কবিতা।। বীরেন মুখার্জী।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা
হেমন্ত-শালিখ
বিশ্বমানবতার গল্পে জড়িয়ে গেলে স্বল্পদৈর্ঘ্য ঘুম
মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে-ঝলমলে মিথ্যের মন্দিরে;
কৈশোরের কাল্পনিক আলো শরীরে জড়িয়ে
হেঁটে যায় ধূধূ পথ, প্রান্তরে-রাত্রির অদূর…
আমার জানালা জুড়ে স্থির চাঁদ-স্রোতের ধারণা
নিয়ে তবুও প্রেম আসে, অবোধ রাত্রির কোলে
কেঁপে ওঠে স্থির নদী কাম ও কুসুমে; যেন-
ধূপখোলা মাঠে জেগে ওঠা মৃত্যুর আশঙ্কা!
তারপরও ভেসে যাই থোকাথোকা প্রেমে, ছেনেছেঁকে
ভীষণ আঁধার, অভিশপ্ত-হেমন্ত রাতের শালিখ…
আকস্মিক অন্ধকার
বুধ থেকে সোম টুপটাপ বকুলের গন্ধ ঝরে
মঙ্গল এলেই বুকের ভেতর কিচিরমিচির-
তুমি ফুটে ওঠো গিরিখাত, ফুটে ওঠো ভাষামুগ্ধ
আলোর প্রসূণ-বিভাজিত অন্ধকারে!
তোমার প্রপাতে মিলে যায় স্রোত
শরীরে অক্ষর নাচে;
আগামীর চাঁদ জ্বলে-নেভে তবু
দৃঢ়তায় হাসিখেলি;
আমার আঙুলগুলো-তোমাকে খোঁজে
আমার বিশ্রামগুলো-তোমাকে খোঁজে
মঙ্গলরাতে, বাসন্তী কুহুকেকা থেকে সুঘ্রাণ নিয়েই
ফুটে আছি দেখো, কী নিঃসঙ্গ, আকস্মিক অন্ধকার!
ভিন্নতা
কার্ড পাঞ্চ করে আসো। পার হও-
কঙ্কাল ও অস্থিমজ্জার ঘ্রাণ। দুধের পাথরবাটি।
ক্ষুধার্ত আত্মীয় হও। সারিবদ্ধ ফলদ বৃক্ষ হয়ে
দাঁড়াও সামনে। তারপর পাবে প্রবেশাধিকার…
আমার ঘরভর্তি হস্তমৈথুনের প্রহর
আছে, বুদ্ধিজীবীর করুণ শীৎকার-
চেতনায় আন্তঃআণবিক উৎসব, তুমুল সার্কাস…
একান্ত আহ্লাদে
১.
কাঁধে নিয়ে সময়ের দাঁড়
বর্ণ ও গন্ধের উজানে হেঁটে যায় লজ্জা
করুণ তপতী খসে গেলে,
জলসীমানায়-
অগণন ইশারা ভাঙে
সন্দেহের ঘুড়িতে অর্ধেক সেজদা!
তোমাদের প্রকৌশল মন
গিলে খাচ্ছে তরুণ হাওয়া!
২.
আসঙ্গ কেবলি নৈর্ঋত, কারা হাঁটে?
লক্ষণরেখায় ভারী পদচ্ছাপ
কিছুতেই ছুঁতে পারে না দীঘির লাল
তুমিও কি খুলে রেখেছো ত্রসরেণু?
ঝমঝম ভাটির তটিনী-
ভেতরে চৌষট্টি কলা’র গেরো
ভাসছে, ডুবছে…
মাতাল বসেছে ধ্যানে, সামনেই খানাখন্দ;
কৈশোরান্ত সব স্বপ্ন অষ্টদল
অথচ, অঙ্ক মিলছে না!
৩.
পাতায় পাতায় শরৎ, অশ্বমেদ
এইবেলা তোমাদের গান শুনি, বরং
আত্মপ্রবঞ্চকদের ফাটতে দিই
খুলে যাক সম্মোহন
তাদের, শ্রাবণী নন্দন-
আমার তেষ্টা সর্বত্র, অক্ষরের মদ ও মধুতে
দিনে-রাতে, ষোড়শীকলায়, কাশফুলে…
ভ্রমণের ইতিহাস এইটুকু বলে-
তোমাকে একটু ডাকি,
লীলামাঠের ঘনীভ‚ত সৌন্দর্যে;
হৃদিমাঝেই যখন পোড়ে অশ্বমেদ- একান্ত আহ্লাদে!