বিশেষ সংখ্যাকবিতা

কবিতা।। ফখরুল আলম।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

আয়না

তাকালেই বিড়াল ছানাটি দেখে ডোরাকাটা বাঘের প্রতিচ্ছবি,

বাঘ দেখে হরিণের পাল, হরিণ দেখে শিকারীর জালে বাঘের

দুর্বল গর্জন, শিকারী দেখে হরিণের মাংসের ঝোল আর বাঘের

চামড়ায় ঢেকে রাখা স্ত্রীর শাদা কোমর, স্ত্রী দেখে এবার শীতে শিকার

শেষে ওই নপুংসক ফিরে না আসায় প্রেমিকের সাথে তার অফুরন্ত

সহবাস, প্রেমিক প্রার্থনা করে “এক রাত যতেষ্ট প্রভু!” এরপর মেরে

ফেলে দেবে হতচ্ছাড়ীকে বরফ শীতল জলে, জল দেখে আমাদের,

প্রতিধ্বনিত হয় সেখানে আমাদের অস্তিত্ব, ঠিক আয়নার মতো।

এত কাছে তবু আমরা ভাবি, এমন বিস্ফোরিত সময়ের পথে

শুধু সাত আসমানের আয়নায়তেই দেখা যায় সকলের ইচ্ছের ঘূর্ণন!

লুসিফারের আড্ডাখানায় বসে কত আলোচনা করি!

লুকিয়ে রাখি সেসব দুটো জানালার ওপাশে।

আয়নার সামনে ভেসে উঠে প্রকৃত প্রতিচ্ছবি! তাকাতে পারি না

বিভৎস মুখের দিকে, সামলে নেই, খানিকপর! আবার অভিনয়ে

যোগ দেই সদলবলে। যদিও আয়না আমাদের পিছু ছাড়ে না কখনো।

তাহলে আপনি? এতসবের মাঝে আপনি কোথায়?

দেখার মাঝে আমি শুধু দেখেছি, আমার শেকলে বাধা হাত

মুক্ত হয়েছে আর আমি হাসছি, যেন কার্তিকের আকাশে একটুকরো চাঁদ।

বোহেমিয়ান জীবনে বিন্দু বিন্দু জল ধারণ করে প্রথম পাপিষ্টের মতো ঘুরে

বেড়াই হাওয়া (আঃ) এর সন্ধানে, পারস্য হতে প্যারিসের বিভ্রান্ত সড়কে।

লুসিফারের আড্ডাখানায় বসে কত আলোচনা করি!

লুকিয়ে রাখি সেসব দুটো জানালার ওপাশে।

বিস্তারিত পাঠ শেষে বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই আমি মিথ্যাবাদী নই!

প্রমাণস্বরূপ বলছি ভবিষ্যৎ, কান পেতে শোনো হে মূর্খ আধুনিকগণ,

যখন এই পোড়ো জমিনে সুখ নেই, পলেস্তরা ঝরে পড়ে একে একে

সবার মানচিত্র থেকে-

আমিই তখন একমাত্র সন্ন্যাসী, সুখ বিক্রয়ের জন্য দোকান খুলে

বসব তোমাদের নগরীতে। শিমুল তুলোর মতো নরম আয়না হাতে

ফেরি করে বেড়াবো অসখ্য প্রজাতির সুখ!

নিজস্ব কারাগার

অচেতন আত্মায় শিঙ্গার ফুৎকার উথলে উঠলে-

গোলাপি ভয়েসে ভেসে জায়নামাজময় ঘাস

ফুঁড়ে জন্ম নেবে ভাবে সে রেখে চামড়ায় গাঢ় ভাঁজ,

যুদ্ধবাজ জাতির বিশ্বাসে- মধ্যবিত্ত ফিনিক্সের মতো

খোলস পালটে চলে, পুনরায় ডুবে গেলে ফেসবুকের স্ক্রিনে-

চিরচেনা সুরৎ অস্বীকার করে অনিত্য হাসি!

ঋষি প্রাণও সেথা বিচ্ছেদে ছুঁড়ে ফেলে- পুরনো

নেশার গ্লাস- জুয়ার আসরে ওড়ে স্যাঁতসেঁতে নিশ্বাস-

সস্তা বোর্ডিংয়ে ব্যবহৃত মাক্সের মতো শতশত কাফনের

পাশে অতীত মন্থনে, ছুঁড়ে ফেলে তারে নিজস্ব কারাগারে!

প্রত্যাবর্তনের প্রার্থনা

তোমার প্রতি ক্ষোভ তীব্র হতে তীব্রতর হয়, তবু যুদ্ধ কিংবা ঘৃণা নয়, কেন আমৃত্যু এ জীবন কুমারীর মতো বেদনা বয়?
শরীর নয়, নয় হৃদয় কিসের তাড়না আমায় করছে ক্ষয়? অপরাধবোধ? নাকি ভয়, নাকি আমাদের প্রয়োজন,
আমাদের পরিচয় আমাদের প্রণয়ের অন্য কোনো পরিণয় ছিল! মনে নেই তোমার! ভুলে গেছো সেই সময়?
ভুলে গেছো আঙুলের ইশারায় বলেছিলে, দূরত্ব যতই হোক ক্রয় তোমার প্রেম, তোমার অস্তিত্ব আজীবন আমিময়!’
এত এক তবে কি আর প্রয়োজন রয়, দুজনার একত্রে, মুখোমুখি বসে সংশয় রেখে বলা, “আমার রক্তে ও রন্ধ্রে সে প্রথম প্রশ্রয়,
তার বিরহ শুধু তার নয় আমার ভেতরেও শান্ত সুরমার মতো বয়।” বোলো না বন্ধু বোলো না, মহাস্তব্দতার মাঝে আমাদের কি কথা হয়!
কখনো জানবে না তারা, পুড়ে যাবে রোম পুড়ে যাবে ট্রয় কেও রবে না চিরদিন, কেও কারো নয়! বোলো না কোনোদিন,
গোপন বাক্সের গভীরে রয়ে যাও অলৌকিক বিশ্ময় হয়ে এভাবে।এভাবেই শুধু প্রার্থনা করো,
সূর্যের উষ্ণ আলোকময় এমন কোনো নির্জন রাতে আমাদের যেন আবার মেরাজ হয়!

গন্তব্য

১ হাজার এক রাত শেষ নয়, শেষ নয়,

সময় আছে! আছে কি তার?

আতরের সুঘ্রাণ ফুলের ঠোঁটে মেখে পারস্য নর্তকীরা হাসে

আর আমি দ্যাখি-

দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসে নারীর স্তনের মতো ব্রহ্মান্ড দোলে!

বসন্তের ঝরা পাতা কিংবা উল্কাপিন্ডের মতো একদিন খসে পড়ে সকলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *