কবিতা।। গোলাম কিবরিয়া পিনু’র।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

দুঃখ

দুঃখ থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ খুঁজলেও,

সে-পথ খুঁজে পাবে না সবসময়ে! তোমারও

তো বোধভাষ্যি আছে–মানুষ মাত্রই দুঃখ

থাকবে, এই বাস্তবতা নিয়ে আশ্রমে থাকি

আর না থাকি, অট্টালিকায় থাকি আর না

থাকি, কুঁড়েঘরে ঘরে থাকি আর না থাকি!

দুঃখ ও যন্ত্রণার উপশম হতে পারে, তবে

তা সম্পূর্ণ কর্পূর হয়ে উড়ে যাবে না–একদম;

বোতলে থাকা মানুষ–তুমি যতই গুরুর

পদতলে গিয়ে থাকো না কেন!

স্মৃতিকথা

আমাদের স্মৃতিকথা পাওয়া যাবে না,যাদুঘর

কিংবা গ্রন্থাগারে, পাওয়া যাবে না নথিপত্র ও

চিঠিতে! কষ্ট ও অত্যাচারের কথাও–সেভাবে

জানা যাবে না, যুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিলাম

আমরাও, রক্ত তো আমরা সাধারণেরাই বেশি

দিয়েছিলাম! সেইসব নথিপত্র নেই–যে নথিতে

কিছুটা প্রমাণাদি ছিল, তাও হারিয়ে গেছে, যে

চিঠিটা লিখেছিল পিতা তার পুত্রের কাছে–

‘যাও যুদ্ধে, হাতে অস্ত্র নাও।’ সেইসব ভাষ্য

পাওয়া যাচ্ছে না এখন! ইতিহাসের পাতা ভরাট

করতে পারিনি আমরা, যেমন ভরাট করতে

পারিনি–এখনো আমাদের পেট ও স্বপ্ন! আমরা

তো–যুদ্ধের পরপরই–আগের মতই মাঠে

ও কারখানায় শ্রম দিতে ব্যস্ত থেকেছি!

হৃদপিণ্ড

বুদ্ধিমান ইঁদুরও তৈরি হচ্ছে, তাদের স্মৃতিশক্তি,

পর্যবেক্ষণ ও শেখার ক্ষমতাও বাড়ছে, আর কিছু

মানুষের চৈতন্য লুপ্ত হচ্ছে! তারা কখন কোথায়

আত্মঘাতি হয়ে দুগ্ধপোষ্য শিশুকে পর্যন্ত হত্যা

করছে, তার কোনো খেয়াল নেই! তারাও তো

নারীর গর্ভে বেড়ে উঠেছে, সেটা ভুলে গিয়ে–

স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজের ভূখণ্ডে যে মানচিত্র তৈরি

করছে–তা কতটুকু মানুষের জন্য নিরাপদ ও

উপযোগী? তারা তা না ভেবে–যে চর্বি বাড়িয়ে

তুলছে নিজের শরীরে, তা কি হৃদপিণ্ডকে

সচল ও সুস্থ রাখবে?

লাভালাভ

না, আত্মপীড়নের কথা বলছি না, খেটেখুটে

তুমি ইচ্ছে পূরণ করবে, তা তো নিষেধ

করছি না। কিন্তু যখন তুমি অধঃপতিত হয়ে

অলক্ষে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে–অন্যের ফসল

শুধু দখলে নাও না, তছনছ করো! তা তো

মানা যায় না! স্বার্থপর হও, তার সীমানা

কতটুকু হবে? নিজেকে প্রস্তুত করছো শুধু

সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার জন্য, অন্যের

পিপাসা মিটছে কিনা–এক গ্লাস জলের

জন্য, তা তুমি দেখবে না! মৃত আত্মীয়ের

শোকের দিনেও লাভালাভ খুঁজতে থাকো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *