ফারুক মাহমুদ-এর দীর্ঘ কবিতা

ভুমিকা
কৃৃৃষ্ণদৈপায়ন ব্যাসের ‘মহাভারত’ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের বৃৃহত্তম গ্রন্থ এবং পৃৃথিবী বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর অন্যতম। এতে আছে অগনিত গল্প এবং উপগল্প। এসব গল্প-উপগল্প থেকে নির্বাচিত একটি গল্পের শুধু প্রেমের অংশ নিয়ে কবিতায় লেখা হয়েছে নীচের ‘কাব্যগল্প’টি।

প্রেমের শান্তির কাছে মৃত্যু এসে মানে পরাজয়

উজ্জ্বল হাসির মতো ফুটে আছে শত পারিজাত

এমন অমরপুরে ইন্দ্রসভা মাতলির বাস
সুরকামিনীর চেয়ে শতগুণ কমনীয় রূপ-
ঘরে তার আছে অষ্টাদশী এক, গুণকেশী নাম
যে-ফুলে গাঁথুক মালা, ফুলগুলো হয় আয়ুষ্মান
যখন সে হেসে ওঠে থেকে থাকে আলো সমুদয়
তার যে হাঁটার ভঙ্গি, থেমে যায় সব কোলাহল
মুগ্ধতা, মুগ্ধতা শুধু, জ্যোৎস্নার উপচে পড়া হাসি
নেমে আসে মেয়েটির চারপাশ ঘিরে, গেয়ে ওঠে
বনের সকল কণ্ঠ, গুণকেশী গায় এক সুরে

এমন আত্মজা যার, তার মনে সুখ নেই কেন?
কে দেবে উত্তর তার! কত বার কত পথ ধরে
ভেবে গেছে কাছে দূরে দূরে কাছে পিতার হৃদয়
মেলেনি উত্তর কিছু। সব যেন কুয়াশায় ঘেরা

বিপুল সোনার দেশ, সকলের প্রিয়জন তিনি
কত মুখে খুঁজেছেন- একটি মাত্র প্রিয়পাত্র মুখ
রূপে-গুণে, শৌর্যে-বীর্যে একবাক্যে বলা যাবে যাকে
নদীর স্রোতের মতো এই হল প্রফুল্ল পুরুষ

হেঁটেছেন ক্লান্ত পায়ে পাতালের দেশ বারনপুরে
যেখানে মাছেরা হয় জ্যোৎস্না পানে অতি মনোহর
জগতের শান্তি চেয়ে হাতিদল মেঘ ছেনে নিয়ে
জলের ফোয়ারা তোলে, পাখিকুল পুষ্পগীতিকায়
থাকে মুখরিত। এমন যে দেশ, ওখানে কী নেই?
প্রত্যাশার কোনো মুখ, যার চোখে চোখ ফেলে আছে
গাছের সবুজ ছায়া, অগ্নিধারা আলো হয়ে ফোটে
অদূর সুদূর পথে, যেখানে যে চোখ তুলে চায়

ব্যর্থতার একপাড় থেকে অন্যপাড়ে শুরু হলো
নতুন যাত্রার পথ। এর নাম ভোগবতীপুরী
বাসুকির এই দেশ- মনে হয় মায়ের আঁচল
শান্তির অমিয় ধারা প্রতিদিন দীর্ঘ পুণ্যময়
ফুল হয়ে ফুটে আছে তপস্যার আলোপূর্ণ ছায়া

সভাঘরে হেসে আছে বহুবর্ণ আলোর ঝালর
নাগপ্রধান আর্যক বসেছেন স্বর্ণ সিংহাসনে
তার পাশে দিব্যদেহ যুবকের দৃঢ় বসে থাকা
যখন সে কথা বলে, মনে হয় প্রার্থনার গান
হৃদয়-বীণার তারে বেজে ওঠে। কে এই যুবক?
আনন্দিত প্রশ্ন ফোটে মাতলির চোখের তারায়

প্রশ্নের আড়াল ভাঙে আর্যকের খোলামেলা হাসি
নদীর স্রোতের মতো কলকল স্বচ্ছ উচ্চারণে
আর্যক বলছেন কথা- ‘সুমুখ আমার পৌত্র, সে-যে
আমাদের সকলের প্রিয় পাত্র, চোখের আলোক’
এইটুকু বলে থেমে গেল আর্যকের ভাষা, যেন
মেঘের কালোর আড়ে ঢেকে গেল উচ্ছলিত চাঁদ
বুকের গভীর স্থানে আছড়ে এল বজ্রমোড়া ঢেউ

হতবাক সভাগৃহ, হতবাক মাতলির চোখ
প্রীত যদি, কেন তবে আর্যকের বিষণ্ন বদন!

পাশে বসা সুমুখের চোখ দুটো জলে ভরে আছে
‘আমার তরুণ পৌত্র, ভাবা যায়, বেঁচে থাকা ওর
আর বেশি দিন নেই। বিষ্ণুকৃপা পেয়েছে গরুড়
সংহার-আমোদে মেতে নাগদের বিনাশ সে চায়
ক’দিন হয়েছে মাত্র, প্রিয় পুত্র চিকুর নাগের
প্রাণ গেছে গরুড়ের হাতে। এবার সে সুমুখের
নেবে প্রাণ। দিনক্ষণ সব তার ঠিক করা আছে
যে কলি ফোটেনি, তাকে ছিঁড়ে কোন সে পাষাণ!
নাগশিশু, যে ঘুমিয়ে আছে শান্ত মাতৃকোলেতার
বুক ছিন্ন হবে- কুণ্ঠা-কৃপা করে না গরুড়
আমার জীবনে আরও একটি শোক আসন্ন এখন’

ব্যথিত বৃক্ষের মতো কেঁপে ওঠে মাতলির মন
‘আমার যে ইচ্ছা ছিল, গুণকেশী আর সুমুখের
সুখের জীবন হবে, যৌথ ঘর, এক ছায়াতলে’

‘হোক না আমার পৌত্র, ছোট আয়ু যার, তার সঙ্গে
কুমারী কন্যার বিয়ে! এর চেয়ে বিকট বিষাদ
আর কিছু হয়! একদিকে জ্বলবে প্রেমের প্রদীপ
অন্যদিকে নিবে যাবে প্রিয়তম মানুষের প্রাণ!

হাতে হাত, চোখে চোখ, দেখে-ছুঁয়ে বিমোহিত হবে
সময়ের কিছু বাকি নেই। মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছে দ্বারে
কপট-নিঠুর হাতে মধুপাত্রে ঢেলে দেবে বিষ’

‘বিয়েতে সম্মতি দিন’ মাতলির সোজা উচ্চারণ

‘এ কী কথা! মৃত্যু যার সন্নিকটে, তার সাথে বিয়ে!
অধিক অবাক মানি, কোনো পিতা প্রিয় আত্মজার
অচির বৈধব্য চায় কখনও তো শুনিনি এমন’
‘বিদ্বেষের বিষ যার মনে- গরুড়ের ধ্বংস চাই’

‘কী করে সম্ভব হবে? কোন পথে গরুড়ের নাশ?’

‘দেবরাজ ইন্দ্র যদি কৃপা করে আমাকে ডাকেন
যথেষ্ট বিশ্বাস করি, সুুমুখের ভয়াবহ ফাঁড়া
দূর হবে অতি দ্রুততায়। তাকে নিয়ে ফিরে যাব
সুরপুরি-অমরাবতির দেশে, আমার আশ্রয়ে’

‘ভয় হয়, গরুড়ের থাবা যদি আরও দীর্ঘ হয়’
সুমুখের চোখে-মুখে দেখা দিল হাসির ঝিলিক

‘আমাকে বাঁচাতে পারে, তেমন কোনো আশার বাণী
শোনাতে পারেনি কেউ। ছেড়ে যাব ভগবতীপুরী
মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া এই দেশে আর কিছু নেই

অমরপুরীতে যাব। ক্ষীণ হোক, বেঁচে যাওয়ার
সম্ভাবনা আছে। দেবরাজ ইন্দ্র যদি তুষ্ট হন
পেতে পারি অমৃতের স্বাদ। আশা জাগানিয়া দেশে
যেতে চাই। পিতামহ, দয়া করে অনুমতি দিন’

লুকিয়ে চোখের জল, আর্যকের ছোট্ট কথা- ‘এসো’

এ হলো অমরাবতী। বিস্ময়ের শেষ কিছু নেই
যত দূর চোখ যায়, হেসে আছে পারিজাত হাসি
মুগ্ধতা মুগ্ধতা শুধু, ভরে গেল সুমুখের মন
হাসির ফোয়ারা ফোটে। জরা নেই, নেই কোনো দাহ
এখানে যৌবন যেন হর্ষধারা-চিরজাগরিত

আসন্ন মৃত্যুর ভয় সরে গেছে। সুমুখের চোখে
নতুন আলোক। আহা, বেঁচে থাকা কত পুণ্যময়!

সুমুখকে সঙ্গে নিয়ে মাতলির ঘরে ফেরা হলো

সুধর্মা, স্ত্রী তার, পাশে আছে কন্যা গুণকেশী
এ কথা, ও কথা শেষে মাতলির হাসি হাসি মুখ

‘কে এই যুবক, পিতা, কী বা তার নাম-পরিচয়?’
গুণকেশী জানতে চায়-‘বলো তার আগমন হেতু’

মাতলির মুখে কোনো কথা নেই, ছোট্ট করে হাসে

সুধর্মার রাগ চড়ে, গুণকেশী করে অভিমান
আমাদের অতিথি সে, বাকি কথা পরে জানা যাবে,
লতাগৃহে রেখে এসো, তুমি তার যত্নআত্তি কোরো

পথ যেতে দু’জনের কথা হয়, চোখে-চোখে কথা
লজ্জার পরাগ মাখা কথাকলি ফুল হয়ে হয়ে ফোটে
কথার পেছনে কথা, আগে-আগে কথা হেঁটে যায়
যেতে-যেতে কোনো কথা অন্য কথা ছুঁয়ে দিয়ে যায়
কথার ফুলের ঘ্রাণে দু’জনের ভরে আছে মন
কথার মনের কথা অন্য কথা জেনে গেছে মন

চোখের কথার ভাষা ঠোঁটে আসে, পেয়ে যায় ভাষা
‘তোমার পিতার ইচ্ছা আমাদের দু’জনের পথ
মিশে যাক একটি পথে এসে’, সুমুখের কথা শুনে
গুণকেশী লজ্জানত, কেঁপে ওঠে, হেসে ওঠে চোখ
যে-কথা শোনার জন্য অপেক্ষায় জেগে ছিল চোখ
যে-মুখ দেখার জন্য প্রতীক্ষার এতটা বছর
সেই কথা, সেই চোখ আজ তবে সত্য হয়ে এলো
মনের গোপন জলে আকাশের ছায়া ফুটে আছে
নতুন মায়াবী সুরে কে বাজাল হৃদয়ের বাঁশি
বাতাসের কণ্ঠসুধা এত সুর কোথা থেকে পেল
ঢেউ ওঠে ঢেউ ভাঙে অনাঘ্রাত দেহতরী দোলে
হৃদয়ে হৃদয়ে মেশে, মিশে যাবে শরীরে শরীর
কামনার পাত্রগুলো ভরে যাবে কানায় কানায়
প্রাণের প্রখর গানে যত ছিল বিষাদের সুর
আজ পেল সেই ভাষা: ঢাল ঢাল জলের আগুন

মধুর আবেশ থেকে সরে ওঠে সুমুখের মন
প্রীতি সত্য, প্রিয়া সত্য, ভালোবাসা সত্য হবে আরও
যার মনে এত প্রেম, যার চোখে চোখ তুলে আছে
জগতের সর্বআলো, প্রকৃতির সব পরিভাষা
যার ঠোঁটে হেসে ওঠে সাগরের সমুদয় ঢেউ
কোন মুখে তাকে বলি, ‘বেঁচে থাকা শেষ হয়ে এলো
গরুড়ের ছায়াবিষ ঘিরে আছে আমার জীবন’

“বিচলিত কেন হও প্রাণাধিক প্রেমের পুরুষ
মৃত্যু আর প্রেম যদি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দাঁড়ায়
কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে? মৃত্যু! সে তো সামান্য প্রকাশ
‘প্রেমের প্রাণের শক্তি’ শত বেশি আলোর আকাশ
প্রেমের শান্তির কাছে মৃত্যু এসে মানে পরাজয়”

না-শব্দ কান্নার ঢেউ সুমুখের মনের কোণায়
বার-বার আছড়ে পড়ে। ভালোবাসা তাকাবে যখন-
কেউ যদি তার চোখে ঢেলে দেয় দুরারোগ্য বিষ
সব রং মরে যায়। ঝরে যায় সমুদয় ফুল
দূরে বলি, কাছে বলি খাঁড়ি, পথ সব একাকার
গুণকেশী চমকে ওঠে! তার চোখে হাসি ভ’রে থাকে
আজ এত অশ্রু কেন! ভালোবাসা সর্বাধিক হলে
প্রেমের গভীর টানে চোখে আসে আনন্দিত ধারা!
তা-ই হবে! তা না হলে অশ্রুরেখা দীর্ঘ হবে কেন
মনের গভীর থেকে থেকে থেকে ফোটে দীর্ঘশ্বাস

‘বেঁচে থাকা শেষ হবে! মৃত্যু এসে দুয়ারে দাঁড়াবে
সুমুখ, তোমাকে বলি, বুকে আসো প্রেমিক পুরুষ
কামনার বহ্নিশিখা একবার জ্বেলেছি যখন
তোমাকে জড়াব তাতে, আলো হব, প্রাণময় আলো
আগুনে আগুন ধারা, হব- এক আগুনের ছাই’

ঘুমের মাধুর্য আছে। কোথা থেকে স্বপ্ন ডেকে আনে
বেদনার মৌন-ম্লান ছবিগুলো মুছে যায় দ্রুত
রঙের অনেক রঙ, ছবি হাসে বিপুল রঙিন
সুমুখের চোখে যারা ঢেকে ছিল বেদনার ছায়া
ঘুমের প্রারম্ভ থেকে হয়ে আসছে ঝরো ঝরো আলো
গুণকেশী ডুবে গেছে ঘুমে ডোবা অন্য দুটি চোখে
ঝরা নেই, জরা নেই, জলে-স্থলে আলোর আকাশ

দেবরাজ তুষ্ট হয়ে অমরত্ব করেছেন দান
শুরু হলো সুমুখের অশ্রুহীন সুখের জীবন
আসন্ন মৃত্যুর ক্রোধ জল হয়ে দূরে চলে গেছে
নতুন যৌবন দিন, দেহ-মনে মিলনের তৃষ্ণা

চকিতে এসেছে ভেসে উচ্ছ্বাসিত চুলের সৌরভ
নতুন বসন্ত বুঝি হেসে আছে চারপাশ ঘিরে
মৌন-মুগ্ধ শিহরণে ভেঙে গেছে সুমুখের ঘুম
পায়ের পাতার গন্ধে মোহমুগ্ধ প্রিয় গুণকেশী
বসে আছে। হাতে তার সদ্য গাঁথা পারিজাতমালা
ওষ্ঠে-ঠোঁটে ফুটে আছে চুম্বনের শত শত দল
সুমুখের ছন্দকথা, ‘তুমি এলে এত অবেলায়!
‘অবেলায় হবে কেন, আমাদের দুটি একা মন
মিলে গেছে মনমোহনায় সন্ধ্যাতারা যদি
মেঘের আড়াল ভেঙে উঁকি দেয় সন্ধ্যারও আগে
ব্যথিত হয় কি আকাশের মন? সকালের আলো
আকাশ রাঙিয়ে দিয়ে হেসে ওঠে আলো ফোয়ারায়
পদ্ম কি আপত্তি করে? শিখে গেছি সেই মন্ত্রশ্লোক
আমাকে যে কাছে নেবে, তার কাছে এসে গেছি প্রিয়’

‘আমার জীবন থেকে মুছে গেছে সমুদয় রং
আনন্দ-উৎসব গেছে, চারপাশে চিরঅন্ধকার-
এত সব জানো যদি বরমাল্য কেন দিতে এলে’
‘গুণকেশী ভালোবাসে যাকে, তার বুকে ঢেলে দেবে
হৃদয়ের অনাঘ্রাত ঘ্রাণ যদি শরীরে শরীর
ডুবে যায়, ভেসে যাব, ডুবে যাব দেহজল স্রোতে’
‘এক হাতে মৃত্যু আর, অন্য হাতে প্রেম জেগে আছে,
কাকে ছেড়ে কাকে নেব! আমার যে পথ জানা নেই’
‘প্রেমের সরল চোখে চেয়ে দেখো চেয়ে থাকা চোখ
ওখানে সমুদ্র আছে, নীলজলে পড়েছে মেঘের
অধীর গভীর ছায়া! শুনতে পাচ্ছ আগুনের ঘ্রাণ
জলের শরীর ভাষা, হাবুডুবু পিপাসার ঢেউ
ফেনারাশি আছড়ে পড়ে, তটরেখা ধুয়ে-মুছে যায়
জন্ম নেই, মৃত্যু নেই, তুমি আমি ঘোর একাকার

এত প্রশ্ন, এত স্বপ্ন! সুমুখের চোখের ভাষায়
রোদ বৃষ্টি ছায়া কিছু নেই। যেন পাথরের ফুল
শব্দহীন ম্লানতায় কাঁড়ি-কাঁড়ি বেদনার পাশে
মেঘের বিপুল ছায়া, ঢেকে যাচ্ছে চাঁদমুখ তার
গান নেই নৃত্য নেই ছন্দ নেই বাতাসের মনে
ঝড়ের ঝাপটার মতো দীর্ঘশ্বাস কাঁপায় শরীর
সমস্ত আকাশ ভেঙে গরুড়ের ছায়া ছুটে আসে
মৃত্যু তবে এসে গেছে! আর মাত্র দণ্ড-পল বাকি
সুমুখের আর্তস্বর, ‘ভালোবাসা, আমাকে বাঁচাও’
‘তোমাকে বাঁচিয়ে রাখি, সে ক্ষমতা আমার তো নেই,
আমার যা আছে- আদি-অন্তহীন প্রেমের হৃদয়
ওখানে হ্রদের জলে প্রেমময় পদ্ম ফুটে থাকে
অভিমানে মেঘ ভাসে, অনুরাগে নামে বৃষ্টিধারা’

‘তোমার তুলনা তুমি, অভিধানে যত শব্দ আছে
সবাই মিলেছে এসে একবাক্যে- মহিমা তোমার’

‘জেনেছি নদীর কাছে, আগুনের দাহদীক্ষা থেকে-
প্রেমের আগুনধারা হয়ে যায় আলোক আকাশ’

‘এ বাণী যথার্থ যদি, সত্য হোক আমাদের প্রেমে’

আকাশ-বাতাস ভেঙে স্পষ্ট হচ্ছে গরুড়ের ছায়া

শিশির ছুঁয়েছে যাকে- সদ্য ফোটা গোলাপের মতো
অনাবৃতা গুণকেশী সুমুখের বুকের ওপর
আবেগে জড়িয়ে থাকে। ঠোঁটে, স্তনে, পাঁজরে, জঙ্ঘায়
কোথা থেকে এলো আজ প্রাকৃতিক সকল সুবাস

‘যত চাও তত নাও, আমি নেব যা ইচ্ছে আমার
পরিখা, পাথরখণ্ড, মোমগলা, একাশর হোক
দৃঢ়-দীর্ঘ আলিঙ্গনে গড়ে তুলো দুর্ভেদ্য দেওয়াল
মৃত্যুর মুহূর্তগুলো ভরে যাক রতিঋদ্ধ গানে
শরীরে শরীর ঢালো, মধুপাত্র পিপাসার ঠোঁটে
আমার শরীর খাঁজে রুখে দাও তোমার ঔরস
কর্ষণ-বর্ষণ হলে ভরে যাবে ফসলের মাঠ।’

গরুড়ের চোখ দুটো দাউ দাউ আগুনের বাটা
সেই চোখে ফুটল এ কী বিস্ময়ের থোকা-থোকা ফুল
এমন মধুর দৃশ্য চোখ থেকে সরানো কী যায়!
সুমুখ ও গুণকেশী- দু’জনের একাকার দেহ
মৃত্যুর আঘাত তবে কোন দেহে কার দেহে দেব!

প্রচণ্ড ঝড়ের পরে সৌম্য শান্ত প্রকৃতির সত্যে
গরুড় দাঁড়িয়ে আছে। ব্যর্থতার বিকট প্রতাপ

রতিশব্দ গান হলো। দ্বৈতকণ্ঠ। শুনি সেই গান-
প্রেমের শান্তির কাছে মৃত্যু এসে মানে পরাজয়…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *