সিরাজুম মুনিরা ময়ূখ- এর কবিতা
অপরুপ বিষন্নতা
আমার কেবল বিষন্নতাই ভালোলাগে
ভালোলাগে কাঁঠালিচাঁপার ডালে বসে
নিঃসঙ্গ পাখির অন্যরকম তাকিয়ে থাকা।
শুকনো পাতা, হলুদ রঙের বিষাদ নিয়ে
হঠাৎ যখন ঝড়ে পড়ে তখন ও ভালো লাগে।
বিষন্নতায় মাখামাখি মধ্যদুপুরে গাছের ছায়ায়
জিড়িয়ে নেয়া নারী, উদাস চোখের বিষন্নতা ভালো লাগে।
আমার তাকে সেই দেখাতেই ভালো লাগে।
খালের পাড়ে মাঝি যখন জাল ছড়িয়ে বসে থাকে
জারুল তলে কেমন যেন আনমনা সে,
সংসার তাকে বিষন্নতার মায়ায় বাঁধে।
এসব দৃশ্য দেখতে আমার ভালো লাগে।
একটু দূরে কলমী শাখার দোল লাগানো আলের ধারে
কিশোর যখন গান গেয়ে যায় উদাস মনে বিষন্নতার সুর তুলে।
শব্দ ছুঁড়ে খোলা মাঠের এপাড় ওপাড়।
সবুজ ছাওয়া ক্ষেতগুলি সব নীল মাখানো আকাশটাও
বিষন্নতায় বৃষ্টি নামায় তেপান্তরে।
আমার সেসব ভালোই লাগে।
একটি বাঁশের খুঁটির উপর মাছরাঙাটা তাক করে রয়।
হঠাৎ করে হাওয়ার দোলে বিষন্নতায় সেও উড়ে যায়।
বিষন্নতায় যা কিছু সব খুব অপরুপ।
আমার কাছে বিষন্নতাই ভালো লাগে।
ফাগুন দিন
ফাগুন দিনের প্রথম প্রহর
কেমন উদাস দখিন হাওয়া
রুক্ষ দিনের পথের ধুলো
উড়িয়ে দিলো সকল চাওয়া।
মন বসেনা কোন কাজে
এদিক সেদিক বেখায়ালে
ঘুরে বেড়ায় আপন ডানায়
বেপরোয়ার খামখেয়ালে।
বইয়ের পাতা বাতাস উড়ায়
আঁচল খোলা উদাস দুপুর
চুলের গোড়ায় আঙুল গুলো
রুনুঝুনু পায়ের নুপুর।
ফাগুন দিনের কৃষ্ণচূড়ায়
অনেক লালের মাখামাখি
একটি কোকিল বেজায় পথিক
দিনভর তার ডাকাডাকি।
পাতাবাহার রং ধুলোতে
মাখছে আরো ধুসর ধুলো
আমার আমি ছন্নমতি
খামখেয়ালি মেজাজ ভুলো।
অভিলাষী অন্যমনা
তুই যে আমার খুব খেয়ালে
বেড়ে ওঠা, মনের কোণে
এক ফোটা শিশির কণা।
শীত সকালের সূর্য রোদে বিলীন হতে
শুভ্রতুষার ঘাসে ঘাসে,
ঘাস ফুলেদের আশেপাশে,
অবাক করা রোদ্দুরেতে
হারিয়ে যাওয়ার অভিলাষে অন্যমনা।
নীলাকাশের যত দূরে দৃষ্টি রাখিস
আমায় ডাকিস, আসবো উড়ে।
প্রজাপতির মত করে,
আলোবাতাস মিলিয়ে রোদে, রঙ মাখাবো।
রোদ ফুরোলে শিশিরস্নাত মেঘের ভাঁজে
সারা বিকেল রাখবো তুলে।
তবুও তুই আমায় ডাকিস,
শিশির ভেজা রোদ সকালে গায়ে মাখিস!
প্রতিক্ষায় প্রতিক্ষণ
আমিও জানি
চলে যাওয়া ঢেউ আর ফিরে আসে না তটে।
শুকিয়ে গেছে যে ফুল
সে আর ফুটবে না সজিবতার স্পন্দনে।
বিগত বর্ষায় যে কদম ফুটেছিলো ডাল রাঙিয়ে
সেও আবার আসে নতুন সাজে।
যে সময় হারিয়ে যায় মহাকালের আবশ্যকীয় নিয়মে
সে সময় শুধু বিষাদ জমায়।
কালে কালান্তরে ঘটে যাওয়া নীলপদ্মময়
সময় শুধু স্মৃতি।
কিছু ফিরে আসে না জেনেও
আমি অপেক্ষা করি, তোমার জন্য
চলে যাওয়া তুমির জন্য আমি থাকি আমৃত্যু প্রতিক্ষায় প্রতিক্ষণ।
হয়তো পথের বাঁকে মিলিয়ে যাবে সূর্য
নীড়ে ফিরে পাখিরা মেলাবে হিসেব।
কিন্তু বেহিসাবি স্বপ্ন
এমনি ভাংগা পাড় বেয়ে গড়িয়ে যাবে
হয়তো পাবে, নয়তো আড়ালেই থেকে যাবে।
পৃথিবীর পথে যদি দেখা হয়ে যায় আর একটি বার,
বহু বছর কিংবা শতাব্দীর দাবী নিয়ে বলবো কথা শত সহস্রবার।