মুহম্মদ নূরুল হুদা’র কবিতা
মানুষেরা ভুলে গেছে
মানুষেরা ভুলে গেছে মানুষের ভাষা
মানুষ নকল করে নেকড়ের স্বর,
আগুন লাগিয়ে নিজে আপনার ঘরে
মানুষ রচনা করে আপন কবর।
পশুরা মানুষ হতে চায় না এখন,
যেহেতু মানুষগুলাে পশু হতে চায়;
ক্ষমতা হারালে যারা হাতজোড় করে,
ক্ষমতা পেলেই তারা বাঘ হয়ে যায়।
সহজে দেখে না ফিরে নিজের অতীত,
দেখে না সে চোখ খুলে নিজ ভবিষ্যৎ
নগদপ্রাপ্তির লােভে হারিয়ে সংবিৎ
মানুষ ভাঙতে পটু আপন শপথ।
ক্ষমতা ও অক্ষমতা
রাজপথে মুখােমুখি গাড়ি:
রাজদণ্ডে দণ্ডধর,
দণ্ডহীন পথের ভিখারি।
হাজার ডানার পাখি
হাজার ডানার পাখি, আছে যার হাজার পালক,
তুমিও কি দেখেছিলে শৈশবের উড়াল প্রহরে?
এখন কোথায় পাখি? এখনাে কি ওড়ে শাদা বক?
পালক কি পড়ে থাকে জোছনায় জলাঙ্গীর চরে?
ঘরে আছাে ঘরে নেই; হেঁটে হেঁটে দূরের অদূরে,
নগর বন্দর ছেড়ে, দ্বীপ ছেড়ে, জলস্থল ছেড়ে,
আকাশের ঘের ছেড়ে, নিষেধের কড়িকাঠ ছেড়ে,
উড়তে উড়তে তুমি ত্রিভুবন আসাে ঘুরে ঘুরে।
কি-কি তবে চেনা হলাে, কি-কি তবে এখনাে অজানা?
ঘুরতে ঘুরতে তুমি দেখাে ফেলাে যেহেতু হঠাৎ
একটি একাকি পাখি, নাই যার একটিও ডানা;
পালকেরা রূপকথা, চুপকথা অন্তহীন রাত…
ডানাহীন সেই পাখি স্বতঃশ্চল অনঙ্গ বাহন;
পালকবিহীন পাখি, পরে না সে সফেদ কাফন।
দখলীস্বত্বের বাড়ি
সেতুকে উপরে রেখে নদী বয়ে যায়।
নদীকে গভীরে রেখে সেতুদের আড়ি।
তাইকি জলের সঙ্গে স্রোত দাঁড় বায়?
দ্বীপ-চরে বেড়ে ওঠে একাকিনী বাড়ি।
বাঁকা জল আঁকা জল, মাঝখানে বাড়ি।
গৃহস্থের চালাবাড়ি, হে নগরবাড়ি!
আড়ালে ঘােমটা-মুখ, হে ব-দ্বীপবাড়ি।
দখলীস্বত্বের বাড়ি, খুব দরকারি।
ভিটি ছেড়ে মাটি ছেড়ে মাঝি গলা ছাড়ে।
সাঁতরায় ডিঙিনৌকা। গাঙ দেয় পাড়ি।
দখলীস্বত্বের বাড়ি, খুব দরকারি।
গড়াতে গড়াতে কোন বোঁটা থেকে
কোথায় তার শুরু, কোন আকাশের কোন বোঁটায়
কেউ জানে না; কেউ জানে না কোন দরিয়ায়
কোন ঘূর্ণিস্রাতের গােপনাঙ্গে শেষমেশ তার ঠাঁই।
তবু যখন অঙ্কুরিত হলাে তার বীর্য, শুধু যাই-যাই।
যাবে তাে যাবে, কিন্তু কোথায় যাবে, কোন পথে?
ঠিকানা অটুট আছে কোন বটমূলে, কোন অশ্বথে?
যেতে যেতে পাল গুটাবে কোন চিলমারির ঘাটে?
গাভির ওলান ছেড়ে কোন সুন্দরীতমার দুধের বাটে?
যেখানেই যাও, যেভাবেই, আমি কিন্তু পেছন ছাড়িনি;
এতাে দুষ্মন্ত এতাে অৰ্জুন আমি কারাে কাছেই হারিনি;
আমার হাতে গদা নেই, আমি নই রঁদার মতাে সুনিপুণ;
খুনােখুনিতেই মগ্ন, বারবার আমি নিজেও হয়ে যাই খুন।
বৃষ্টি বলাে শিশির বলাে আমি আজ যে কোনাে ফোটার জন্যে উদগ্রীব;
টগবগ ফুটছে আমার তৃষ্ণা, আমি মহাদেব, আমি নটরাজ, আমি শিব।