ফারহানা নীলা’র কবিতা
অন্য জীবন
আজ পূর্ণিমার তিথি-কৈলাস গাছের পাতাজুড়ে
আলোর ফুলঝুরি ওখানে আজ বৃষ্টি নিবাস।
পাতার রুমঝুম শব্দে ভেঙে পড়ে নীরবতা
আজ অনেক বাতাস-উড়ে যায় মেঘ
মাটি ভেজে- সোঁদা ঘ্রাণে
ঘরের জানালা খোলা ফটকের তালাটা খুলেছি
আমার চারিদিকে তোমার ঘ্রাণ –
এ্যামোনিয়ার সে তীব্র একটা বাতাস
আলুথালু স্মৃতি- গহীনে বরষা।
আজকাল মাটিতে পা ফেলি- খুব সন্তর্পণে
সোঁদাল মাটিতে মুখ গুঁজে থাকি
যদি খুঁজে পাই?
একটা রাতের মধ্য সময় থেকেই
জীবনের সায়াহ্ন কালের চাঁদ যেন ডাকে
আয়! আয়!
সুড়ঙ্গপথ খুলেছে – উদ্ভাসিত চাঁদ
পূর্নিমার উঠোনের মাঝে বিছিয়েছে আদরের খনি।
অন্তর্গত আমি- যাপনের আমি
বুনেছি অন্য কোনো জীবন!
দাপট
আমি সেই উদ্যত ঘৃণার বিষ ফুল ;
নষ্ট শরীরের মাঝে জোঁক;
রক্তের সন্ধানে প্রবেশ ফটকে
রক্তচক্ষু পথ আগলে রাখে ;
উদ্ধত স্বভাব নাকি অশোভন কিছুর লক্ষণ;
ফণা তোলা সাপ ভয়ংকর বেশ!
সাপুড়ে বীণ বাজায়; মনি ঝলকে ওঠে
ঘৃণার বিষ শরীরে – ওঝা অপারগ!
একদিন শরীরের পুরোটা জুড়েই বেড়ে উঠেছিল
কামিনী সুবাস; গন্ধরাজ গাছ পথ ভুলে ফিরেছিল
কামনার ঝড়ে।
কিছু ছায়া ছুঁড়ে দিই ঘৃণার জিহ্বায় ;
কিছু পথ বুঁজে আসে তেমাথার মোড়ে
নিজের ভেতরে ভাঙে ডালপালা – ভীষণ দাপটে।
উদাসীন অপেক্ষা
এক সময় জমিয়ে রাখতাম অনেক ছোট ছোট স্মৃতি
ডাকটিকিট, ক্যাসেট, মার্বেল,পাখির পালক, চিঠি-
কখনও কোনো স্পর্শ!
কারও কথা- আবেগে ভরপুর
সিকি পয়সা, চকচকে টাকার নোট, আধুলি-
সব জমাতে জমাতে এখন শূন্যতা জমে আছে বলে
আমি আজ উপেক্ষা করতে শিখে গেছি।
ঘৃণা অবজ্ঞা অবহেলার সবটা জমিয়ে রেখেছি-
যাবার সময় হলে- রেখে যাব সব
ভাঁজ খুলে দেখো- কতটা ক্লান্তিতে বয়ে গেছে বাঁক
সময়ের বাঁকে জমা রাখি- দীর্ঘশ্বাস আর বাষ্পীভূত জল
কলসটা জল মাপে-
নদীও জানেনি!
দাবদাহে পুড়ছে সুখ- বারান্দায় জল রেখো
পাখিদের আনাগোনা হলে পিপাসা জলের – বুঝে নিও
তপ্ত দুপুরে ছায়ায় বাড়ে শোক
গভীর রাতের সাথে বাড়ে ব্যথা!
ডাক্তারের কাছে যেও- পাঁজরে মিনতি রেখো ;
হয়তো সারবে তোমার তীব্র অসুখ।
কাছে থেকে পারিনি বোঝাতে যে কথা কখনও
নিরুদ্দেশের পথিক আমি – তখন জেনে নিও ঠিকানা
এতটা উপেক্ষা জমা দিয়ে এসেছি এখানে –
ততটাই উদাসীন আমার অপেক্ষা!
প্লাবনে ডুবছে চাঁদ
এসব সময়ে জল থৈথৈ গ্রহনের কাল গোনে চাঁদ
ভরাকোটাল মরা কোটাল হিসেবে গড়মিল।
বিপদ সংকেত দেয় কত যে নম্বরে?
জল থমথম – সাগর উত্তাল যেন তরুণী বয়স
চঞ্চল হরিণ থমকে গেছে জলের ধ্রুপদী তালে
এগিয়ে আসছে জল- ঘন গাঢ় রঙে।
প্লাবনে ডুবছে জীবনের গতি
আশ্রয় কেন্দ্রের মাঝে মানুষ আর গবাদি পশুর সহাবস্থান
অতর্কিত আঘাত হামলা – চঞ্চল হরিণ হারিয়েছে পথ
সব চঞ্চলতা মিশেছে সাগরে।
জল চঞ্চল হরিণ যেন- মন চঞ্চল ঢেউয়ের মতন
বিপদ সংকেত বাড়ে- মাঝি খোঁজে রোদ
মাছ ধরার কৌশলে ; জল ধেয়ে নেয় আপদ সীমানা
চাঁদ ডোবে হরিণের চোখে ; স্থবির বিপন্ন জনপদ
ইয়াস আতংকে ঈশ্বরের নাম জপে
ঈশ্বর প্রকৃতি গড়ে – মানুষ প্রকৃতি বিনাশের আয়োজনে
ব্যস্ততা সাজায় আলগোছে – নির্দয়ে খুব তোড়জোড়
বড় নিষ্ঠুরভাবে!
যে তুমি জপেছ ঈশ্বরের নাম
সেই তুমি হয়েছ কি মানুষ?
শুনেছ কি জলের হুংকার – গর্জনে হুল্লোড়ে?
আড়ালের ঘের
উল্টেপাল্টে দেখি- এপাশ ওপাশ দেখি
সময়ের একপাশে অযাচিত রোদ জমে থাকে নিটোল সুন্দর
রোদের একটা ঘ্রাণ ভেসে আসে খুব টের পাই।
রোদ সিঁড়ি বেয়ে নামে- আমার উঠোনে।
আরেকপাশে জল জমে আছে চৌবাচ্চাতে
ঘড়ার জল ঢালি- উপচে পড়ে কলস
ভরা কলসিতে শব্দ খুঁজি।
জল আসে ধেয়ে- তেড়ে আসে,নেয়ে আসে
একটা নদীতে চরাট পেতেছি ভেবে – নদী কাছে আসে।
এসব মিথ্যে বলছি-
মিথ্যে বলাটা স্বভাব মানুষের ; কিছু রঙ চড়িয়ে পাঠিয়ে দেয় জনেজনে
অথচ পাখিটা অথবা প্রজাপতি কিম্বা ফড়িং – মিথ্যে বলে না তো!
পোষা কোনো প্রাণী – সেও বলেনি মিথ্যেটা!
আমি দুর্বার দুর্বোধ্য – নিজেকে চিনেছি
রোদেজলে, আষাঢ় শ্রাবণে, অমাবস্যা জোছনার কাছে;
এতটা দুর্ভেদ্য মন মানুষের হয়!
এত বড় আড়ালের ঘের মানুষের মন জুড়ে!