কবিতা।। আমিনুল ইসলাম সেলিম।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা
অনিবার্য তুমি আছো
ভীষণ বিপন্ন__তবু একা নই
তুমি আছো বলে জানি__
একা হওয়া দূরুহ ব্যাপার
নির্জনে__যখন নিজেকে খুব একা ভেবে
বিষণ্ণ মেঘের নদী দুচোখে বসাই
যখন হৃদয়জুড়ে এলোঝড় উঁকিঝুঁকি করে
বই খুলে__
নিজেকে হারিয়ে ফেলে বসে থাকি প্রাণহীন টেবিলের কাছে
কিংবা কখনো__
উদাস পথিক হয়ে নিজেকে নিজের মনে খুঁজে পেরেশান
সেই ক্ষণে__এইসব শূন্যস্থানজুড়ে
তুমি এসে হাসিমুখে সঙ্গ দাও
দেহলগ্ন আপন ছায়ার মতো
অনিবার্য তুমি থাকো পাশে
তুমি আছো বলে, জানি__
একা থাকা দূরুহ ব্যাপার।
প্রবেশপত্র নেই
তোমার ভেতরে যাই__রোজ রোজ
অসংখ্য কুটুরি ঘর__উঁকি দেই__
খুঁজি কী অজানা রত্ন, নিজেও জানি না
দরজা-জানালা নেই__খিড়কিও সামান্য সুড়ঙ
তবু যে কী করে যাই! কোন যাদু আমাকে
এমন করে নিয়ে যায় তোমার গহীনে!
তন্ন তন্ন ওখানে অনেক খুঁজি নিজেরই
বিগত জন্ম, পুরনো ফসিল
যতো যাই, কাঙ্ক্ষা বাড়ে, বাড়ে আন্তঃক্ষরণের ব্যথা
নিজেকে বিকিয়ে ফেলে বাড়ে দুঃখ জমানোর প্রেমিকসুলভ সরলতা
কেনো যাই, সেই প্রশ্নে নিজেই নিজেকে করি ভর্ৎসনা, বলি প্রতারক
যাই-আসি, আসি-যাই
এই যাওয়া-আসা খুব ব্যাধীক্লিষ্ট
প্রবেশপত্র নেই, তবু রোজ যাই।
তোমার দুচোখ
তোমার দুচোখ দুই নদী
ভীষণ গভীর আর শান্ত নিরবধি
জল তার স্রোতহীন__দারুণ মুগ্ধকর__কালো
দূর বা নিকটে দেখি__বিস্ময়ে__লাগে তাই ভালো
জানি না সাঁতার-__তবু জলে নেমে পড়ি
একটা নদীতে ভাসি__আরটায় ডুবে গিয়ে মরি
তোমার দুচোখ মায়াবন
গহীন গাছালিভরা__অন্ধকার ছলনাপ্রবন
ভেতরে নানানরূপী পাতাদের স্নিগ্ধ ওড়াউড়ি
দেখে দেখে ভ্রম হয়__চোখেও কি থাকে কোনো ঘুড়ি?
হঠাৎ পাখির মতো পথ ভুলে ঢুকি মায়াবনে
মনভোলা শিশু হয়ে খেলা করি প্রাণগ্রাহী সবুজের সনে
তোমার দুচোখ দুটো তারা
দুহাত বাড়ালে পাই আলোকরশ্মিময় সাড়া
প্রেমপুষ্ঠ পৃথিবীতে গোপন ঠিকানা খুঁজে নিয়ে
তারা দুটো জ্বলে নেভে নিদাঘ আকাশে উঁকি দিয়ে
আমাকেও ডাকে খুব সঙ্গোপনে__ ইশারাভাষায়
সহস্র জনম নিয়ে আমিও অধির থাকি বিপুল আশায়
তোমার দুচোখ যেনো শুধু চোখ নয়
আমার গোপন মৃত্যু, শাশ্বত আশ্রয়।
আমাকে আটকে দাও
তোমার দেহের জোৎস্না আমাকে দেখাও
কতোদিন স্নানহীন, একপক্ষ অভিমানে__
কতোদিন জমে আছি শীতে পোড়া ঘাসে
পড়ে আছি ডানাভাঙা পাখিটির মতো
তোমার দেহের গন্ধে আমাকে পোড়াও
কতোদিন ঘ্রাণহীন__নেশাহীন__অভ্যস্ত অলস
কতোদিন নগরের অসুস্থ বাউল
পথে পথে পড়ে থাকি শুশ্রুষাবিহীন
তোমার দেহের রক্তে আমাকে জাগাও
মরে আছি ঘাতকের গুপ্ত ছুরিতে
রক্তের দাগ মুছে গেছে তবু__
যন্ত্রণা বানের বাড়ন্ত পানি যেনো
তোমার ভেতরে ডেকে দেখাও মনের যাদুঘর
চুক্তি হোক সমসম্পৃতির
আমাকে আটকে দাও, করে দাও থির।