নূরে জান্নাত-এর কবিতা
কৃষ্ণচূড়ায় কবি
কৃষ্ণচূড়া আর শিমূলতলায়
সেবার বৈশাখে বেঞ্চে বসেছিলে
লাল টিপ আর আগুন রাঙা
লাল শাড়ি পড়া অগ্নি কন্যার পাশে।
লাল নাকি তোমার খুব ভালো লাগে!
কেন কবি?
ক্ষত, প্রেম, নাকি বসন্তের রঙের প্রতি
মোহ থেকে?
ধরো,
এ বৈশাখে লাল টিপ, লাল শাড়ি
লাল কৃষ্ণচূড়া, লাল শিমূল নিয়ে
যদি সেই সময় ফিরিয়ে আনতে
কবিতা তোমার সামনে দাঁড়ায়,
তোমার চোখ কি লাল হবে?
চোখ চোরাবালি
আঁকবে আমাই…
তোমার মনের সবটুকু রঙ দিয়ে..!
তুমুল বৃষ্টিতে পাখির ছানার মতো লুকোবে?
তোমার বুক চাঁদরে?
ময়ূরেরা যখন পেখুম মেলবে…
আমার অনাবাদী ললাট জমিনে ঝুলে আসা
বেপরোয়া চুলগুলো তর্জনীতে সরিয়ে দিয়ো..
দুচোখ ভরে মেলে ধরা পেখুমের মায়া
দেখতে দিয়ো।
পাহাড়ে যেদিন জোৎস্নারা ঢ্ল নামাবে
আঁধারের বুক চিড়ে..
তুমি পাশে দাঁড়িয়ে বেসুরে গেয়ো না হয়
“আমি চিনিগো চিনি তোমারে…
কাচের চোখে যদি হঠাৎ অভিমান নামে
টুকরো টুকরো হবার আগেই তোমার
ভালোবাসার জোরে অভিমানের
শোক সারিয়ে তুলো।
প্রেম প্রেম গন্ধটা সমুদ্রের মতো
মাখিয়ে দিয়ো হৃদয়ের
চোখ চোরাবালিই!
নামহীন কবিতা
বিধাতার কাছে খোঁজ নিয়ে দেখো রোজ
হৃদয় মসজিদে তার পরেই
প্রিজনদের প্রার্থনা হয় কিনা!
প্রার্থনা হয় কিনা প্রেম ও কবিতার!
প্রার্থনা হয় কিনা তোমার!
কয়েদী চিন্তা
কাচের জানালায় ঝাপসা স্বপ্ন গুলো!
দেখ সুনীপন ভঙ্গিতে একা পাখি
কবিতা গেলার মতো
বিশুদ্ধ বিষদতা গিলছে!
আহা…
চাঁদরে মেঘের গন্ধ…
শরীর জুড়ে বকুল ফুল!
আঙুল গুলো ফ্যাকাশে প্রেমে
ছুঁয়ে দেখতে চায় মনের চারিপাশ
ঘুমের ঘোরে নগ্ন স্নানে কাম
ডুবো ডুবাও ভাসো ভাসাও
কাছে খুব কাছে গিয়ে
কয়েদী চিন্তা গুলোকে!
বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে দাঁতের বসত গড়ো
অন্ধাকার নিরাকার তুমি কে
স্বরুপে আকার দাও
ওতা তুমি? চিন্তা? কাম?
নাকি যাকে আমি চাই?
চল চুরি হয়ে যাই
হরিণীর চোখে হেঁটে যাওয়া অরণ্যে
রেখে যাস এক বৃষ্টি বিকেল।
যে বিকেলে আমার ভেজাচুলে
সুখেদের হবে বাঁধা বাসা।
যে বিকেলে খালি পায়ে নরম কাদায়
লিওন্যার্দোর মোনালীসা হবে জ্বলজ্যান্ত!
ভ্যানগগের অসংখ্যবার ব্যর্থ হওয়া রঙের নেশা
মেঘের মতো উড়বে আকাশে!
আমি ছুঁয়ে দেবো একেকটি মেঘ
যা হবে সফল ছবি!
ছবির মনে ঘর, ঘরের মনে আঁধার
আঁধারের মনে কালো
কালোর শরীর জুড়ে বিষন্ন ঝাঁঝমাখা
বিষের গন্ধ গিলে প্রেম তুই হয়ে উঠিস আলো..
তারপর.. বকুল ফুল মাখিস
জীবনের আনাচ কানাচ।
কথা দিলাম.. খুন হবি তুই
প্রতি পলকে পলকে, প্রতি হাসিই
প্রতিটি শব্দ ছোঁয়ায়।
কাজলে চোখের সঙ্গম কতোটা সুনীপন
তুই জানবি!
হাসিতে ঠোঁটের জাগরণ কতোটা বিদঘুটে
ভয়ানক সুন্দর তুই জানবি!
কপালে ঘামের শিরহণ কতোটা মাদকতায়
টলতে থাকে তুই বুঝবি।
শাহাদাতে টিপ পড়াবার ছলনায়
তোর রঙের শরীর কতোটা টানে তুই জানবি!
এলো চুলের গাম্ভীর্য কতোটা অতলে
ডোবাতে পারে তুই জানবি!
কমল চিবুক বানাবে তোকে
জোয়ার, সমুদ্র, শিল্পী, ভাবুক, কবি!
হারাবি.. সেই জীবনে?
যে জীবন কেবল একার আমার।
যে জীবন আমি আগে কখনো পাইনি
যেজীবন আমি আগে কাউকে দেখাইনি।
সে জীবনে চল…’চুরি হয়ে যাই!’