পাপিয়া খান-এর কবিতা
বিবর
হাজার বছরের ক্ষয়ে ধরা রোগে ভুগতে ভুগতে পৃথিবী বিষণ্ণ আজ।
ঘুমন্ত কবরের মতো সুনসান চারপাশ।
বিবর্ণ দুপুরে কাঁচ ভাঙা জানালা দিয়ে অনুভব করি, পৃথিবীর অসুস্থতা।
আমায় ভাবিয়ে তোলে।
কখনোবা,
রাত দ্বিপ্রহরে ।
আমি ভীষণভাবে বিষণ্নতায় ডুবে যাই।
ইনসোমোনিয়ায় ভুগতে ভুগতে কখনোবা মৃত মাছের মতো মনে হয় নিজেকে।
বিপন্ন বোধ করি।
অতলান্তের মহাসীমায়
ডুবে যেতে যেতে বেঁচে যাই।
আচমকা মস্তিষ্কের নিউরন জানান দেয়,
বেঁচে আছি।
আমি বেঁচে আছি।
বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবি,
বেঁচে আছি।
ঢের আছি।
কজন ই বা বেঁচে আছে?
বেঁচে থাকার ভাণ করে !
ফুলগুলো ভুলগুলো
পরিপক্ব গণিতজ্ঞ হওয়ার বাসনা ছিলো না কোনো কালে।
আজও।
অঙ্কে কাঁচা,
বরাবরই ।
গণিতের খাতায় শূন্যের হিসেবের ইয়ত্তা নেই,
ভুরি ভুরি।
দুইয়ে দুইয়ে চারকে কতোবার যে পাঁচ লিখেছি!
আজও।
তোমার বেলায় কড়া।
কিন্তু লোকে বলে ভুল।
হিসেবের ভুল।
ভুল!
হোক ভুল।
ভুলই আমার প্রিয়
ভীষণ প্রিয়!
ফুলের মতো ভুলটা আমার কাছে না হয় ফুল-কামিনী।
হকার এবং হাহাকার
শহুরে সকাল
ভাঙা স্বরে হাঁক ডাক করে হকার
কিনতে চায়-
পুরোনো বই
ভাঙা হাড়ি-পাতিল
নষ্ট চুলা
দরদামবিহীন ফেলনা জিনিস।
কতো কি, আরো কতো কি!
কতো কিছুই যে কেনার আছে জগতে,
কতো কিছুই কেনার থাকে।
বদ্ধ পৃথিবীর জংধরা মূল্যবোধে পরিবর্তন অনির্ণীয়মান।
কেনা, বাঁচার পাল্লায় লঘু হয়না মানুষের দুঃখ।
দুঃখবোধ।
মানুষ মরে-
শোকে, অ-সুখে,
দুঃখে মরে
মরে রোগে
অনাহারে।
মরে জীর্ণতায়, শীর্ণতায়।
ঘরের কোণে, রাস্তায় ।
মরে দিবালোকে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে।
শহরে মরে, গ্রামে মরে, আত্মীয় মরে, অনাত্মীয়,
কেউ আবার বেঁচে থেকেও মরে।
প্রতিবেলা মরে। প্রতিদিন।
দেখার কেউ নেই। কেউ নাই।
আছে, তবু কেউ কেউ তো আছে। আছেই
ভদ্র পল্লীতে ভদ্র ঈশ্বরের ন্যায় ।
কতো কিছুই যে কেনার থাকে জগতে!
কতো কিছু কেনা হয়।
তবু কেনা হয়না কিছু। কেনা যায় না কিছু।
অনুভবে অনুভূতি
একটা সময়ের পর হুলস্থুল অপেক্ষা, অনুভূতি আর অস্থিরতাগুলো কেমন স্থবির, স্তব্ধ আর নীরব হয়ে যায়।
পানসে হয়ে যায় একাগ্র, একনিষ্ঠ ভালোলাগা, ভালোবাসা ।
পাণ্ডুর রং ধারণ করে মিষ্টান্ন জীবন ।
রেপিং পেপারে মোড়া জীবন হয়ে যায় ধূসর।
আর ফিকে হয়ে যায় রঙিন সব স্বপ্ন, স্বাদ, আহ্লাদ ।
অবহেলা অযত্নে মরিচায় আচ্ছন হয় জীবন।
মানুষের জীবন।
একই ঘর, একই ছাউনির নিচে বাস করেও আসমান সমান দূরত্ব সৃষ্টি হয় কখনওবা ।
চোখ থেকে নাক সমান দূরত্বে থেকেও
কাছে থাকা হয়না।
আসমান আর জমিনের মতোন কোটি কোটি সহস্র মাইল দূরত্বে বসবাস।
অথচ, কতো কাছে!
সময়, সময়ান্তরে মাঁকড়সা আর আরশোলার জাল ছেয়ে ফেলে জীবন।
মানুষের জীবন।
আহা! দিনান্তে কতো একা মানুষ!
বড্ড একা !