ঈদের কবিতা ।। আমিনুল ইসলাম

থাকতে পারঘাটাতে তুমি পারের নাইয়া

কারণ তো জানা নেই; ইজারাদারের ইঙ্গিতেই নৌকা থেকে বাদ দিয়েছিল মাঝি।
পারঘাটাতে বসে ভাবছি-এমন সময় খালঘাটের মালোদের মেয়েরা ‘আসুন
দাদা, আপনাকে সাঁতার শিখিয়ে দিই’ বলে হাতে ধরে দুদিনেই শিখিয়ে দিলো
সাঁতারের পাঠ। অবাক আমি এখন পিঠে শিশু বেঁধে ব্রজেন দাসের মতো
পাড়ি দিতে পারি অসীমিত জল। তাছাড়াও আমার বাহুতে উড়–ক্কু মাছের ডানা;
জল না ছুঁয়ে ডিঙাতে পারি শ্রাবণ-গাঙের ফেণায়িত ক্ষোভ। দ্যাখো, গাঙ-
চিলের হাততালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গাঙের দু’তীর; আর সে ইজারাদার
নেশায় ঠোঁট দিয়ে চেয়ে আছেন ভেজাশরীরের ভাঁজে: আহা নান্দনিকতা!
তারপরও জলধোয়া জুঁইদের বলেছি-ওর চোখের মণিটায় থুতু দিতে যেও না।

সাঁঝের সমুদ্র

আহ্নিকগতি তার ডিমলাইট জ্বেলে বাইরের চোখে রচেছে অন্ধ আড়াল;
হিমালয়ের কাছে মেঘের পোশাক জমা রেখে আকাশ এসে অশ্বারূঢ়
রাধার মতন সাঁঝের সাগরের শরীরে; ক্লান্ত গাঙচিলের বন্ধপ্রায়-কানে
মহাশীৎকারের শব্দ; ভেজা দুপায়ের আলতা ধুয়ে যায় লোনা-লোনা চুমোয়;
সাতখুন মাফের সুযোগে বাস-ফেল-করা কবি নীল টাওয়ারে বসে
পাকাশিশুর মতো আলো-আঁধারির ফাঁক দিয়ে দেখে নিচ্ছে প্রকৃতির পীপ-শো।

ডায়াগনোসিস আফটার অপারেশন

রাতদিন অতঃপর দূষণেই বাঁচা; মানবতা এইসব ধুলোমাখা বাণী-
শোনামাত্র দেহমনে বিবিধ এলার্জি! আর কোনো ঔষধ মেলে না।
ব্যর্থকাম একে একে ক্যাপসুল, ট্যাবলেট, নামিদামী যতসব তরলের
ডোজ; দুদকের মালিশেও সারে না বেমার! ফলে দেশ-দেশান্তরে
বুশের ইচ্ছার মতো রোগের বিস্তার; পৃথিবী সুসভ্য বলে এভাবে
চলে না! অতএব উচ্চমূল্য মেডিকেল বোর্ড; উচ্চকিত মতভেদ
তথাপি সিদ্ধান্ত-ছুরিকর্ম একমাত্র অবিকল্প পথ। শেষে মিত্রবাহিনীর
মতো কৃতকার্য ছুরিকাম; অথচ আশ্চর্য! আলসার টিউমার মূত্রাশয়ে
অশ্মরী কোনোটাই নয়! চেরাপেটে পাওয়া গেছে সারমেয় লেজ!
পরীক্ষায় দেখা গেছে শুরুতে চিকন ছিল-পশম যেমন; দিনে দিনে
কুন্ডলিত-ফাইনালে লাঙ্গুল-আকৃতি। আর কোণঠাসা সততার মতো
হৃদয়টা নেমে গেছে কিডনির দিকে; আহা রে সততা! আহা কিডনি!
সে-সুযোগে সাম্রাজ্যবাদীর মতো ড্রাইভিং সিটে বসে কুন্ডলিত লেজ!

One thought on “ঈদের কবিতা ।। আমিনুল ইসলাম

  • এপ্রিল ১০, ২০২৩ at ৪:৩৩ অপরাহ্ণ
    Permalink

    নেশায় ঠোঁট দিয়ে চেয়ে আছেন ভেজাশরীরের ভাঁজে: আহা নান্দনিকতা!

    অমন ছানাবড়া বিদগ্ধ নয়নে কবিতা গুলো পড়লাম। প্রতিটি কবিতাই নান্দনিক,, কবিতাই এরকম অমর লাইন বা চরণের প্রয়োগ ভালো লাগার মাত্রাকে বহুগুণে শাণিত করে। অসাধারণ।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *