কবিতা

আজিজ ইসলাম-এর কবিতা

কুড়ি বছর পর

বছর কুড়ি পরে, মুখভর্তি সাদা দাড়ি
দুর্বল শরীর বইতে হাতে কালো ছড়ি।
মোটা ফ্রেমের চশমা চোখে,
সফেদ পাঞ্জাবি পরে হয়ত
কোন পার্কের বেঞ্চে বসে।

আর তুমি সেদিন, মেহেদী রঙ করা চুল
আর হালকা ফিরোজা শাড়ি পরে
নাতির হাত ধরে ধীরলয়ে সেখানে প্রবেশ করলে
হঠাৎ দেখায় আমাকে কি চিনতে পারবে?
নাকি বিস্ময়ে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করবে কেমন আছ, অনিমেষ?
কিংবা জানতে চাইবে
কি করে বেঁচে আছি এতটা আঘাত সয়ে!
নাকি সেই পুরানো রাগের পথ
ধরে মুখ ফিরিয়ে চলে যাবে কঙ্কাবতী?
একটু ধীরে যেয়ো!

আমি কিন্তু ঠিকই লাঠিতে ভর করে ছুটে যাব,
তোমার অভিমানী মুখটা দেখতে
তুমি কি তখনও মুখ ফিরিয়ে নেবে?

জানো কঙ্কা, কুড়ি বছরের কত অভিমান জমেছে
কত ঝগড়া করেছি একা একা তোমাকে ভেবে।
প্রতি মুহূর্ত তোমার অপেক্ষায় কাটিয়েছি,
টুপটাপ শব্দে ভেবেছি, অই বুঝি এলে!
চমকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলবে,
তোমাকে ছাড়া চলা বড় দায়
জীবন তানপুরাটা যেন বড্ড বেশি বেসুরো!

পড়ন্ত বিকেলে হুড তোলা রিক্সায় ঘুরে বেড়ানো কিংবা সেই কফি শপের কর্নারে বসে শূণ্য চেয়ারটা দেখে আজও দীর্ঘশ্বাস ভর করে।
শিল্পকলায় আর নাটক দেখা হয়না
কতদিন কবিতা আসরে বসে বাদাম হাতে নিয়ে কবিতা শোনা হয়না
সেই থেকে লিখতেও বসি না, কবিতারা যেন আজ ছন্দহীন
তুমি ছাড়া কুড়িটি বছর গেছে চলে, কুড়িটি বছর!

আরও একটিবার কি এই হাতটা ধরবে প্রিয়!
পথ চলবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি?
সারাদিন খুনসুটিতে সময় কাটিয়ে দেব
জানো, আর ভালো লাগেনা
একা একা রাতের তারা গোণা, জোসনা রাতে চাঁদের সাথে জাগতে কিংবা বিকেলে একা একা চা খাওয়া বড্ড বিস্বাদ লাগে।

দৃঢ় বিশ্বাস, মহাকাল জানি আমাদের মিলিয়ে দিবে এক বিন্দুতে।

আর একটিবার

আমি আরেকটিবার তোমার আঙুল ধরতে চাই
আর একটিবার তোমার সাথে পথ চলতে চাই
আর একটিবার খুনসুটিতে মাততে চাই
তোমারই সাথে
তোমায় নিয়ে আরেকটিবার নগ্ন পায়ে কুয়াশা ভেজা ভোরের শিশির মাড়াতে চাই
আর একটিবার তোমার হাত ধরে হুটতোলা রিক্সায় ঘুরতে চাই সারাটা সন্ধ্যে
আর একটিবার তোমার কাঁধে মাথা রাখতে চাই;
ডুবে যেতে চাই চুলের মিষ্টি মাতাল ঘ্রাণে
আর একটিবার তোমার সাথে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজতে চাই কোনো এক শরৎ বিকেলে
বিদায় বলতে চাওয়া সূর্যটাকে টেনে এনে তোমার কপালে ছোঁয়াতে চাই আরও একটিবার!

আর একটিবার খুব করে পড়তে চাই তোমারই প্রেমে ভালোবেসে যেতে চাই পুরো একটা জীবন
আর একটিবারের জন্য পূর্ণ হতে চাই
আরেকটিবার, আর একটিবার শুধুই তোমার হতে চাই।

স্মৃতিতে তুমি

তোমার নির্লজ্জ প্রস্থানে
বড্ড বেশি অসহায় হয়ে পড়েছিলাম
সবকিছুর মাঝে কেবল তোমারই মুখচ্ছবি দেখতে পেতাম
এমনকি প্রার্থনাকালেও মানসপটে ভেসে উঠতো
তোমার ওই মায়াবী মুখ।

যখন খুব বেশি মনে পড়তো,
নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়তাম
এ রাস্তা ও গলি হেঁটে বেড়াতাম আনমনে
আর ঐ প্রিয় মুখটাকে খুঁজতাম, সবখানে
প্রিয় সেই জায়গাগুলো যেখানে জমা রাখা আছে আমাদের অগণিত স্মৃতি
কার্জন হল, শিল্পকলা, বইমেলা প্রাঙ্গণ কিংবা কফি হাউসে পা রাখলেই
মনে হয় এই বুঝি পিছন থেকে কেউ ডেকে বলবে,
এত দেরি করলে যে?
একসময় অভিমান ভুলে এক নজর তাকাবে
মিষ্টি হেসে বলবে, চল যাই অজানায়।

মাঝে মাঝে মাঝরাতের খিড়কি গ’লে
বাতাসের সুমিষ্ট ঘ্রাণ ছুঁয়ে যায়
নির্ঘুম চোখের পাতা
এ যেন ঠিক তোমার চুল ছোঁয়া ঘ্রাণ
বড্ড চেনা সে আমার!
বড় মনকাড়া!!

কখনও মনে হয় চাঁদনী রাতে তুমি আমাকে ডাকছো খোলা ছাদে পাশাপাশি বসে গল্প করতে
আবার কখনও জোনাকির আলোয়
নিজেকে রাণী সাজিয়ে জানতে চাইছো আমার কাছে – কেমন লাগছে, বলো তো?
স্মৃতিরা ইদানীং বড় ভীড় করে
মস্তিষ্কের অচল হয়ে পরা নিউরনে।

আমি থেমে নেই, আজও আমি
তৃষার্ত পাখির মত খুঁজে চলেছি সেই মুখটাকে, বড্ড আপন সেই প্রিয় মুখ।

এখন বুঝি, বুঝতে পারি
তোমাকে ভালোবাসাটা
আমার খুব প্রিয় পুরোনো অভ্যাস
শত চেষ্টাতেও যা বদলানো গেল না আজও।।

কসম নিলাম

কাজের ভীড়েও সুযোগ খুঁজি
খুনসুটিতে মাতিয়ে রাখার
আমার সারা বেলার চেষ্টা থাকে
মিষ্টি তোর হাসিটা দেখার।

নিত্যই আমি নিজেকে ভাঙছি
নিত্য গড়ছি নতুন করে
নিত্যই আমি নিজকে সাজাই
তোর মনেরই মতো করে।

ভাঙা-গড়ার এই যে খেলায়
নিজকে যখন হারাই
সেই হারানো আমি’টাকেও
তোরই সঙ্গে জড়াই।

অবহেলায় দূরে সরে যাই
আবারও সেই ফিরে আসি
ভালোবাসি! ভালোবাসি
তোকে যে বড্ড বেশি ভালোবাসি!

এই জীবনে নাই বা মানিস
পরজন্মে মানবি সবই
এ জন্মে আর নাইবা হলি
সে জন্মে আমারই হবি।

এ জন্মের এই না পাওয়াটা
পরজনমে বদলে নেবো
তুই কেবলই আমার হবি
শুধুই আমার করে নেবো!

কসম নিলাম
মনে রাখিস!!

প্রিয়তমা

প্রিয়তমা, আমাকে ভালোবেসো না
তোমার ছায়ার মতো
যা গোধূলিতে মিলিয়ে যাবে।
আমি তো তোমাকে চাই
হেমন্তের সকালের সোনালী কিরণের মতো।

প্রতিদিন নয়, মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হবে
মুগ্ধ হয়ে একে অপরের চোখে ভালবাসার চাদর বুনবো।
শহরের পাঁচ তারকা ঘরের আয়েশি বিছানায় নয়
হারাবো সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়িতে
তুমি সাগরের ঢেউ হয়ে আদিগন্ত ছুয়ে যাবে আমার শরীর
কিন্তু সর্বগ্রাসী হয়ো না।

প্রিয়তমা, তুমি এসোনা কখনো দেহজ উপত্যকায় প্রেমারোহী হয়ে
পেয়ে যাওয়ার পর যা মুহুর্তেই নিঃশেষ হয়ে যায়।
তুমি অসময়ে কোকিলের গান হয়ে এসো না
এসো নিবিড় নৈশব্দ হয়ে।

প্রিয়তমা,তুমি এসো আমার পথ চলার সহযাত্রী হয়ে
এসে আমার জীবন নৌকার বৈঠাটা ধরো যুতবদ্ধ হয়ে
জীবনের নৌকাটা চলবে খরস্রোতা নদীর বুক চিরে
পৌঁছে যাব ছোট্ট দ্বীপে।
সেথায় গড়বো বসত
শান্ত সুনিবিড় পাহাড়ের পাদদেশের ছোট্ট ভালবাসাময় কুঁড়েঘরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *