মো. আরিফুল হাসান এর কবিতা
কলঙ্কিনী
তুমি নাকি যাত্রাপালা দেইখ্যা আইছো নাগরের সাথে
এখন ক্যামনে নলা দিবা আমার ক্ষেতের ভাতে
শইলের রক্ত পানি কইরা তোমার লাগি তুলি নতুন ধান
সেই সব আমার স্বপ্ন ভাঙলারে খানখান!
তুমি নাকি পান খাইয়াছো রসিক জনের হাতে
এখন ক্যামনে আমার ক্ষেতের সালুন তুলো পাতে
রইদে পুইড়া মেঘে ভিইজ্যা সবজি ফলাই আমি
ক্যামনে তুমি করতে পারলা এরুইম্যা বদনামী?
তুমি নাকি ভিন্ নাগরের হাত ধরছো আজ
এখন ক্যামনে পাতে তুলো আমার পুইরের মাছ
মাঘ মাইস্যা শীতের রাইতে মাছ ধরিয়া আনি
তুমি ক্যামনে দিতে পাল্লা সতিত্বের কুরবানী?
তুমি নাকি লাঙের লগে ঘুরতে গেছো, হচ্ছে কানাকানি
এখন তুমি ক্যামনে পি’বা আমার কুয়ার পানি
মাতার ঘাম পায়ে ফেইল্লা কুয়া খুড়ছি নিজে
ক্যামনে তুমি পারলা এমুন, কাপলা না কি লাজে?
তোমায় নাকি আইজ সারাদিন সঙ্গ দিছে নাগর
এখন কেমনে ফিইরা আইলা আমার কুড়ে ঘরে
উত্তরেত্তে ছন আনিয়া ঘরে দিছি ছানি
সেই ঘরেতে থান পাবে না কোনো কলঙ্কিনী।
মেঘসন্ধ্যায়
মেঘের বাকলের ভেতর থেকে
মাছের চোখের ডিমের মতো একটি চাঁদ
ধোঁয়াশার মতো আলো দিচ্ছে
সে আলোতে রাত্রিটা যেনো চুল খোলে
দাঁড়িয়ে আছে বারান্দার গ্রীল ধরে।
কোনো তারা নেই আকাশে
জমাট অন্ধকারের দেহে শুধু মেঘের বাকল
জড়িয়ে রেখেছে নেশাতুর দৃষ্টিবৃক্ষকে।
প্রণয় খবর
বৃষ্টি হচ্ছে, ভেতরে এক দেবদারু গাছ
নদী থেকে উঠে আসা কয়েকটা ডানকানা মাছ
জোয়ারের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে মরমে
আঁচলে মুখ ঢাকছে বধূয়া শরমে।
আগন্তুক কাকভেজা অতিথি অতঃপর
কানে কানে বলে যায় প্রণয় খবর,
আতিশয্যে কেঁপে উঠে প্রাণ।
যেনো যক্ষপ্রিয়া কাঁচপাত্রের মতো খানখান
ভেঙে পড়ে গুড়োগুড়ো বৃষ্টির ফোটায়
জলদিনে, রোদ উঠে প্রেমিকার দুধের বোটায়।
আঁধারের ফাঁদ
অন্ধকারে হেডলাইট জ্বলে নিভে রাস্তা সর্পিল
যাত্রীরা নিশারোহী চিল-
হয়ে উড়ে ধোয়ায়িত আকাশের মেঘে।
চালক বেহুশ, নাকি মাতাল আবেগে?
মনে নেই, মনে একা ছায়াঘেরা পিছল অতীত।
যার কথা কানে তুলি তার সাধ্যাতীত-
নিভুরেখা ধরে ছুটে যানচলাচলের এ পথ।
আরো কিছু দ্বিধা নিয়ে আলেয়ার নিভন্ত দ্বৈরথ-
ছুটে মধ্যরাতে, ঘামে ভিজে যায় চাঁদ;
চালক ও যাত্রী দেখে বেহিসেবী আঁধারের ফাঁদ।