জেরিন মোসফেকা’র কবিতা
কবিতা ও চিত্রকলা
কবিতা কখনো ছুঁয়ে দেয় অজান্তেই
সুপ্ত মন ও মনন।
বিমুর্ত নান্দনিকতা প্রকাশে দুর্বোধ্যতায়।
যেন কোনো চিত্রকলা
দৃশ্যমান তবু বোধের অগম্য।
কবিতা কখনো চলে চিরায়ত অনুভবের বাইরে,
অজানা শব্দবন্ধে সে অলৌকিক মায়া।
অকারণ অযাচিত এক ভালোলাগা।
চিত্রকলাও তেমনই…
বোধগম্য কিংবা অপ্রকাশ্য।
মগজের কোষে রেশ,
চোখে ঘোর, মনে ছাপ লেগে থাকা…
দৃশ্যমান স্থির কবিতা সেটাও!
দুটো শিল্প… কাগজে খোদাই..
শুদ্ধ সৌন্দর্যপিয়াসী আত্মার খোরাক।
কতখানি মূল্য তার, পুরোপুরি যায় না জানা কখনো।
রোদের মায়া
বৃষ্টিকে আজন্ম প্রিয়, তবু ভালোবেসে গাটছড়া হয়েছিল তপ্ত রোদের সাথেই।
রোদ শীতল করতে জানে না যুগের ক্ষত।
প্রচন্ড জলের জন্য হাসফাস করি
মেলে ভ্রুকুটি, নিয়ম ও বারণ।
সিক্ত হতে চাই ধারাস্নানে।
পুড়ে যাই গোপন দহনে।
দু’হাত বাড়িয়ে আজ অনুভব চাই।
মৃদু জলজ আদরে ক্রমশ হারাতে।
শুধু জানি না, বৃষ্টিকে ভালোবেসে
রোদ কেন-বা ছুঁয়েছি!
নিয়তি না বোকামীর আমৃত্যু শেকল!
বুকের কাছে তবুও
অবুঝ মায়ায় জুড়ে আছে প্রিয় রোদ
টের পাই, প্রতিক্ষণ।
পাথর সময়
কুয়াশার আবরনে মুড়ে থাকে ভোর
মন নীরব নিথর।
শরীর উষ্ণতাপ্রিয়
তবু কর্তব্যের ডাকে
জলাঞ্জলি দেই অলসতা,
রাতজাগা সকালের গভীর বেদন।
যন্ত্রের জীবন নাকি আজ যন্ত্রে রূপান্তর!
হিসেব মেলে না।
জীবনের নকশীকাঁথায় শুধু অগুনিত ফোঁড়!
বহতা জীবনে তাই বর্নিল বিভ্রম।
দ্বিধাগ্রস্ত ভীরু মনে ক্রমাগত পাড়ি দিই
পাথর সময়।
আচ্ছন্নতা
সোনালি বিকেলগুলো
ঘুমোয় চুপটি করে বুকের ভেতর।
ফড়িং এর উচ্ছ্বাস চপল চলায়।
নদীর মুখরতায় কলরব শেষে
ভোঁদৌড় বাড়ির পথে।
সময় নির্ধারক যে আযানের সুর।
দলবদ্ধ প্রজাপতি রাঙাত চৌদিক।
বিকেল মানে হুল্লোড় সন্ধ্যা পরিতৃপ্তি
বিষণ্ন বিকেলগুলো কেটে যায় রংচটা চর্বিতচর্বনে।
সেই মিষ্টি বকা, মৃদু অবাক শাসন,
চার চোখে এক নদী গভীরতা!!
স্মৃতির অ্যালবামটা খুলে যায়
আনন্দ বেদনা সাথে নিয়ে।
নিজেকে অপ্রকৃতিস্থ মনে হয়
হাসি কান্নার মিশেলে।
আলোআঁধারি বোধের শেষ নেই জানি।
আমৃত্যু এ ঘোর রবে ধূসর চেতনে
তুমি মানে প্রেম
তোমায় দেখেছি কত অমল আলোয়
দেখেছি তোমায় যত বিরূপে ভালোয়।
তোমায় করেছি কাছে শীত রাতে ওমে
নিয়েছি তোমায় টেনে লাজ তপ্ত চুমে।
ভিজেছি তোমার বুকে নিলাজ ভাদরে,
ছুঁয়েছি অতল মন বেসুরো এ সুরে।
আকুল আবাহন ঐ চিবুকের খাঁজে,
মুগ্ধ সম্মোহন যেন দুচোখের মাঝে।
কোজাগরী জোছনায় জোনাক শরীর,
ব্যাকুল বিবশ বক্ষে বাসনা তিমির।
আজো তুমি হৃদমাঝে রোদ হয়ে থাকো…
আদরে চাদরে রোজ প্রেম হয়ে ঢাকো।