ফরিদা বেগম-এর কবিতা
পুরনো বলয়
জীবনে কখনো আসে না চাইতে অদল বদল
বিষন্ন বিষাদ উড়ে পতপত ধ্বজার আদল।
চৈতালি বাসরে ভাব ভেসে আসে আল্লাদী নিনাদে
জড়াতে চায়না কোন আসুরিক বিরুদ্ধ বিবাদে।
মনের গহন বাঁকে আলপিনে ক্ষত রক্তস্রোতে।
নতজানু ডানা ভেঙ্গে বিহ্বলতা অসহায় ত্রাসে।
যাযাবর সুখপাখি খুঁজে নিক আপন আলয়
বিপ্লবী প্রমিলা যাচে বদলাতে পুরনো বলয়।
জলধি
বিপুল জলধি তুমি
বিস্তীর্ণ তোমার পারাবার
নির্মল বাতাসে উর্মিমালা
দুলে উঠে
জয়গান গেয়ে যায় দক্ষিণা বাতাসে
চুপিচুপি।
ঘৃণ্য যত পাশবিক কলুষতা দুইপাড়ে
ধুয়েমুছে সাফ করে দাও।
জলের প্লাবনে বয়ে আনো
পূণ্যময় সুজলা সুফলা শস্যের উদগম।
ক্ষুধাময় ধরাধামে
উদ্বিগ্ন ক্ষুধার্ত যেন নিশ্চয়তা পায়
দু’মুঠো অন্নের।
মৃত্যুর নিরবতা
মৃত্যু কত বড় তার আয়তন?
যাপিত জীবনে ভুলি তার আয়োজন।
নিমিষে নিঃশেষ যাবতীয় লেনাদেনা
থাকুক না যত কারো প্রয়োজন।
মায়া,ছায়া, ভালোবাসা,আশা
দ্বিধা, দ্বন্দ, বিবাদ, নিরাশা
জীবনের এত কোলাহল, হলাহল
মৃত্যুর ভেলায় সব পদ্ম জলেভাসা।
অজানা শহরে নিশ্চিত ঠিকানা
স্বর্গ না নরক কিছু বুঝবে না
দেখবে না সম্পর্কের সূতোর দীর্ঘতা
না চাইতে নেমে আসে অন্ধ নিরবতা।
আগাছার মতো
আগাছা চেনো তো?
সামান্য জল – হাওয়া – ছায়া পেলে
কেমন সতেজ হয়ে স্ব মহিমায় বেঁচে থাকে।
ছেটে দাও, উপড়ে ফেলো তবু ও
মহীরুহ ঘিরে বাঁচার চেষ্টায় ছায়া খুঁজে
জায়গায়, অজায়গায়, বাঁকে।
ওদের মতো সতেজ হয়ে তোমার খেয়ালে
মায়াময় অনুভবে জড়াতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু নিজেকে হারাবার দৈন্যতায় ভয় পেলে
মুখ ফিরিয়ে ভুলে গেলে কি ছিলাম!
মাটির আশির্বাদে যে বেড়ে উঠে ফুটায় ফুল
ভালোবেসে আত্নার কাছাকাছি থেকে যায়,
বিস্মৃতির অতলান্তে তাকে ডুবাতে চাইলে ও
মনমুকুরে ভাসবে তমসার সন্ধ্যায়।