মৌসুমি আক্তার-এর কবিতা
শহীদী তিন কণ্যা
শহরে এত কঠিন হানা
মাথায় নেইকো কিছু জানা,
কোথায় গেলে মুক্তি মিলে
লাশের স্তুপ এত দিলে।
চারিপাশে পাক-হানা
মৃত্যুর ঝুঁকিতে অবশ ডানা,
তবুও চলি গ্রামের পথে
আসমা নাজমা ফাতেমার সাথে।
খোকা দিল যুদ্ধে যোগ
ফিরবে শান্তি করব ভোগ,
নেইকো এবার কোন ভয়
হবে একদিন স্বদেশ জয়।
হঠাৎ সেদিন তিন কণ্যা দাঁড়িয়ে
গোলা বারুদে তাদের হারিয়ে,
বৃদ্ধবাপ পুত্র ছোট কণ্যা আহত হয়
একই কবরে নিহত তিন কণ্যা রয়।
আহাজারিতে আকাশ ছোঁয়া
চারিদিকে আগুনের ধোঁয়া,
আসেনি তো সেদিন হাত বাড়িয়ে কেউ
পতাকায় দেখি শহীদ কণ্যাদের রক্তের ঢেউ।
কর্মে বড় হই
আমায় জন্ম কোথায় এ দায় নয় আমায়
এসেছি এই ধরার মাঝে
কষ্ট নিয়ে সকাল সাঁঝে।
দুখটাকে জয় করে অন্ন তুলে নিচ্ছি মুখে,
ভাবনা গুলো ছন্নছাড়া
চোখগুলোতে কান্না ভরা।
এটাই আমার সুখরে দুখ, এটাই সব সুখ,
পেটটি ভরে পাইনা খেতে
কারও দুয়ারে চাই না যেতে।
পৃথিবী রবে এভাবে যে ঠাঁই দাঁড়িয়ে,
তারপরও সবাই টানাটানি
রাজ্য আমায় এটাই মানি।
রাজ্য জয়ের নেশায় ব্যস্ত সদা সবাই,
কুকুর না শুনে কাকের মানা
মানুষ না শুনে কুকুরের হানা।
বেঁচে থাকব এভাবে মোরা চলন্ত নিয়মে,
নিয়মের মাঝে অনিয়মের খেলায়
ভেসে যায় সবই হেলায়।
তরী
তরীতে আজ দিলাম পা,
পাহাড়ের দিকে চলে যা
মোহনার দিকে ছুটে যা
যেদিকেই খুশি ভেসে যা,
মানব না কোন বারণ
এটাইতো আজ কারণ।
সবুজের দোলার হাসি,
ঢেউয়ের দোলায় ভাসি
বকগুলো ঐ ডানা মেলে
মেঘ ভাসে মেঘকে ঠেলে,
গাঁয়ের বধু জল তুলে
পানকৌড়ি ভাসছে দুলে।
ভোদর দুটি মুখ ভেসে,
হাঙর এল হেসে হেসে
রোদের যে হাসি খেলায়
ছবি যে নদীর মেলায়,
যাচ্ছে নৌকা দল বেঁধে
বরষা এল সেধে সেধে।
গোধূলির হাত ছানিতে,
ঐ কাশবন আঁধারেতে
দূরে মাঝি যাচ্ছে গেয়ে
হাটের লোক ফিরে চেয়ে,
সাঁঝের বেলা পাখি নীড়ে
আবার রবি এসো ফিরে।
খুকুমনি
মাঝ রাতে কু কু
কেঁদে ওঠে খুকু,
মরার কোকিল উড়ে যা
অন্যদিকে চলে যা,
সময় বুঝি পেলি না
দিনের বেলা এলি না,
চেয়ে থাকি চাঁদের পানে
গান শোনাই খুখুর কানে।
ঘুম গেছে দূরে চলে
আসছে নাকো কোন ছলে,
রাত যত কেটে যায়
ঘুম তত আমায় পায়,
নাই কোন শব্দ
চারিদিক স্তব্দ,
মায়ের সাথে খুকুর খেলা
পা নাড়িয়ে কাটছে বেলা।
গরিবের কান্না
পায়ের নখে আঁচড়ে দেব তোদের হিংস্র মুখ
থুথু ছুঁড়ে দেখব তোদের কোথায় রয়েছে সুখ।
অন্যের ধন লুটেপুটে
জানি তোদের অন্ন জুটে,
সমাজপতি সবাই বলে
ছলচাতুরীর বিচার চলে,
অগ্রভাগে যাত্রা ফলে
নিজের খায়েস মিটাস তলে।
একবেলা খেয়ে আছি সুখে, তোদের পানে যাই না ছুটে
গায়ের ঘাম গড়িয়ে পায়ে, শুকিয়ে তবে হাসি ফুটে।
অভাবিকে দিস অভাব
এটাই তোদের খুব স্বভাব,
যত পাশ ততই চাস
গরিব যেন তোদের দাশ,
সমাজের মানুষ শুধুই তোরা
আমরা শুধু কপাল পোড়া।
মানবতা নিয়ে মোদের বাঁচা, মানবতা নিয়েই মরা
দেখাস কতই পেশি শক্তি শেষ জীবন জরা।