিনি থাকে। আর ভূগোল নির্মাণ
করতে মানুষকে বুকের পাঁজর ভাঙতে হয়।
স্বাধীনতা মানেই ছোপ ছোপ রক্ত। বিজয় মানেই কঙ্কালের পাহাড়। এমন
রেখার সমন্বয়ে জন্ম নেয় যে মানচিত্র,তাকে চুম্বনের কোনো শর্তই থাকে না।
শর্ত থাকে একটাই;সাহসের গর্জনে সেদিন কারা কারা হাত তুলতে পেরেছিল!