কবিতাবিশেষ সংখ্যা

কবিতা।। আলমগীর রেজা চৌধুরী।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

ঠিকুজি

হাঁটু গেড়ে পাকা গেরিলার মতো অব্যর্থ নিশানায় এখানে বসবাস করে
নাবাল বাঙ্গাল।
প্রেমকুমার নই, বঁইচির মালাগাঁথা মগ্ন নায়ক
‘জল ভর সুন্দরী কন্যা’ কাতর বেহুলা সেজে প্রেম প্রেম খেলে
করুণ বিলাপে গেয়ে যায় ভাটিয়ালি সংগীত।
সে কি জানে!
মদনকুমার উপাখ্যান হয়ে আছে।
বটবিরিক্ষির ঝুল বেয়ে ঈগল চক্ষু হেনে স্টেন উঁচিয়ে ধরে
তরুণ গেরিলা ময়েজউদ্দিন বাবু,
হাঁটু গেড়ে জন্ম দিয়েছে এই বদ্বীপ─
‘আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।’
তা তা থৈ থৈ
জল এবং রক্তে শুয়ে স্বপ্ন দেখে─ গোয়ালে দুগ্ধবতী গাভি,
রশি ধরে থাকা প্রৌঢ় রমণী একজন রহিতন বেওয়া
যার চোখের চাঁদে ওড়ে নীল নীল প্রজাপতি
দূর কদলী গ্রামে ওর বাপের বাড়ি
ও স্বপ্নের পরিব্রাজক,
কষ্টে নীল হয়ে অনুভব করে─
তার সন্তান একাত্তরে রণাঙ্গন থেকে ফেরেনি, রক্তাক্ত নিশান
ওড়ে কার্নিশে, ছাদে। ও শুধু আকাশ দেশে, মেঘের নিকট
জীবনানন্দের সোনালি চিল ধূসরতায় লীন
ভাবে, জল দাও, দাও বৃক্ষ সংগীত।
তুমি কোন ছাড়?
আমি নাবাল বাঙ্গাল।

কতিপয় মুখ

কী ছিল নগরীর দরজায়, তুমি ফিরবে কেন?
গাঢ় অন্ধকার, আলোকিত প্রতিভাসে মুখখানি কার!
তুমি ফিরবে কেন?
আমি ওই গৃহ চিনি, ওর যোনিদেশে বসবাসরত
মনুষ্য জীবন, আমার জন্ম সহোদর।
আমাদের মঞ্জুলিকার ভাই, আহ! গুপ্তঘাতক খুন
করেছে সোনার কিশোর।
ওই নগরে একজন রাজনীতিবিদ থাকেন, যে
প্রতিরাতে নষ্টনারীর মাঠে চাষ করে সিফিলিস─
যে তোমার মাতা
তুমি ফিরবে কেন?
নগরে তুমি যাবে, খুঁজে নেবে গুপ্ত ফটক
ওফ, ডেভিল! ডেভিল!

আদল

ওই আদল লুকানো যায় না।
সরীসৃপের মতো পিলপিল করে হাঁটে
ওরা আণবিক টোটেম, নাগাসাকি ফসিল
আর শতাব্দীর গভীর ক্রন্দন।
হলুদ বিরান মাঠে আহত ঘাসফড়িং
ফ্যাকাসে পাখনায় সবুজ পালিয়েছে।
বাতাসে মাংস পোড়ার গন্ধ,
ওই আদলে হন্তারকের ছায়া
হৃদয়হীন মরু হাহাকার।
বকুলতলার পুকুরপাড়ে জলের মধ্যে যে আকাশ
জলের নাচনে টলমল করে, ওড়ে ঝাঁক ঝাঁক হরিয়াল
এ বিমুগ্ধ ছবি ওই আদলে মানায় না।
যেমন মাসকান্দার কানিবক ঈগল চেনে না।

বিক্ষুব্ধ জনপদের রোজনামচা

কিছু শোক থেকে আমি তাকে দূরে রাখি
থোকা থোকা শোক তোমাকে নিয়ে চলে যায়।
চে’র মৃত্যুর টেবিলে শীতল চিৎপাত শুয়ে থাকা,
শোকাচ্ছন্ন শহরের প্রতি ল্যাম্পপোস্ট- ব্লাকয়াকআউট।
নিয়নের আলোয় আমি তাকে দেখতেই পাইনি─
অন্ধকারে একটি কনভয় চিৎকার করে ওঠে─ হল্ট!
তারপর গুলির শব্দ,
ময়েজউদ্দিন বাবু তরুণ পৃথিবীর ছাওয়াল
মুচকি হাসিতে গোঙায়, তুই দাঁড়িয়ে থাকিস না,
আমি আবার ফিরে আসব।
সারা শহরে কালো কফিনও বহন করে না কেউ
যত্রতত্র মানুষ মরছে। ভোরবেলায় দেয়ালে দেয়ালে
সেঁটে আছে অসংখ্য কালো কফিনের পোস্টার, পতাকার ছবি,
ফিদেলের মতো দীর্ঘকায়─ শেখ মুজিবুর রহমান।
ঠিক সে সময়, একজন গেরিলা স্টেন হাতে
গলি পার হয়ে যায়।
শোকাচ্ছন্ন নগর থেকে একসময় পৌঁছে যাই।

৩ thoughts on “কবিতা।। আলমগীর রেজা চৌধুরী।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

  • ইলিয়াস ফারুকী

    সত‍্যিই চমৎকার। বিশেষ করে “ঠিকুজি” কবিতাটি।

    Reply
  • শেখ ফিরোজ

    চমৎকার

    Reply
  • শাহানারা ঝরনা

    কবিতাগুলি খুব ভালো লাগলো। কবির জন্য আন্তরিক শুভকামনা রইলো।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *