কবিতা।। নাসির আহমেদ।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

আকাঙ্ক্ষা বাড়ি নেই

আকাঙ্ক্ষা ছিল একদিন এই বাড়িতে
ধূপের গন্ধ ছড়িয়ে সন্ধ্যা আনতো
আমাদের সব স্বপ্ন সে ছুঁয়ে থাকতো
সমর্পণের নীল রাত্রিকে চিনতো চিনতো।

আকাঙ্ক্ষা আজ ভুলেছে প্রেমের তৃষ্ণা
কামক্রোধহীন যেন এক সাধু-সন্ত
ঘুমিয়ে পড়েছে পুষ্পিত সেই উদ্যান
হৃদয়ের কথা ফুরিয়ে সে আজ নিঃস্ব।

উদ্যানে ফুল ফুটছে না আর আজকে
মহামারী যেন ছুঁয়েছে ফুলের বাগানও
কামের আগুন জল ঢেলে ছাই করেছে
কুমারী মেয়েটি যদিও স্বপ্নে দুলছে।

আকাঙ্ক্ষাহীন এইভাবে বাঁচা যায় কি!
ফিরে এসো মেয়ে, ফিরে আসো তুমি এখনই!
তুমিতো সড়ক জীবনের গন্তব্যের
তুমি না থাকলে জীবনের আলো জ্বলে কি?

শারদসন্ধ্যা ডাকছে তোমাকে ও মেয়ে!
শিউলি-শরৎ ডাকছে ঢাকের শব্দে।

কবির জন্মদিন

নিসর্গ প্রকৃতি আর মৌন চরাচরও জেনে গেছে
আজ কবির জন্মদিন:সুপ্রভাত কবি, শুভ জন্মদিন!
নর্তকী মুদ্রায় যেন নেচে উঠল গোলাপের শাখা!
যুগল গোলাপ সমস্বরে বলে ওঠে: শুভ জন্মদিন কবি!
পাহাড়ে ঝর্ণায় বনভূমি সর্বত্রই
একই ছন্দে কলধ্বনি : শুভ জন্মদিন।

হাওয়ায় হাওয়ায়: শুভ জন্মদিন ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তোলে
শনশন বাঁশঝাড়ে হাওয়া : শুভ জন্মদিন
তোমার জন্য কবি আনন্দে রঙিন!
শুভ জন্মদিন।

সকালের একচিলতে সোনারোদ জানালা গলিয়ে
পড়ার টেবিল ছুঁয়ে বলে উঠলো: শুভ জন্মদিন!
ঝড়ো হাওয়া অকস্মাৎ শিরীষ শাখায় যেন স্ফূলিঙ্গ ছড়িয়ে দিল নৃত্য ভঙ্গিমায়:শুভ জন্মদিন।

বঙ্গোপসাগর থেকে ঢেউ এসে প্রতিটি নদীতে উৎসব-তরঙ্গে বলে গেল: প্রিয় কবি শুভ জন্মদিন!
জাহাজের ভেঁপু থেকে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি শুনি: শুভ জন্মদিন!
মৃত্যুকে ভেংচি কেটে সোনালী গোধূলি ঢেলে দিলো জন্মদিন।

আজ তিথি যা-ই হোক,চেতনায় শুক্লপক্ষ রাত
সোনালি বলের মত চাঁদ তার সমস্ত চন্দ্রিমা
ঢেলে দিয়ে বলে উঠলো: শুভ জন্মদিন!

কবি ছাড়া আর কার এমন গৌরব আর সৌরভ ছড়ায়
প্রকৃতিও জেনে গেছে তিনি যে মহান স্রষ্টা-পিতা,কবিতার!

একটা মোমবাতির স্মৃতি

একটা স্নিগ্ধ আলো জ্বলছে দূরে, তোমার জন্মদিনের
বিগলিত মোমবাতির কথা মনে পড়লো এই সন্ধ্যায়
নিদ্রিত রাত্রির গভীরতা টানছে আমাকে, স্তব্ধ অপরাহ্নের
গভীর সান্নিধ্যের স্মৃতি চলে আসছে দ্রুত স্নায়ু কোষে।

তোমার ভেজাচুল থেকে পৌষের মধ্যরাতের তীব্র শিশির
ঝরছে টুপটাপ , তুমি একটু আগেই স্নান সেরে এসেছো
রাতের সঙ্গম স্মৃতির ফুরোতে না ফুরোতেই পরকীয়া ঢেউ
তোমাকে নামিয়ে দিলো শুভ্র শয্যার সমুদ্রের পুনর্বার।

অতৃপ্ত তোমার তৃষ্ণাএবার মিটাও ভালো করে
পান করো মোমের আলোয় সেই আশ্চর্য সঙ্গম-স্মৃতি!
পড়ে থাক বরফে ঢাকা দাম্পত্য সংসার প্রাত্যহিক,
ছেলেরা ইস্কুলে থাক, মেয়েটি আসুক একা একা।

তুমি যাও প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জন্মদিনের কাছে
তুমি যাও হাঁকরা মাছের মুখে তৃষ্ণা বিসর্জনে।

গণতন্ত্র বিষয়ে কয়েক ছাত্র

তুমি কোন গণতন্ত্রের দাবিতে রাজপথে!
যে গণতন্ত্র নির্বাচন কমিশন অসহায়?
যে গণতন্ত্রের গোলাম আযম আবার
উঠবেন জেগে তার সাম্প্রদায়িক দর্শন নিয়ে!

যে গণতন্ত্রের সংশয়বিদ্ধ হবেন ৩০লক্ষ শহিদ!
তুমি কি সেই গণতন্ত্রের কথা বলছো–যে গণতন্ত্রে
স্বাধীনতা বিরোধী দণ্ডিত ঘাতকেরা
পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল বহুদলীয় উল্লাসে।

তুমি হাঁসমুরগির ডিম সর্বত্রই পাবে কিন্তু
ঘোড়ার ডিম কোথ্থাও না!একদিন রক্তাক্ত পথ
পেরিয়ে রূপকথার ঘোড়ার পিঠে চড়ে এসেছিল
গণতন্ত্র!তাকে হত্যা করেছে ওই ঘাতকেরা।

তুমি অপেক্ষায় থাকতে পারো, নিশ্চয়ই আসবে
গণতন্ত্র পদ্মাসেতু পার হয়ে ,হোসেন শহীদ
সোহরাওয়ার্দী থাকবেন পতাকাবাহী সেই গণতন্ত্রের
মিছিলে পুরোভাগে, আপাতত অল্পে তুষ্ট থাকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *