এনাম রাজুর কবিতা আয়না সিরিজ
আয়না সিরিজ-১৫
ঝরণার মতো বমি করছে পৃথিবী যতোসব চাটুকার
রক্তসরাবে পিপাসা মেঠাতে পাগলা কুকুরের মতো দিচ্ছে কামড়
খসে পড়া নক্ষত্র দেখে এরা আঁতকে উঠে বোমারু বিমান ভেবে
আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও তা আসবাসে ব্যবহার হয়েছে কবে?
এই পৃথিবীর গর্ভে জন্মে আজও যতো বাঘা বাঘা সন্তান
ঘাতকও রয়েল বেঙ্গল টাইগার যখন দুনিয়াটাই সুন্দরবন
ঘনো ঘনো দুখির শ্বাসে ভরা তাদের সম্পদ পাহাড়
ব্যয় করে হাত ভরে তবুও ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকে অনাহার।
শেয়াল-বেজির ভয়ে লুকিয়ে রাখে যেমন গ্রাম্য বধূ হাঁস-মুরগিকে
রাজারনীতি অনুসরণকারী বন্দী পাখির মতো দেয়াল বানায় সঙ্গিকে
এরচে ভালো ছিলো পৃথিবীর, তালা দেওয়া প্রসবের দরজায়
প্রসব বেদনা উঠলেই দেখতো মা নবজাতককে নাপিতঘরের আয়নায়।
আয়না সিরিজ-১৬
তেলাপোকার শরীরে যখন রক্তের উৎপাদনে ব্যস্ত চৌকুষ মানব
তখন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গাছেদের সাথে প্রণয় করি…
মফস্বলের ঘুম নেই সুসজ্জিত চাঁদ-তারা রহস্য উন্মোচনে
সে কারণে রাত্রীর প্রেমিক চাঁদ-তারাও ভুলে যায় আলোর উদারতা
তাই কিশোরী সূর্যের অপেক্ষায় বসে স্বভাবে অভাবীদের
হীরক উজ্জ্বল রূপকে তিরস্কার করে
সমুদ্রের পথে এগিয়ে যাই উপনদীর মতো।
কী জলে কী আয়নায়
কোথাও পাই না নিজেকে আবিস্কার করতে
খুঁজে পাই যেনো মুখোশের অন্তরালে ব্যস্ত একটা তৈলহীন লণ্ঠন
অথচ, আমাকেও উপনাম দেওয়া হয় বিজ্ঞান মনস্ক জোনাকি ঢেউ।
আয়না সিরিজ-১৭
কথা ছিলো,
বর্ষা এলেই বেরিয়ে পড়বো আকাশ পথে
যেমন গোপনালয় থেকে প্রকাশ্যে আসে ব্যাঙ
ঘুরে আসবো আমাজন বনে নয়তো মরুভূমি
ছুটে চলবো চোখের সীমানা যতোদূর যায়।
বৃষ্টিকালীন ভ্রমণ তালিকা দেখে,
লোকে বোকা বলবে।
তাতে কী? মানুষতো এমনই!
বিরুদ্ধ পথে চলা, বিরুদ্ধ কথা বলা তো তাদের স্বভাবজাত।
দেখে আসবো লাশ কাটা ঘর,
কী কৌশলে আলাদা আলাদা করে দেহ।
আমার ঘরেও তো কতো প্রাণাঘাত করি,
অথচ অন্য কেউ করলে দুঃখ, ধিক্কারে নিজের মগজ
দুই ঠোটের ঘর্ষণে কোয়া কোয়া করি আমের মতো।
এসব বর্ষাতেই দেখবো-
বিপরীত ছুটে চলা যে মানুষের ধর্ম,
কেননা মানুষই একমাত্র প্রাণী যার অপরাধ গোপন
সুকল্পিতভাবেই তৈরি করে পাপের বসত।
আয়না সিরিজ-১৮
যদি মিথ্যা কখনো পথের বাঁধা হয়-
চোখ রাঙায়
ধনাঢ্য শ্বশুরের মতো কাঁধে রাখে হাত
হও মুখোমুখি দ্বন্দ্বের,
তালাক দিতে বলে সত্যকে
এবং তুমি সত্যতে অনঢ়।
বুঝে নিও তুমি মানুষ
কষ্ট তোমাকে পরিখার মতো বেষ্ঠিত রাখবে!
যখন তোমার চারদিকে যাবতীয় খারাপ
মাকড়সার জাল বুনবে
পৃথিবীটা জল্লাদখানা হবে কারো প্রভাবে
কেউ বাধ্য করতে চাইবে কালো অক্ষরের অপব্যবহারে
অভাবকে দেখানো হবে মহামারী করে
বায়োস্কেপের মতো
অথচ তুমি লিখে যাও আপন মনে যা উচিৎ ভাবো
তোয়াক্কাও করো না রাষ্ট্রীয় সম্মাননার
তখন তুমি কবি, সমাজের জনক-জননী
দুঃখ তোমার থাকবে আপন জননীর মতোই।
যখন তোমার দ্বারা আক্রান্ত হয় না কেউ
কিন্তু তারা তোমার গোত্রীয় নয়
এবং সবাই ধারণ করে টুপি, সিদূর কিবা
এসবের কোনোটাই নয়
তখন তুমি ধর্মপিতা, সঠিক পথের দিশারী
তোমাকে যাবতীয় আঘাতর সহ্যের জন্য তৈরি হতে হবে!
তুমি চাঁদ-সূর্যকে তালুবন্দী করেছো
অন্ধকার-আলো অধিকারে
কারণ, তুমি উপর্যুক্তগুণাবলীর মালিক।
আয়না সিরিজ-১৯
অন্যের চোখে যখন নিজেকে আবিস্কার করি
ঢেউ ভাঙা চাঁদের মতো এলোমেলো হই
হয়ে যাই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি…
একদিন সৃষ্টিসুখ উন্মাদ করেছিলো
অহমের তারকায় গাথা সুসজ্জিত মালা
আর প্রশংসার পুষ্পবৃষ্টিতে ভিজে হয়ে গেছি একা,
অথচ চারদিক ঘেরা তখন মানবছাতা।
পানির চোখে নিজেকে দ্বিতীয়বার দেখেছি
দেখেছি মৌ-রাণীর মতো অলস আমার
আমাকে দেখার প্রাজ্ঞ চোখ।
পরিণতির দরজা খুললেই বুঝেছি
দলছুট প্রজ্জ্বল তারার মতো মানুষ একা বড্ড একা।
আয়না সিরিজ-২০
বিক্রির নেশায় ফুল হাতে ছুটে চলা পথশিশুর মতো
এখন আমিও মানুষ চিনে সামনে হাঁটি
বিনিময়ের খাতিরেই এগিয়ে যাই কয়েক কদম।
…এবং জানি, পয়সার পিঠে ঘাপটি মেরে বসেছে দুনিয়া
তাই চেনাজানা সুরও তাল তোলে ভাঙা-গড়ার,
বন্ধ্যা তিরস্কৃত হবে ভ্রমরে কাছেও
তবুও দু’হাত ভরে কেউ দেবে উষ্ণ প্রেম
নিকষ অন্ধকারের সুর কানে বাজলে।
ভালোবাসলেই দুনিয়া নিজের হয়
তবু হিসেবের দরজা খুলেই কাছে যাই
আদান-প্রদান ছাড়া যে ভালোবাসা ভালোবাসাই নয়।